দক্ষিনাঞ্চলে ৭২ ঘন্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আরো প্রায় আড়াই হাজার জন ॥ মৃত ১ দক্ষিনাঞ্চলে ৭২ ঘন্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আরো প্রায় আড়াই হাজার জন ॥ মৃত ১ - ajkerparibartan.com
দক্ষিনাঞ্চলে ৭২ ঘন্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আরো প্রায় আড়াই হাজার জন ॥ মৃত ১

3:50 pm , May 2, 2021

 

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ করোনা মহামারির ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে ডায়রিয়া পরিস্থিতি এখনো জনমনে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা সৃষ্টি করে চলেছে। দক্ষিণাঞ্চলের জনস্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্য বিভাগও চরম দুঃশ্চিন্তায়। টানা ১৪ মাস ধরে করোনার সাথে লড়াই করার মধ্যেই ডায়রিয়ার সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বিস্তৃতি নিয়ে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের চিকিৎসকদের দূর্ভোগ যথেষ্ট বৃদ্ধি করছে। রবিবার দুপুরের পূর্ববর্তী ৭২ ঘন্টায় দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলায় আরো প্রায় দু হাজার ৫৫১ জন ডায়রিয়া রোগী বিভিন্ন জেলা-উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এ সময়ে ভোলাতে মারা গেছেন একজন। এই প্রথম দ্বীপ জেলাটিতে কোন ডায়রিয়া রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোলাতে আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১১ হাজার ৭১৯ জনে। যা দক্ষিনাঞ্চলের সর্বোচ্চ। আর দক্ষিনাঞ্চলে গত ৩ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৪৬ হাজার ১৩ জনে। মৃত্যু সংখ্যাও ১৩। যার মধ্যে বরিশালেই ৫ জন,পটুয়াখালীতে ৪, বরগুনায় ৩ এবং ভোলাতে একজন রয়েছে।
এখনো দক্ষিনঞ্চলের প্রায় সব সরকারী হাসপাতালেই উপচে পড়ছে ডায়রিয়া রোগী। মঞ্জুরীকৃত পদের মাত্র ৪৫ ভাগ চিকিৎসক ও ৫৫ ভাগের মত চিকিৎসা কর্মী নিয়ে দক্ষিনাঞ্চলে স্বাস্থ্য বিভাগ কোন মতে সেবা কার্যক্রমের জানান দিলেও করোনা আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মী এখনো সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। তারমধ্যে ডায়রিয়ার ভয়াবহ বিস্তার গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জনস্বাস্থ্যকে বড় ধরনের ঝুকির মধ্যে ফেলেছে। ৪ শয্যার বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে রোববারেও প্রায় ৩০ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। এর বাইরে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগেও বিপুল সংখ্যক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসাধীন।
স্বাস্থ্য বিভাগের মতে গত ৩ মাসে দক্ষিণাঞ্চলে ৪৬ হাজার ১৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সরকারী হিসেবে এদেরকেই আক্রান্ত বলে ধরে নেয়া হয়। এর বাইরে যেসব আক্রান্ত নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা গ্রহন করছেন, তাদের কোন পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই। তবে সে সংখ্যাটা সরকারী হিসেবের কয়েকগুন বলে জানা গেছে। আর গত এক মাসেই দক্ষিণাঞ্চলে ১৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্তের মৃত্যু ঘটেছে। এ সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার ৭৯৩ জন। গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৫৯৫। এ সময়ে মারা গেছেন দুজন।
দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলার ডায়রিয়া পরিস্থিতিই এখনো নাজুক। তারমধ্যে ভোলা ও পটুয়াখালীর অবস্থা বেশী ঝুকিপূর্ণ। গত ৭২ ঘন্টায় দ্বীপজেলা ভোলাতে নতুন করে ৬৯২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবারে মারা গেছেন ১ জন। জেলাটিতে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৭১৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত বলে সরকারীভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। পটুয়াখালীতেও এ সময়ে নতুন করে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৪২০ জন। জেলাটিতে ইতোমধ্যে ৪ জন ডায়রিয়া রোগীর মৃত্যু সহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৮৭৫। পিরোজপুরেও গত ৭২ ঘন্টায় আরো ৪৭১ জন ডায়রিয়া আক্রান্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারী হিসেবে জেলাটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৭৩৫ হলেও কোন মৃত্যু সংবাদ নেই।
বরগুনাতেও গত ৭২ ঘন্টায় আরো ৪শ জন সহ মোট ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ২৭৮ জন। জেলাটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ জন।
বরগুনা ও পটুয়াখালীর বেশীরভাগ খালের পানিতে ডায়রিয়ার জীবানুর সন্ধান পেয়েছে ঢাকার আইইডিসিআর-এর কারিগরি পর্যবেক্ষক দল। পাশাপাশি সাগরের লবনাক্ত পানিতে দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় সব নদ-নদী ও খালÑবিলের পানিও দুষিত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি লাগাতার অনাবৃষ্টি আর নজিরবিহীন দাবদাহে ডায়রিয়া আক্রান্তরা দ্রুত পানি শূণ্যতার কবলে পড়ছে বলে চিকিৎসকগন আক্রান্ত হবার সাথে সাথে খাবার স্যালাইন সহ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহনের তাগিদ দিয়েছেন।
ঝালকাঠীতে গত ৭২ ঘন্টায় আরো ২৭১ জন সহ এ পর্যন্ত ৫ হাজার ১৮৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
মহানগরী সহ বরিশাল জেলায় গত তিন দিনে প্রায় ২শ নারী-পুুরুষ ও শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। জেলাটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সরকারী হিসেবে ৬ হাজার ২২২ জন বলে জানা গেছে। জেলাটিতে এপর্যন্ত ৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্তের মৃত্যু ঘটেছে। যাদের সকলেই বাকেরগঞ্জ উপজেলার বলে জানা গেছে।
এদিকে ডায়রিয়া আক্রান্তদের সরকারী হাসপাতাল সমুহে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করনে দক্ষিণাঞ্চলে আইভি স্যালাইনের মজুদ এখনো যথেষ্ট সন্তোষজনক বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলাতে ১ হাজার সিসি ও ৫শ সিসি’র প্রায় ৯২ হাজার ব্যাগ আইভি স্যলাইনের মজুদ রয়েছে বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে। আরো স্যালাইন চলতি সপ্তাহে দক্ষিনাঞ্চলে পৌছবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT