3:30 pm , February 18, 2021
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের তেমন কোন অবদান নেই। যখন ভারত বুঝতে পেরেছে পাকিস্থানের পরাজয় নিশ্চিত। তখন ভারত শেষ সময়ে এসে সহায়তা করে কৃতিত্ব নিয়েছে। তাদেরকে ছাড়াও আমরা দেশকে স্বাধীন করতে পারতাম। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীতে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ২৫ মার্চ রাতে পাক বাহিনী নিরস্ত্র মানুষের উপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর সব কিছু স্তব্দ হয়ে পড়ে। তখন মেজর জিয়া দিশেহারা বাঙ্গালীদের মাঝে বেঁচে থাকার ও লড়াই করার প্রেরনা দিয়েছেন। তিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শুধু স্বাধীনতার ঘোষনা করেই থেমে থাকেননি। ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষনা করে যুদ্ধ করেছেন। মেজর জিয়া ভারতে গিয়ে যুদ্ধ করেননি। তিনি রনাঙ্গনে পাক বাহিনীর সাথে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন।
দেশব্যাপি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবীতে বিগত সিটি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের নেতৃত্বে মহানগর বিএনপির আয়োজনে বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ সিলেটের জকিগঞ্জে পাক বাহিনীর পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সাথে সরাসরি যুদ্ধে ঘটনা তুলে ধরে বলেন, মেজর জিয়ার নেতৃত্বে ওই যুদ্ধে তিনিও অংশ নিয়েছেন। পাঞ্জাব রেজিমেন্টের উপর গোলবর্ষনের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান। তিনি ৬ টি গোলা নিক্ষেপ করে পাঞ্জাব রেজিমেন্টকে ধরাশায়ী করেন। অদুরে একটি বাংকারে তিনি (মেজর হাফিজ) ও মেজর জিয়া অবস্থান করে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এ সময় পাক বাহিনীর একটি গোলা এসে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান শহীদ হন। কিন্তু বেঁচে গেছেন তিনি ও মেজর জিয়া। এভাবে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। দেশ স্বাধীনের পর ভারত থেকে এসে নেতারা হিন্দুদের বাড়ি জমি দখল করেছে লুটপাট করেছে। আর যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, শহীদ হয়েছে তাদের খবরও কেউ রাখেনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগরের সভাপতি এ্যাড মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ তরুনদের উদ্দেশ্যে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একেকজন তরুনের মধ্যে যে তেজদীপ্ততা ছিল। এখন আর কারো মধ্যে নেই। সমাবেশে তার বক্তৃতার সময় শ্লোগান দেয়া তরুনদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কি তা বুঝতে ও না শুনে শ্লোগান দিলেই হবে না। শ্লোগানের অর্থ বুঝতে হবে। স্লোগান দেয়ার জন্য এখানে আসবেন না। স্লোগান দেয়ার জন্য রাজপথ। স্লোগান দিয়ে মিটিং নষ্ট করবেন না। আর যদি প্রতিরোধ করতে হয় তাহলে রাজপথে গিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনীকে প্রতিরোধ করুন। আগুন জ্বালাতে হলে শেখ হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালান। আমাদের মঞ্চে আগুন জ্বালাবেন না। মঞ্চে আগুন জ্বালানোর কোনো প্রয়োজন নাই। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তরুনদের ভুমিকা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ নেতা। তিনি এ সময় বলেন, নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে ভোট ডাকাতির জন্য মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেননি।
দেশ স্বাধীন হলেও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না মানুষ। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যেভাবে মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিলো। সেভাবে রুখে দাঁড়ানোর জন্য উপস্থিত বিএনপি কর্মীদের রাজপথে নেমে আসার আহবান জানান। তিনি বলেন, গণ আন্দোলনের মাধ্যমেই বিএনপি ক্ষমতায় আসবে।
মেজর হাফিজ উদ্দিন আরো বলেন, শেখ হাসিনার শাসন সামরিক বাহিনীর চেয়েও খারাপ। তাই এই সরকার দেওলিয়ার কাছে এসে দাড়িয়েছে। তিনি মিয়ানমারের কথা উল্লেখ করে বলেন, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। অথচ বিএনপি’র সমাবেশে পথে পথে বাঁধা দিচ্ছে যা সামরিক শাসনের চেয়েও খারাপ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বরিশাল থেকেই আমরা এই আন্দোলন শুরু করলাম।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, জনগণের দাবিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো। দাবি আদায় করেই ছাড়বো।
সভাপতির বক্তব্যে মুজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, পুলিশ আমাদের সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। রাত থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে।
সমাবেশে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. শাহাদাত হোসেন, খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, ঢাকা উত্তর সিটির তাবিথ আউয়াল, দক্ষিনের ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. বিলকিস জাহান শিরিন, দক্ষিন জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন, উত্তরের সভাপতি এম মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ, আকন কুদ্দুসুর রহমান, আবুল হোসেন খান, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা নুরুল ইসলাম নয়, মহানগরের সভাপতি এ্যাড. আক্তারুজ্জামান শামীম, যুবদলের জেলার সাধারন সম্পাদক এইচএম তসলিমউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান পিন্টুসহ ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক। সমাবেশের সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া।