সাগরে ইলিশের ছড়াছড়ি সাগরে ইলিশের ছড়াছড়ি - ajkerparibartan.com
সাগরে ইলিশের ছড়াছড়ি

1:00 am , August 15, 2021

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরনে টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পরে এখন ইলিশের ব্যাপক সমারোহ। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠে আসছে সাগর ও উপকুলের জেলেদের জালে। দুবলা পয়েন্টের পূর্ব প্রান্ত থেকে ভোলার মনপুরার ভাটিতে ঢালচর ও চর কুকরী-মুকরী পর্যন্ত সাগর উপকুল ও কিছুটা গভীর এলাকায় জাল বোঝাই করে ইলিশ উঠে আসছে ট্্রলারে। গত সপ্তাহ খানেক ধরে যে হারে ইলিশ ধড়া পড়ছে সাগর উপকুল ও সংলগ্ন গভীর এলাকায় তা নিকট অতীতে দেখা যায়নি বলে পাথরঘরাটা, গলাচিপা, আলীপুরÑমহীপুর, চর মোন্তাজ ও চরফ্যাসনের মৎস্য আড়তের মালিক-শ্রমিক ছাড়াও সাগরের জেলেরা জানিয়েছেন। দুদিন আগে ‘এফবি সাইফ-২’ নামের একটি ট্রলার পাথরঘাটার ভাটিতে বঙ্গোপসাগর থেকে এক টানে ৮৭ মন ইলিশ আহরন করে মোকোমে ফিরে ২৭ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে।
দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন মোকাম ও বাজারগুলোও গত সপ্তাহ খানেক ধরে সাগরের পাশাপাশি অভ্যন্তরীন নদ-নদীর ইলিশে ভরপুর। তবে মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারনে একদিকে জেলেরা এসব মাছের ন্যায্য দাম পায় না। তেমনি ক্রেতারাও অনেক বেশী দামে তা কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এরফলে ‘ইলিশকে বিজ্ঞান সম্মতভাবে প্রজনন থেকে শুরু করে বেড়ে উঠতে দিলে তার উৎপাদন যে ক্রমান্বয়ে বাড়বে খুব ধীরে হলেও জেলে সহ মৎস্যজীবীরা বুঝবেন’ বলে আশা করছেন মৎস্য বিজ্ঞানীগন। প্রজনন মৌসুমে আহরন নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি জাটকা আহরন বন্ধে প্রদক্ষেপ গ্রহনের ফলে গত দুই দশকে দেশে ইলিশের উৎপাদন ২ লাখ টন থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাড়ে ৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থ বছরে তা ৫.৬০ লাখ টনে উন্নীত হবার ব্যপারে আশাবাদী মৎস্য অধিদপ্তর। আর এ মাছের ৬৬% উৎপাদিত হচ্ছে বরিশাল বিভাগের অভ্যন্তরীন ও উপকুলীয় জলাশয়ে। গত অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের সম্ভাব্য উৎপাদন ছিল প্রায় ৭০ হাজার টন। দেশের মৎস্য সম্পদে সামুদ্রিক মাছের অবদান প্রায় ৮Ñ১০%। বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য সহ চিংড়ির প্রজনন প্রক্রিয়া নিরাপদ ও নিশ্চিত করার পাশাপাশি আহরন প্রবৃদ্ধি টেকসই করার লক্ষ্যে, বঙ্গাপসাগরে নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই সব ধরনের বানিজ্যিক মাছধরা নৌযানে মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ ছিল। মৎস্য বিজ্ঞানীগন এ সময়কে ইলিশ বাদে অন্য মাছের প্রজনন মৌসুম বিবেচনা করেই নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছেন। ইলিশের মূল প্রজনন মৌসুম আশি^নের বড় পূর্ণিমার আগেÑপরের ২২ দিন। এ সময় বঙ্গোপ সাগরের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন এলাকায় সব ধরনের মৎস্য আহরন সহ সারা দেশে ইলিশ আহরন, পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ থাকবে। অপরদিকে ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুদ ও জীব বৈচিত্রকে আরো সমৃদ্ধ করতে ২০১৯ থেকে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজার্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্লান’এর আওতায় ২০০৫ সালে দেশে প্রথম ‘প্রধান প্রজনন মৌসুম’এ ১০ দিন ইলিশের আহরণ বন্ধ রাখা হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিনে ও ২০১৬ থেকে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী। আর মৎস্য খাতে অবদান প্রায় ১২%। সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৬০% বাংলাদেশে উৎপাদন ও আহরিত হচ্ছে।
দেশের উপকুলীয় তটরেখা এবং সমুদ্রের ২শ নটিক্যল মাইল পর্যন্ত ‘একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা’র পরিমান ১ লাখ ১৮ হজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার। ছোট-বড় নানা আকার-প্রকারের ৪৭৫ প্রজাতির মৎস্য সম্পদ ছাড়াও ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া, ৫ প্রজাতির কচ্ছপ ও ১৩ প্রজাতির প্রবাল সহ বিভিন্ন জলজ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশের সমুদ্র এলাকা। এ সম্পদকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষে মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১৫ সাল থেকে ’১৮ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র বাণিজ্যিক ট্রলারের ক্ষেত্রে এবং ২০১৯ সাল থেকে সব মৎস্য নৌযানের ক্ষেত্রেই ৬৫ দিনের মৎস্য আহরন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দেশে উৎপাদিত ৪৩ লাখ ৮৪ হাজার টন মাছের মধ্যে সামুদ্রিক জলাশয়ে উৎপাদন ছিল প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার টন। যা পরবর্তি বছরগুলোতে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে । তবে উপকুলের জেলে ও মৎস্যজীবীরা ৬৫ দিনের এ আহরন নিষিদ্ধের বিষয়টিকে ভালভাবে না নিলেও মৎস্য সম্পদের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থেই তা করা হচ্ছে বলে মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। ধীরে হলেও জেলে ও মৎস্যজীবীগন এ বিষয়টি বুঝবেন বলে অশাবাদী মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। যা আগামী দিনে দেশকে মৎস সম্পদে আরো সমৃদ্ধ করবে বলেও মনে করছেন মহলটি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT