বগুড়ার সেই কলেজ ছাত্রীর লাশ ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার বগুড়ার সেই কলেজ ছাত্রীর লাশ ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার - ajkerparibartan.com
বগুড়ার সেই কলেজ ছাত্রীর লাশ ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার

3:22 pm , June 2, 2021

 

বিশেষ ও গৌরনদী প্রতিবেদক ॥ গৌরনদীতে স্বামীর হাতে হত্যাকান্ডের শিকার বগুড়া সদর থানার তরুনী নাজনীন আক্তার (২৪) এর লাশ একটি ফসলের ক্ষেতের পানিতে ভাসমান বস্তাবন্দী অবস্থায় বুধবার সকালে উদ্ধার করেছে পুলিশ। লোকমুখে খবর পেয়ে পুলিশ হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আড়াইশ মিটার দুরে বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন একটি বিল থেকে লাশটি উদ্ধার করে। ওই তরুনীকে প্রতারনামূলক বিয়ে করার পর গত ২৪ মে গৌরনদীতে এনে হত্যার পর লাশ গুম করে তার স্বামী বগুড়া সেনানিবাসের পরিচ্ছন্নতা কর্মী সাকিব হোসেন (২৪)।
নিহত তরুনীর স্বজনরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বগুড়া সদর থানার সাবগ্রাম উত্তরপাড়া এলাকার মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ প্রামানিক এর কন্যা নাজনীন আক্তার (২৪) এর সাথে প্রায় দুই বছর আগে ফেসবুকে পরিচয় হয় বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়নের চর উত্তর ভূতেরদিয়া এলাকার নতুন জাহাপুর গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুল করিম হাওলাদারের ছেলে সাকিব হোসেনের। এক পর্যায়ে পরিবারের সদস্য ও সেনা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের না জানিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাকিব নাজনীনকে গোপনে বিয়ে করে। এ সময় সাকিব নাজনীন ও তার পরিবারকে জানায় তার বাবা বড় ব্যবসায়ী, তাদের চারতলা বাড়ি আছে। বিয়ের সময় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সাকিব তাদের বিয়ের কাবিননামায়ও ভূল নাম এবং ভূয়া ঠিকানা ব্যাবহার করে।
বিবাহিত জীবনের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাদের মধ্যে কলহের এক পর্যায়ে গত ২৪ মে সাকিব নাজনীনকে ফোন করে বাবার অসুস্থতার কথা জানিয়ে বাড়ি যাবার কথা বলে। নাজনীনের ভাই আহাদ বাসষ্ট্যান্ডে গিয়ে নাজনীনকে সাকিবের হাতে তুলে দেয়।
ওই রাত থেকেই তারা নাজনীন ও সাকিবের মোবাইল বন্ধ ছিল। সাকিবের মায়ের মোবাইল ফোনটি বাজলেও কেউ রিসিভ করেনি। ঘটনার দুইদিন পর সাকিব ফোন করে নাজনীনের বাবাকে বলে আপনার মেয়ে পালিয়ে গেছে। নিশ্চয়ই আপনার কাছে গেছে আমার স্ত্রীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন।
পরে এ ঘটনায় নাজনীনের পিতা আব্দুল লতিফ প্রামানিক গত ২৬ মে বগুড়া সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বগুড়া সেনানিবাসের উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদেরকেও ঘটনাটি অবহিত করেন। সেনা কতৃপক্ষ সাকিবের ছুটি বাতিল করে ২৮শে মে’র মধ্যে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়। নির্দেশ পেয়ে সাকিব ২৮শে মে তার কর্মস্থলে যোগদিলে সেনাকর্মকতাদের জিজ্ঞাসাবাদে নাজনীন খুনের ঘটনা বেড়িয়ে আসে। সেনাকর্তৃপক্ষ সাকিবকে সাময়িক বরখাস্ত করে বগুড়া সদর থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
হত্যার দ্বায় স্বীকার করে সাকিব হোসেন জানায়, নাজনীনকে নিয়ে ২৪শে মে সকালে বগুড়া থেকে বাসযোগে রওনা হয়ে সে ওইদিন রাত ১০টার দিকে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর বন্দর সংলগ্ন হরহর গ্রামের মোঃ সালাউদ্দিন বেপারীর ভাড়া দেয়া টিনের ঘরে তার ভ্যানরিক্সা চালক বাবার ভাড়া বাসায় ওঠে। সাকিবের এ দরিদ্র অবস্থা দেখে এ সময় নাজনীন ক্ষিপ্ত হয়। তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে নাজনীন সাকিবকে তখন গালীগালাজ করে।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এক পর্যায়ে সাকিব ওইদিন রাত ১১টার দিকে লাইলন দড়ি দিয়ে নাজনীনের পেছন থেকে গলায় প্যাচ মেরে বিছানায় ওপর ফেলে বালিশ চাঁপা দিয়ে নাজনীনকে হত্যা করে। এরপর রাত দেড়টার দিকে সে নাজনীনের লাশ ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যে ফেলে দেয়। সাকিবের দেয়া বর্ননা মতে সেপটিক ট্যাংকির ভেতর থেকে নাজনীনের লাশ উদ্ধারের জন্য বগুড়া সদর থানার ওসি (তদন্ত) ফোর্সসহ হত্যাকারী সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার রাতে গৌরনদী পৌছে থানা পুলিশের সহয়তায় মঙ্গলবার ভোরে লাশ উদ্ধারে অভিযানে নামেন। সাকিবের দেয়া বর্ননা মতে পুলিশ ট্যাংকির পানি সেচ করেও সেখানে কোন লাশ না পেলেও নাজনীনের হাতের চামড়ার কিছু অংশ, হাতের আঙ্গুলের দুটি নখ ও একটি ওড়না উদ্ধার করে। এরপর পুলিশ হন্যে হয়ে দিনভর হত্যাকান্ডস্থলের আশপাশের এলাকায় খুজলেও নাজনীনের লাশের সন্ধান করতে পারেনি।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করার সময় বাটাজোর গ্রামের আবুল কালাম আকনের ছেলে মোঃ তাজেল আকন ওরফে দুঃখু মিয়া (২৮) পার্শ্ববর্তি জমির পানিতে ভাসমান একটি বস্তা থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে সে এলাকার মানুষকে খবর দেয়। তারা এসে পুলিশকে খবর দিলে গৌরনদী থানার ওসি মোঃ আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশটি উদ্ধার করে। লাশটি সনাক্তে নাজনিনের স্বজনদেরকে খবর দেয়া হয়েছে। ঘাতক সাকিবের বাবা-মা সহ নিকটজনরাও পলাতক।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT