এ্যাড. বিপ্লবের পথেই হাটছেন অনুসারীরা এ্যাড. বিপ্লবের পথেই হাটছেন অনুসারীরা - ajkerparibartan.com
এ্যাড. বিপ্লবের পথেই হাটছেন অনুসারীরা

3:29 pm , July 31, 2021

 

জসিম জিয়া ॥ নিজের কর্মগুনের কথা নিজেই লিখে গিয়েছিলেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার সৃষ্টি তাকে এতটাই আত্মবিশ্বাসী করেছিলো তাইতো তিনি লিখেছিলেন ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো তবু আমারে দেবনা ভুলিতে’। মানুষ বেচে থাকে তার কর্মে বয়সে নয়। কথায় আছে যেমন কর্ম তেমন ফল। কর্মগুনে সেই ফল পৃথিবীতে যেমন লাভ করা যায় তেমনি পরপারে। মানুষ মারা গেলেও কর্মের মৃত্যু নেই। কর্মেগুনেই একজন মানুষ মৃত্যুর পরও অমর হয়ে থাকেন সবার মাঝে। বলছিলাম বরিশাল জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মরহুম পারভেজ আকন বিপ্লবের কথা। যিনি স্বপ্ন দেখছিলেন এই নগরীর খেটে খাওয়া ও অসহায়, অনাহার আর অর্ধাহারে থাকা মানুষগুলোকে নিয়ে। চাইছিলেন প্রতিটি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। আর এই ভালবাসা নিয়েই হয়তো স্বপ্নের চূড়ায় ওঠারও সিড়ি খুঁজছিলেন তিনি। তাইতো করোনাকালে আবির্ভূত হয়েছিলেন মানবতার ফেরীওয়ালা হিসেবে। দিন নেই রাত নেই। করোনা মহামারীতে জীবনের ঝুকি নিয়ে ছুটছিলেন ত্রানের বোঝা মাথায় করে। হাসি ফুটিয়ে ছিলেন কর্মহীন দরিদ্র মানুষগুলোর মুখে। শুধু কি তাই। দলীয় কর্মীদের বাসায়ও রাতের আধারে গোপনে চালের বস্তা পাঠিয়ে দিয়ে নিজেকে অনেকটা ধন্য মনে করতেন প্রয়াত এ নেতা। কখনো রিকশায়, কখনো আবার নিজে গাড়ী চালিয়ে গভীর রাতে ছুটতেন সহযোগীতার বোঝা নিয়ে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোন ব্যক্তির শরীরে ধরা পরে মহামারী করোনা ভাইরাস। মহামারী এই ভাইরাসের হাত থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে লকডাউন কার্যক্রম শুরু হয় সারাদেশে। আর এই লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পরেন খেটে খাওয়া কর্মহীন এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো। দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে সরকারের পাশাপাশি অনেকেই বাড়িয়ে দেন সহযোগীতার হাত। এগিয়ে আসেন মানবতার সেবায়। যার একজন ছিলেন বরিশাল জেলা যুবদলের সভাপতি পারভেজ আকন বিপ্লব। পরিকল্পনা করেন অভাবী মানুষগুলোর পাশে দাড়িয়ে দু:সময়ে কিভাবে সহযোগীতার হাত বাড়ানো যায়। যেমন পরিকল্পনা তেমন কাজ। গঠন করেন হিউম্যানিটি ভলান্টিয়ার নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংগঠনে যুক্ত করেন বেশ কয়েকজন সদস্যকে। শুরু হয় মানবতার ফেরি করা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অন্তত ৩ হাজার পরিবারকে করোনাকালীন সময়ে সহযোগীতা করে গেছেন প্রায়ত পারভেজ আকন বিপ্লব। শুধু টাকা পয়সা আর চালডালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা পারভেজ আকন বিপ্লবের মানবতার সেবা। দেশে যখন করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে, শুরু হয় অক্সিজেনের জন্য হাহাকার তখন নতুন পরিল্পনা মাথায় আসে প্রায়ত এই নেতার। শুরু করেন বিনামূল্যে মানুষের বাড়ী বাড়ী গিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের কার্যক্রম। গভীর রাতে সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে যেতেন অসুস্থ ব্যক্তির ঘরে। করোনা রোগীর সংস্পর্শে করোনা ছড়াবে এই ধরণের ভীতি তুচ্ছ ছিল তার সেবার কাছে। করোনার ভয়ে যখন ছেলে মাকে ফেলে রেখে যায় রাস্তার পাশে, মারা গেলে আসে না দাফন করতেও সেই সময় মানবতরার এই ফেরিওয়ালা ডর ভয়ের উর্ধ্বে থেকে করোনা রোগীদের পাশে গিয়ে নিজ হাতে সেবা করেছেন নির্ভয়ে। কিন্তু মানুষকে নিয়ে যার এত স্বপ্ন, এত ভালবাসা তিনিই যে অকালে হারিয়ে যাবেন সবাইকে কাঁদিয়ে সে কথা কেইবা জানতো। চলতি বছরের ৯ জুনুয়ারী আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন পারভেজর আকন বিপ্লব। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পারি জমালেও কর্মগুনে তিনি বেচে আছেন মানুষের মাঝে। য়তার রেখে যাওয়া মানবতার কার্যক্রম এখনো চলমান রেখেছেন হিউম্যানিটি গ্রুপের সদস্যরা। কোন ধরণের আর্থিক সহযোগীতা ছাড়া পারভেজ আকন বিপ্লবের অর্ত মানবতার সেবার কাজ এখনো অব্যাহত রেখেছেন. ভবিষ্যতেও রাখতে চান বিপ্লবপ্রেমীরা। আর্থিক সহযোগীতার কার্যক্রম আপাত বন্ধ থাকলেও অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাসায় পৌচে যাচ্ছে ‘বিপ্লবের রেখে যাওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডার। যখন তিনি থাকবেননা তখনো এই কার্যক্রম চলমান থাকবে নিজের অগোচরেই হয়তো এমনটা বুঝতে পেরেছিলেন মানবতার এই ফেরিওয়ালা। তাইতো ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর নিজের ফেসবুক ওয়ালে কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখিছিলেন ‘ আমি নেই তাতে কি হয়েছে। আমাদের সাহসী ভলান্টিয়াররা মানবসেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে’। সত্যিইতো বিপ্লব নেই কিন্তু মানবতার সেবাতো ঠিকই চলছে। তাইতো রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয় ‘ তখন কে বলেগো সেই প্রভাতে নেই আমি’। সত্যি প্রতিটা প্রভাতেইতো অছেন বিপ্লব, থাকবেন কর্মে বেঁচে এই নগরীর প্রতিটি মানুষের অন্তরে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT