দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণি সম্পদ খাতের কাঙ্খিত উন্নয়ন নেই দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণি সম্পদ খাতের কাঙ্খিত উন্নয়ন নেই - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণি সম্পদ খাতের কাঙ্খিত উন্নয়ন নেই

2:44 pm , February 10, 2021

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ সিডর আইলা, মহাশেন ও আম্পান-এর মত উপর্যপুরি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে খাদ্যের অগ্নিমূল্য আর অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা সহ নানা প্রতিবন্ধকতা ও সরকারী সুষ্ঠু সেবা কার্যক্রমের অভাবে দক্ষিনাঞ্চলে প্রাণিসম্পদ খাতের কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে না। প্রাণিম্পদ অধিদপ্তরের জনবল সংকট পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলেছে। তবে সীমাহীন প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চল দুধ, ডিম ও গোসত উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকায় পরিনত হয়েছে। সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও প্রাণিস¤পদ খাতে সরকারী চিকিৎসা ব্যয় এখনো বছরে মাথাপিছু ৫০ পয়সার বেশী নয়। অথচ সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলের ডিম, দুধ ও গোসত এখন দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মেটাচ্ছে। সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের আর্থÑসামাজিক খাতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদানও ব্যাপক।
তবে একের পর এক প্রাকৃতিক দূর্যোগ বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণীসম্পদ খাতের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করছে। এমনকি এ অঞ্চলে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় জনবল মঞ্জুরীর অভাব সহ সৃষ্ট পদেরও প্রায় অর্ধেকই বছর পর বছর শূণ্য থাকায় এ সেক্টরের কাঙ্খিত উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। উপরন্তু গত কয়েক বছরে পোল্ট্রি ফিড সহ বিভিন্ন পশুখাদ্যের দাম কয়েকগুন বৃদ্ধির ফলে প্রাণীসম্পদ খাতে নতুন বিনিয়াগ যেমনি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তেমনি বিদ্যমান খামারগুলোর অস্তিত্বও ইতোমধ্যে অনেকটাই ঝুকির মুখে। এমনকি পোল্ট্রি ও গবাদী পশুর খামারে সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগও খুব উল্লেখযোগ্য নয়। এ খাতে বেসরকারী ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রায় শূণ্যের কোঠায়। রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকসমুহ অতি সীমিত কিছু বিনিয়োগ করলেও তা এ খাতের উন্নয়নে তেমন কোন ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে না।
প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃতির অপার মহিমায় ভরা দক্ষিনাঞ্চলে প্রাণীসম্পদ খাতের সম্ভাবনা প্রচুর। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় অফিসের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলার প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় গত অর্থ বছরে ১০ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়েছে। অথচ এ অঞ্চলে দুধের চাহিদা ৭.৫৯ লাখ টন। ফলে ৩.০৮ লাখ টন দুধ উদ্বৃত্ত ছিল । এমনকি বছরে ৩.৬৪ লাখ টন চাহিদার বিপরিতে গত অর্থবছরে এ অঞ্চলে গোসতের উৎপাদন ছিল ৮.০৬ লাখ টন। উদ্বৃত্তের পরিমান ছিল ৪.৪২ লাখ টন। আর বছরে ৮৬ কোটি ৫৮ লাখ ডিমের চাহিদার বিপরিতে উৎপাদন ছিল ২০৯ কোটি ২৭ লাখ। ফলে গত অর্থ বছরে দক্ষিনাঞ্চলে প্রায় ১২২ কোটি ৭০ লাখ ডিম উদ্বৃত্ত ছিল। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার গ্রামে এখন বিভিন্ন পোল্ট্রি খামার ছাড়াও গৃহস্থ্য পর্যায়ে ২ কোটি ৭ লাখ ১৬ হাজার মুরগী, ৮৩ লক্ষাধীক হাঁস, প্রায় ৩৩ লাখ গরু, আড়াই লাখ মহিষ, প্রায় ১১ লাখ ৬৭ হাজার ছাগল এবং লক্ষাধীক ভেড়া ছাড়াও গৃহস্থ পর্যায়ে প্রায় ১৫ লাখ কবুতর প্রতিপালন হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণাঞ্চলে পশু কোরবানির চাহিদাও স্থাণীয়ভাবেই মেটান হচ্ছে।
তবে দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি জেলার প্রাণিসম্পদ হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থায় সংকট এখনো মারাত্মক। আজ পর্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ খাতের কোন চিকিৎসা সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। এমনকি বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের পদ সহ ২২২টি পদ শূণ্য পড়ে আছে। এ অঞ্চলের ৪২টি উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ২৫টি পদই শূণ্য। ৪২জন ভেটেরিনারি সার্জনের মধ্যে রয়েছেন ২৩ জন। উপ-সহকারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মর্তার ১১৮টি পদের ২৫টি শূণ্য। এমনকি উপজেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারন কর্মকর্তার ৪২টি পদের বিপরিতে আছেন মাত্র ৪ জন। ৩৮টি পদই শূণ্য। উপজেলা পর্যায়ে উপ-সহকারী কর্মকর্তা-কৃত্রিম প্রজনন’এর ৪৪টি পদের ১৪টিই শূণ্য। উপ-সহকারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাÑপ্রাণিস্বাস্থ্য’র ৪২টি পদের ২০টি পদ শূণ্য।
বরিশালে একমাত্র হাঁস প্রজনন খামারটি নির্মানের পরে বন্ধ হয়ে গেলও সম্প্রতি আবার পূর্ণবার্শন করা হয়েছে। ঝালকাঠীতে এ বিভাগের একমাত্র ডাক রেয়ারিং ইউনিটটি সম্প্রতি রাজস্বখাতে স্থানন্তর হয়েছে। ইতোমধ্যে দুদফায় পূণর্বাশন হয়েছে ইউনিটটি। প্রায় ৬কোটি টাকা ব্যায়ে এসব হাঁস প্রজনন খামার ও রেয়ারিং ইউনিট স্থাাপন করা হয়েছিল। সম্প্রতি আরো বিপুল অর্থ ব্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠানের মেরামত সম্পন্ন হলেও তা এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। বরিশালে একটি ছাগল উন্নয়ন খামার নির্মানের পরে বন্ধ হয়ে গেলেও সম্প্রতি তা অবার চালু হয়েছে। এমনকি বরিশাল ও পটুয়াখালীতে ২টি সরকারী হাঁস-মুরগীর খামার থাকলেও তার অস্তিত্বও হুমকির মুখে। পটুয়াখালীর খামারটিতে শুধু হাঁস এবং বরিশালে মুরগি পালন হচ্ছে।
গোটা দক্ষিনাঞ্চলেই প্রাণিসম্পদ অধিদফ্তরের অবকাঠামো সমুহের সুষ্ঠু মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন পর্যন্ত নেই। এমনকি কিছুদিন পর পর নতুন ভবন নির্মান হলেও বিদ্যমান অবকঠামো সমুহ মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন সহ তা সংরক্ষনে উর্ধতন মহলের কেন নজর নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবছরই বরিশাল বিভাগে উপজেলা পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ ভবন নির্মিত হলেও পূর্ব নির্মিত ভবনসমুহের জীর্ণদশা দেখার কেউ নেই।
দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাত্র ৫২২ জনবলের মধ্যে ২২২ পদে নিয়োগ নেই। আর বছরে মাত্র ৫০ পয়সার বরাদ্ব নিয়ে উপজেলা পর্যায়ের কর্মীরা এখাতে সাধারন মানুষের প্রাণীসম্পদ-এর চিকিৎসা সহায়তার মহড়া দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এরপরেও গত অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৮ লাখ ১৫ হাজার গবাদি পশু ও দু কোটি ২লাখ হাঁস-মুরগীর রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রদান করা হয়েছে। যদিও এ খাতে লক্ষমাত্রা অর্জিত হচ্ছেনা। তবুও উপজেলা সদরের প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে সিমিত সেবা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এখনো সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও প্রাণী সম্পদ বিভাগের কার্যক্রম উপজেলা সদরেই সীমাবদ্ধ। তবে তাও জনবল সংকটে ক্রমশ মুখ থুবড়ে পড়ছে।
তবে অবশেষে বরিশাল বিভাগীয় সদরে একটি ‘ইনস্টিটিউট অব এ্যনিমেল সাইন্স এন্ড টেনোলজি’ স্থপনের চুড়ন্ত প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। এটিই দিক্ষণাঞ্চরে প্রাণিসম্পদ খাতের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আগামী অর্থ বছরেই এ লক্ষে অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরু হচ্ছে বলে জানা গেছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT