3:29 pm , September 30, 2020
সাঈদ পান্থ ॥ রাজধানী ঢাকা সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ছাত্রী নুসরাত জাহান তন্নি বরিশালে এসেছেন সাতলার লাল শাপলার রাজ্য দেখার জন্য। তাই শুক্রবার ভোর রাত ৪টায় সাজগোজ করে বরিশালে অবস্থান করা খালাতো ভাই-বোন, মামাতো ভাই-বোনদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন। তারা আগেই একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নে রওনা দেন। বরিশাল নগরী থেকে ৬০ কিলোমিটার দুরে ঢাকা বরিশাল মহাসড়ক থেকে ইছলাদী পর্যন্ত যেতে তাদের কোন বেগ পেতে হয়নি তাদের। কিন্তু এরপরই শুরু হয় সরু রাস্তায় যাত্রা। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত, আর খানাখন্দ। গাড়িতে ঝাকুনি খেতে খেতে ভোর ৬টার দিকে সাতলার সেই কাংক্ষিত স্থানে পৌছে যায় তারা। তবে শাপলার রাজ্যে এসেই শত শত কষ্ট যেন দুর হয়ে গেলো। এরপর নৌকায় চড়ে ঘন্টা দেড় ঘোরাঘোড়ি, ফটোসেশন করে তাদের পড়তে হয় বড় বিপত্তিতে। কারণে সেখানে নেই কোন ওয়াসরুমের ব্যবস্থা। নেই সকালের নাস্তা করার মত কোন দোকানপাট। যার কারণে আবারো ঝক্কিজামেলায় পড়তে হয় তাদের। এভাবে হাজার হাজার পর্যটক এই সাতলায় আসলে এই দুর্ভোগে পড়েন। কিন্তু তারপরও জাতীয় ফুল ঘিরে মানুষের ভালবাসা এই স্পেটটি পর্যটকে ভরপুর থাকে।
এখানকার শত শত একর বিলের একাধিক স্পটে ফুটে থাকা লাল শাপলায় যেন চোখ জুড়ায়। দীর্ঘ সময়ের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয় অপরুপ সৌন্দর্য্যরে দৃশ্য শাপলার বিল। কাক ডাকা ভোরেই সেই অজোপারাগায়ে শত শত দর্শনার্থীর ঢল নামে। বিলের মধ্যে নৌকায় ঘুরে যেন স্বর্গের সুখ পান দুরদুরন্ত থেকে আসা নানা শ্রেনীর পর্যটক। গত কয়েক বছর ধরে এমনই পর্যটকের ভীর থাকলেও দর্শনীয় এই স্পটটিতে অবহেলার স্পস্ট ছাপ ফুটে উঠেছে। যে কারনে ধীরে ধীরে মরে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে এক সময়ের প্রায় ৩শ একর ভালবাসার লাল শাপলার রাজ্য এমনটাই জানালেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের তথ্যমতে, বেহাল সড়ক ব্যবস্থা, অবকাঠামো না থাকা এবং প্রশাসনিক অবহেলায় ৩শ একর বিলের মধ্যে এখন দেড়শ একরের নীচে লাল শাপলা জন্মাচ্ছে। সাতলার সাতবাড়ি বিলে নৌকায় ব্যবসায় জড়িত কলেজ ছাত্র লিটন বিশ^াস বলেন, আষাঢ় এর শেষ থেকে আশ^ীন মাস পর্যন্ত শাপলা ফোটা শুরু করে এ বিলে। সাতলার প্রায় ৮ থেকে ১০টি স্পটে লাল শাপলা ফুটে। এক একটি ঘিরে বিশাল বিল। সাতবাড়ি বিলে স্থানীয়রা ৮টি নৌকায় দর্শনার্থীদের সেবার প্রদান করেন। এজন্য প্রতি ট্রিপে ২০০-৫০০ টাকা দেয়া হয়। তিনি বলেন, শুক্রবার প্রায় ৫০০ দর্শনার্থী এসেছে। ভোর ৫টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এখানে দর্শনার্থীদের ভীর জমে। তিনি বললেন, বিল ক্রমশ মরে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মাছের ঘেরে লাভজনক হওয়ায় বিলেল শাপলা ধ্বংস করে মাছ চাষ করছে অনেকে। পার্শবর্তী নয়াকান্দির বিশাল শাপলার বিল এখন মাছের ঘের করা হয়েছে। অপর একটি মুড়ি বাড়ি স্পটেও লাল শাপলা এবার কম ফুটছে নানা কারণে।
স্থানীয় উদ্যোক্তা মোঃ কলিমুল্লাহ বলেন, দুর-দুরান্ত থেকে পর্যটক আসে এই সাতলায়। পর্যটকদের সবচেয়ে কস্ট এখানে কোন দোকানাট কিংবা বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। যে কারনে শত কস্ট করে লাল শাপলার বিলে এসেও চরম দুর্ভোগে পরেন পর্যটকরা। এ সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ও উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি সাতলায় ঘুড়তে আসা বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধুবী রায় বলেন, প্রশাসনিক কাজে তাদের ব্যাস্ত থাকতে হয়। তাই পারিবারিক জীবনে সময় দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ক্ষনিকের এই ভ্রমন তাদের কাজের স্পৃহা বাড়াবে। লাল শাপলার সৌন্দর্য্য দেখে পথের ক্লান্ত দুর হয়ে যায়। জেলা প্রশাসন এই দর্শর্নীয় স্পটটি নিয়ে পরিকল্পনা নিচ্ছেন বলে শুনেছেন। একই ধরনের মতামত দিয়েছেন দর্শনার্থী ও বাকেরগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভুমি) তরিকুল ইসলাম।
বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, শাপলা বিলকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য প্রস্তাবনাও প্রেরন করা হয়েছে পর্যটক কর্পোরেশনে। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে নানা উদ্যোগ গ্রহন করা হচ্ছে। করোনার কারণে পিছিয়ে পড়লেও এ বছর সেখানে রেষ্টহাউজ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, পর্যটন স্পট হিসেবে সাতলার উন্নয়ন ঘটলে ওই অঞ্চলেল জীবনধারায় পরিবর্তন আসবে। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার অমিতাব সরকার বলেন, ‘এই শাপলার রাজ্য সাতলাকে নিয়ে সরকারের অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। খুব শিঘ্রই এর সুফল ওই এলাকার মানুষ ও পর্যটকরা পাবে।’
বরিশাল ২ আসনের (বানারিপাড়া-উজিরপুর) সংসদ সদস্য মো: শাহে আলম বলেন, ‘সাতলার বিলে নামতে ঘাটনা স্থাপণ করা হবে। ক্যান্টিন ও টয়লেট স্থাপনের জন্য পর্যটন মন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে। খুব শীঘ্রই একটি ভাল ফলাফল আসবে।’ এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য (মহিলা আসন) ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ্যাড. সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা বলেন, সাতলার এই এলাকায় বছরের ৬ মাস পানি থাকে। এই সময় এখানকার ১৫ বিলে প্রচুর পরিমানের লাল ও সাদা শাপলা ফুটে থাকে। যার কারণে ৬ মাস এখানে হাজার হাজার পর্যটক আসে। তাই আমরা একটি মাষ্টারপ্লান করছি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাতলায় একটি রিফ্রেশিং সেন্টার স্থাপণ করা হবে। এ জন্য বরিশাল বিভাগ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে স্থায়ী কমিটি। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি রেষ্টুরেন্ট স্থাপণ করা হবে। ১৫টি বিল থাকলেও যেসব বিলে শাপলা বেশি ফোটে তার মধ্যে থেকে ৩/৪টি বিলে ভাল মানের কিছু বোড স্থাপণ করা হবে। যা ৬ মাসের জন্য ইজারা দেয়া হবে।