দক্ষিণাঞ্চলে ৪৮ ঘন্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত আরো আড়াই হাজার জন দক্ষিণাঞ্চলে ৪৮ ঘন্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত আরো আড়াই হাজার জন - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চলে ৪৮ ঘন্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত আরো আড়াই হাজার জন

3:59 pm , April 25, 2021

 

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হচ্ছেনা। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে আরো নতুন নাম। শণিবার দুপুরের পূর্ববর্তি ৪৮ ঘন্টায় এ অঞ্চলের ৬ জেলায় সরকারী হিসেবে আরো আড়াই হাজার আক্রান্তের সাথে পটুয়াখালীর বাউফলে ৫ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে গত ৩ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজারের কাছে পৌছেছে। সরকারী হিসেবে এ সময়ে মারা গেছেন ১১ জন। তবে বেসরকারী মতে আক্রান্তের সংখ্যা আরো অন্তত তিনগুন। কারণ এখনো দক্ষিনাঞ্চলের অন্তত ৭০ ভাগ ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বাসায় চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। শুধুমাত্র সরকারী হাসপাতালসমুহে আগত রোগীদের তালিকাই স্বাস্থ্য বিভাগ সংরক্ষন করে। দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকার মধ্যে বরগুনা জেলার বিভিন্নস্থানে ঢাকার আইইডিসিআর-এর সমীক্ষা দল জরিপ চালিয়ে সেখানে খালের পানিতে মাত্রারিক্ত পরিমানে কলিফর্ম-এর সন্ধান পেয়েছেন বলে জানা গেছে। জরিপের মতে, ঐ এলাকার ৯৪% মানুষ নলকুপের পানি পান করলেও ৭১% বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজে সরাসরি খালের পানি ব্যবহার করে থাকে। সমীক্ষায় মাত্র ২০% বাড়ীতে বা বাড়ীর কাছে ব্যবহারযোগ্য নলকুপ বিদ্যমান আছে বলে সমীক্ষায় উঠেছে।
আইইডিসিআর থেকে ৪টি সুপারিশমালায় খাবার পানি সহ দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানির জন্য খালের পরিবর্তে নিরাপদ পানি ব্যবহারের তাগিদ দিয়ে এর উৎস হিসেবে ডায়রিয়া আক্রান্ত ঝুকিপূর্ণ এলাকাসমুহে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গভীর নলকুপ স্থাপন অত্যন্ত জরুরী বলেও মত প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিশেষ প্রয়োজনে খালÑনদী বা পুকুরের পানি ব্যবহার জরুরী হলেও তা ফুিটয়ে বা পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট ব্যবহার নিশ্চিত করারও তাগিদ দেয়া হয়েছে। আক্রান্ত এলাকাসমুহে নিরাপদ পানি ব্যবহার সহ ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে আইইডিসিআর’এর প্রতিবেদনে।
তবে বরগুনার বাইরে নগরী সহ অন্য জেলাগুলোতে ডায়রিয়ার ব্যাপক বিস্তার সম্পর্কে এখনো কোন প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি সরকারী ঐ জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বরিশাল ও বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের ‘রেক্টাম সোয়াব’এ কলেরার জীবানু পাওয়া গেছে বলে একটি অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে।
দক্ষিণাঞ্চলে গত ৪৮ ঘন্টায় আক্রান্ত ২ হাজার ৪৮৫ জনের মধ্যে ভোলাতেই সংখ্যা ৬৬৬ জন। এ নিয়ে জেলাটিতে মোট ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৫৭৬ জনে পৌছছে। দ্বীপজেলা ভোলা জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও অপর ৬টি উপজেলা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখনো ডায়রিয়া রোগীতে ঠাশা। বেশীরভাগ রোগীরই ঠাই মিলছে হাসপাতালের মেঝে ও বরান্দায়। এতে অনেক রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
গত ৪৮ ঘন্টায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমন ছিল বরগুনাতে ৪৩৯ জন। এ জেলটিতে ইতোমধ্যে ৬ হাজার ২১২ জন ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালসমুহে চিকিৎসা নিয়েছেন। মারা গেছেন দুজন। পটুয়াখালীতেও গত ৪৮ ঘন্টায় ৩৯৩ জন ডায়রিয়া রোগী বিভিন্ন সরকারী হাপাতালে চিকিৎসা গ্রহনের পাশাপাশি বাউফলের বগা এলাকায় ‘তালহা’ নামের ৫ মাস বয়সের একটি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। জেলাটিতে এ পর্যন্ত মোট প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডায়রিয়া রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন। ঝালকাঠী জেলার ৪টি উপজেলাতে গত ৪৮ ঘন্টায় আরো ৩৪১ জন ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। জেলাটিতে সরকারী হিসেবে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৪ হাজার ২৫৩ জন। নগরী সহ জেলায় গত ৪৮ ঘন্টায় সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩২০। জেলাটিতে ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৩১২ জন আক্রান্তর মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের সবই বাকেরগঞ্জ উপজেলার। নগরী ও সন্নিহিত এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ এবার ডায়রিয়া আক্রান্ত। এখনো নগরীর জেনারেল হাসপাতালটির খোলা মাঠের তাবুর নিচে ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-পরুষ ও শিশুর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ৪ শয্যার এ হাসপাতালের ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এখনো ৪০-এর উপরে। পিরোজপুরেও গত ৪৮ ঘন্টায় আরো ২৮৬ জন ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালসমুহে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ নিয়ে জেলাটিতে মোট নিবন্ধিত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দাড়াল ৪ হাজার ৭১৯ জনে।
এদিকে বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের সবগুলো জেলায় আইভি স্যলাইনের বড় মজুদ গড়ে তুলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। শণিবার দুপর পর্যন্ত এ অঞ্চলের ৬টি জেলায় ১ হাজার সিসি ও ৫শ সিসি’র প্রায় ৮০ হাজার আইভি স্যলাইনের মজুদ ছিল। রোবাবার দুপুরেও পরিমানটা ছিল প্রায় ৭০ হাজার। আরো স্যালাইন পাইপ লাইনে রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার সাহা সকলকে নিরাপদ পানি পান করা সহ যথাযথ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার তাগিদে দিয়ে যেকোন সমস্যায় স্থানীয় হাসপাতাল সহ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহনের অনুরোধ করেছেন। ডায়রিয়া চিকিৎসায় বিভিন্ন জেলায় ৪০৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানিয়ে আইভি স্যালাইনের মজুদ সাম্প্রতিককালের সর্বাধীক বলেও জানান তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT