2:53 pm , January 20, 2021
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ “হয়রানী মূলক মামলা” প্রচলিত এ বাক্যটি কম বেশী সবারই জানা। হয়রানী বা অপদস্ত করার উদ্দেশ্যে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে কারো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে মানুষের মুখে মুখে সে মামলাটি হয়রানীমূলক মামলা নামেই উচ্চারিত হয়ে আসছে। কিন্তু বরিশাল আদালতে সম্প্রতি দায়ের করা একটি মামলা ঘিরে “হয়রানী মূলক মামলা” শব্দটি যেন নতুন রুপে ভিন্ন সুরে উচ্চারিত হচ্ছে আদালত পাড়ায়। হাস্যরস করে অনেকেই এ মামলাটিকে “হয়রানী মূলক মামলা” না বলে নতুন নাম দিয়ে “মামলা হয়রানী” মূলক বলে আখ্যায়িত করেছেন। যে মামলা নিয়ে আদালত পাড়াসহ নানা মহলে মিশ্র প্রতিক্রয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি তার পক্ষের স্বাক্ষীরাও লুৎফর কে অপমান অপদস্ত করছে। অনেকে আবার ক্ষোভের সাথে খুজছে দুরন্ধর এই মামলাবাজকে।
যৌক্তিকতা ও কল্প কাহিনী দিয়ে দায়ের করা ওই মামলার বাদী নগরীর নবগ্রাম রোডস্থ চৌমাথা এলাকার বান্দিন্দা। ৯০ দশকের চিহ্নিত সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ লুৎফুর রহমান। যে মামলায় বিবাদী করা হয়েছে নগরীর বিশিষ্ট ঠিকাদার ও কীর্তনখোলা নেভিগেশন কোম্পানির প্রোপ্রাইটর (কীর্তনখোলা লঞ্চ মালিক) মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস কে। অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর ভাবে মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগ আনা হয়েছে। যে কারনে এই প্রতারনার অভিযোগ, মামলার এজাহার বর্ননায় তা আদ্যপান্ত হাস্যকর ও অনেকটা খানিক বিনোদনের খোড়াকও বটে।
বাদী মামলার এজাহারে বিবাদীর কাছে ধার বাবদ ৮ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। যে টাকা ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে অর্থ্যাৎ ২৩ বছর আগে ধার বাবদ দিয়েছিলেন। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে এক এলাকার বাসিন্দা হয়েও প্রায় এই দুই যুগেও বিবাদীর কাছে পাওনা টাকা এক বারের জন্যও চাননি বা তাগাদা দেননি বাদী লুৎফর। শুধু মাত্র গত বছরের শেষ দিকে বিবাদী মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস এর কাছে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে লুৎফরের পক্ষে দুটি আলাদা উকিল নোটিশ প্রেরন করেন এ্যাড. আতিকুর রহমান জুয়েল।
এছাড়া আরো অবাক করার তথ্য হলো মামলায় স্বাক্ষী হিসাবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা এ বিষয়ে কখনোই অবগত ছিলেন না এবং মামলায় স্বাক্ষী হিসাবে নাম দেয়ার পূর্বে কারো কাছ থেকে সম্মতিও নেয়নি লুৎফর।
অন্য দিকে মামলার এজাহারে লুৎফর উল্লেখ করেছেন গভীর নলকুপ বসানোর টেন্ডার পাওয়ার কথা বলে কাজ শুরু করতে তার কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা ধার নেয় ফেরদৌস। যে লেনদেন ১৯৯৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ কুতুবউদ্দিন আহমেদ এর বাসায় বসে সম্পন্ন হয়। যে কারনে মামলায় স্বাক্ষী হিসাবে রাখা হয় শেখ কুতুবউদ্দিন আহমেদ কে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন লুৎফর একজন নেশা আসক্ত ও বদ চরিত্রের লোক। সে আমার বাসায় বসে ফেরদৌসকে টাকা ধার দেয়া তো দূরের কথা, কখনো আমার বাসায়ও আসেনি লুৎফর। তিনি আরো বলেন আমি ও আমার ছেলেকে ওর দায়ের করা মামলায় স্বাক্ষী হিসাবে রেখেছে তা লোক মারফত শুনতে পেয়েছি। তিনি বলেন সমাজের খারাপ প্রকৃতির মানুষেরা যা করে থাকে ও সেটাই করেছে।
অপর এক স্বাক্ষী বিসিসির সাবেক কাউন্সিলর আলতাফ মাহমুদ সিকদার বলেন, লুৎফর যে কাজ করেছে তার কোন ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। একজন নেশা আসক্ত মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে। আমি এই মামলাটিকে সে ভাবেই মূল্যায়ন করছি। স্বাক্ষীর বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান তিনি।
মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌসের আইনজীবী কাজী মুনিরুল হাসান বলেন আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটির তদন্ত করছে। আশা করছি তদন্তে সত্যি কারের বিষয়টি উঠে আসবে। তিনি বলেন এ ঘটনায় তার মক্কেলের ব্যাপক মানহানী হয়েছে তাই উপযুক্ত সময়ে অবশ্যই মানহানী মামলা করা হবে।
জানতে চাইলে মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস বলেন মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে তার প্রমান এই লুৎফর। তিনি বলেন আমি নব্বই দশকে প্রতিষ্ঠিত একজন ঠিকাদার ছিলাম। আর ও ছিলো একজন সন্ত্রাসী ও পেশাগত চোর। একাধিকবার জেলও খেটেছে। তিনি বলেন ৯৮ সালে লুৎফরের স্ত্রী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু টাকার অভাবে ঔষধপত্র কিনতে পারছিলো না। এলাকার বড় ভাই হিসাবে আমার কাছে আসলে প্রথমে আমি ওকে চেকের মাধ্যমে ৭ হাজার এবং পরে নগদ ৫ হাজার টাকা ওর স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ বাবদ দেই। যা কখনো ফেরত চাইনি। কিন্তু আমি যখন জমি কিনে ভবন নির্মান কাজ শুরু করি তখন এই লুুৎফর তার দলবল নিয়ে আমার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। যদিও এলাকাবাসী তখন ওকে গন ধোলাই দিয়ে এলাকা ছাড়া করে। এছাড়া লুৎফর একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী। যিনি নিজেই চাদাবাজী করে বেড়ান। তিনি কিভাবে এধরনের মিথ্যা মামলা করতে পারেন তা আমার জানা নেই।
উল্লেখ্য গত ১৭ জানুয়ারী রোববার বরিশালের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লুৎফর মামলাটি দায়ের করলে ভারপ্রাপ্ত বিচারক শামীম আহমেদ পিবিআই কে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন।