দক্ষিণাঞ্চলে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা দক্ষিণাঞ্চলে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চলে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা

3:12 pm , November 17, 2020

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ শীতের শুরুতেই দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে শিশুদের নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত কারণে ডায়রিয়া সহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবনতা বাড়ছে। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে এ ধরনের রোগী ভর্তির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এমনকি বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব জেনারেল হাসপাতাল সহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও শিশু রোগীর সংখ্যা গত ১৫ দিনে কিছুটা বেড়েছে। উপজেলা পর্যায়েও একই চিত্র। এছাড়াও হাসপাতালগুলোর বহি:র্বিভাগ ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে ১০/১৫ জন শিশু ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন শিশু রোগী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিনটি শিশু ওয়ার্ডে শতাধিকের বেশী শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এরমধ্যে প্রায় ১০টি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের বিষয়ে চিকিৎসকরা বেশী সতর্কতা অবলম্বন করছেন। আক্রান্ত শিশুদের বয়স ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে। শেবাচিম হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ এমআর তালুকদার মুজিব সাংবাদিকদের জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে একটু শীতের আবহাওয়া দেখা দেয়ায় শিশুদের মধ্যে জ¦র ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হবার প্রবনতা বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব রোগে আক্রান্ত হলে শিশুরা ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেয়। জ্বরের সঙ্গে খাবারে অরুচি থাকে এবং পালসও বেড়ে যায়। এ সব শিশুদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে কোন সমস্যা হয় না বলেও জানান এ শিশু বিশেষজ্ঞ। করোনার মধ্যে শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়ে শিশু বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসা নিয়ে বিলম্ব করলে বিপদের আশংকা বাড়ে বলেও অভিভাবকদের সতর্ক করে দিয়েছেন।
শেবাচিমের শিশু বহিঃ বিভাগের ডা.ফয়সাল সাংবাদিকদের জানান, বিশ^ জুড়ে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা নতুন করে বৃদ্ধির সাথে আতংকও বাড়ছে। তার মধ্যে আসছে শীত। করোনার ভাইরাসের ক্ষতির অন্যতম দিক হচ্ছে ঠান্ডা। তবে করোনা ভাইরাস ছাড়াও শীতকালে শিশুরা বেশী রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে হাসপাতালের বহি:র্বিভাগে প্রতিদিন ঠান্ডা জড়িত রোগে আক্রান্ত ৩০/৪০টি শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, তবে গ্রাম অঞ্চলের অনেক বাবা-মা এখনও শিশুরা ঠান্ডাজনিত শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করলে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে নিজেরা চিকিৎসা শুরু করেন। এতে শিশুরা আরো বেশী দুর্বল হয়ে পড়ে। রোগের মাত্রাও বেড়ে যায়।
শিশু বিশেজ্ঞদের মতে ঠান্ডাজনিত যে কোন রোগে শিশু আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন চিকিৎসা প্রদান করা একদম উচিত নয়। একই সাথে শীতকালে শিশুকে ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে গরম কাপড়-চোপড় পরিয়ে রাখারও পরামর্শ দেন। আবার অতিরিক্ত গরম কাপড় দিতে গিয়ে ঘামেও শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ হয়ে থাকে বলে চিকিৎসকগন সতর্ক করে দিয়েছেন। তাই এক বছর বয়সের নীচের শিশুদের জন্য শীতকাল অত্যন্ত স্পর্ষকাতর সময়। এসময়ে তাদের খুবই যতেœ রাখার পরামর্শ দিয়ে বাবা-মা সহ পরিবারের সকলকে বিষয়টি বিবেচনার রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকগন।
বরিশাল মহানগরীর জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগেও গত কয়েকদিনে শিশু রোগী সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসকগন। তাদের মধ্যেও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাই বেশি।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক এম আর তালুকদার মুজিব বলেছেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে ঠান্ডা-কাশি-জ্বর হতেই পারে। সামান্য সমস্যাতেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে সতর্ক থাকতে হবে। হালকা জ্বর, কাশি বা নাক থেকে পানি ঝরা সমস্যায় মধু-পানি, লেবু-পানি, আদা বা তুলসী পাতার রস দেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি দুই বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুদের অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াবারও পরামর্শ দেন তিনি।
মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে সবাইকে সচেতন থাকার পাশাপাশি বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞগন। ভাইরাস জনিত রোগ ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে এসময়ে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। কাশির জন্য বাড়িতে সাধারন চিকিৎসা দেওয়া গেলেও শ্বাসকষ্ট উপশমে দ্রুত চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হবার পরামর্শ দিয়ে কোন অবস্থাতেই নিজেদের খুশিমত অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়ানোর কথাও বলেছেন চিকিৎসকগন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT