নারী নির্যাতন: যে কিশোরীকে ১০ মাসে ও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ নারী নির্যাতন: যে কিশোরীকে ১০ মাসে ও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ - ajkerparibartan.com
নারী নির্যাতন: যে কিশোরীকে ১০ মাসে ও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ

1:44 pm , October 8, 2020

স্বপন খন্দকার ॥ বৈশাখী দাস। বয়স কতইবা হবে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে দরিদ্র বাবা আদরের বড় কন্যাটিকে নগরীর টাউন মমতাজ মজিদুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াতেন। গত ডিসেম্বরে মেয়েটি সপ্তম শ্রেনীতে পড়ছিলো। গত ১০ ডিসেম্বরে ১০ মেয়ে প্রাইভেট পড়তে যায়। আর ফিরে আসেনি। উদ্বিগ্ন পিতা পাগল হয়ে খুঁজলেন সবখানে। উপায়ান্ত না দেখে ছুটে গেলেন ‘জনগনের বন্ধু’ পুলিশের কাছে। থানায় কন্যার নিখোঁজ সংবাদ জানিয়ে জিডি করা হলো। কাউনিয়া থানা জিডি গ্রহন করলো। এরপর নানা দুশ্চিন্তার কথা মনে করে দায়ের করলেন অপহরন মামলা। পিতা জানতে পারলেন বানারীপাড়ার চাখার এলাকার বিবাহিত এক ব্যক্তি কিশোরীকে নিয়ে গেছে। পুলিশও জানলো তা-ই। কয়েকদিন পর পুলিশ ওই অভিযুক্তের বাড়িতে হানা (!) দিলো। ধরে নিয়ে আসলো পরিবারের দু’জনকে। ভিকটিমকে পাওয়া গেল না। আদালতে সোপর্দের পর আটক দু’জনকে কারাগারে পাঠানো হলো। এর কয়েক দিন পর আদালত থেকে প্রধান অভিযুক্তের পরিবারের দু’সদস্য জামিনে মুক্ত হলো। বৈশাখীর কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। হতভাগ্য পিতা আদরের প্রিয় সন্তানকে ফিরে পেতে বিভিন্নজনের কাছে আবেদন নিবেদন করেছেন। শরনাপন্ন হলেন দু’টি সংস্থার। আবেদন পেয়েছে মহিলা পরিষদ নেতৃবৃন্দও। একদিন (গত ফেব্রুয়ারী মাসে) পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে যান তারা। মহানগর পুলিশ কমিশনার সেদিন দপ্তরে ছিলেন না। মহিলা পরিষদ নেতৃবৃন্দ উপ-পুলিশ কমিশনারের সাথে দেখা করেন, কথা বলেন। নগরীর দু’টি থানার দু’টি নারী নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে স্মারকলিপি তুলে দেন তারা। একটি ঘটনা নদীর ওপারে এক নারীকে গরম পানিতে ঝলসে দেয়ার ঘটনার মামলা গ্রহন প্রসঙ্গে, অপরটি অসহায় দরিদ্র পিতার কিশোরী কন্যা বৈশাখী দাসকে উদ্ধার করে দেয়ার আবেদন। উপ-পুলিশ কমিশনার দু’টি থানার ওসিদের সাথে কথা বললেন। অপর প্রান্তগুলো থেকে কী বলা হয়েছিলো তা আমরা বলতে পারবো না তবে ওসিদের সাথে কথা শেষ করে মহোদয় খুব উত্তেজিত হলেন। প্রকাশ করলেন দু’জনেই ‘খারাপ’ একজন মাদক বিক্রির সাথে জড়িত। অপরজন অর্থাৎ বৈশাখীর তো ‘প্রেম কেস’। আমরা যারা গিয়েছিলাম মহিলা পরিষদের সভাপতি পুষ্প চক্রবর্তী, সচেতন নাগরিক কমিটি (টিআইবি) সাবেক সভাপতি নুরজাহান বেগম, সাবেক এক কাউন্সিলর ও নারী নেত্রী নিগার সুলতানা হনুফা সহ অনেকে হতাশ হয়ে ফিরে এলাম। তবে পুলিশ বসে ছিলো না। পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা অর্থাৎ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রায়ই কিশোরীর বাবার কাছে যেতেন, জানতে চেয়ে বলতেন- ‘বাবু, মেয়েটির কোন খোঁজ পেয়েছেন ? খোঁজ পেলে আমাদের জানাবেন’। আবার কখনো গিয়ে বলেন- বাবু, ‘শুনলাম মেয়েটি ধর্মান্তরিত হয়েছে। বিয়ে হয়েছে। ‘অসহায় পিতার চোখে শুধু হতাশা-বেদনার অশ্রু গড়ায়। তবে পিতা তাদের বলতে চান- কিশোরী অপ্রাপ্ত বয়স্ক, সে তো ধর্মান্তরিত হবার সিদ্বান্ত দিতে পারে না। মেয়েটি তো বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা একা একা। প্রায় ১০ মাস হতে চললো কিশোরীর বাবার চোখের অশ্রু শুকায়না। কোথায় আছে মেয়েটি, কোথায় তার অভিভাবক। কোথায় আছে কিশোরীর জন্যে রাষ্ট্রের ব্যবস্থা। তা হলে কী কিশোরী মা হয়ে ফিরবে বাবা-মা’র কাছে ?

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT