সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঝুলে আছে সাত সহস্রাধিক শিক্ষকের নিয়োগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঝুলে আছে সাত সহস্রাধিক শিক্ষকের নিয়োগ - ajkerparibartan.com
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঝুলে আছে সাত সহস্রাধিক শিক্ষকের নিয়োগ

2:40 pm , August 16, 2020

সাঈদ পান্থ ॥ সারা দেশেই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় এক যুদ্ধের সৃস্টি হয়। দেখা যায় এক আসনের বিপরীতে ১০ জনেরও বেশী শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিযোগীতা হয়। কিন্তু এর ভিন্ন চিত্র দেখা যায় শিক্ষকদের বেলায়। যে স্কুলে ভর্তি নিয়ে যুদ্ধ হয়, সেখানে বিরাজ করছে শিক্ষক সংকট। যদিও বিভাগীয় শহরের বেলায় এর উল্টেটা দেখা যায়। কিন্তু জেলা বা উপজেলার স্কুলগুলোকে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। তেমনি দুই টি স্কুল হচ্ছে বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি বালক বিদ্যালয়। শুধুমাত্র শিক্ষক সংকটের জন্য প্রতিষ্ঠান দুটি প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে ভূগছে। তবে বিভাগীয় শহর বরিশালের শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় সব কটি আসনে শিক্ষক রয়েছে। এদিকে ২০১৮ সালে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট দুর করতে লিখিত পরীক্ষায় ৭ হাজার ১৬১ পাস করেও নানা জটিলতার কারণে ঝুলে আছে তাদের নিয়োগ কার্যক্রম। নেয়া হচ্ছে না মৌখিক পরীক্ষা। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এই সাত সহস্রাধিক পরীক্ষার্থী।
মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় সদর বরিশাল নগরীতে ২০১৬ সালে স্থাপিত নতুন দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। নগরীর কাউনিয়ার শহীদ আরজু মনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (বিদ্যালয়) মো.এবাদুল ইসলাম। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিবাবক অভিযোগ করেন, মো.এবাদুল ইসলাম নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে না বসায় সহকারী শিক্ষকরা সেখানে রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। বাধ্যতামুলক কোচিং করার জন্য শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়ারও অভিযোগ আছে কয়েকজন শিক্ষকের বির”দ্ধে। এ প্রসঙ্গে সহকারী পরিচালক এবায়দুল ইসলাম বলেন, তিনি বিদ্যালয়টির অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। তাকে মাউশির আঞ্চলিক দাপ্তরিক কাজ সেরে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। এতে তারও অনেক সমস্যা হচ্ছে। তিনিও চান প্রতিষ্ঠানটিতে একজন স্থায়ী প্রধান শিক্ষক দেয়া হোক। সহকারী পরিচালক এবায়দুল ইসলাম জানান, বিভাগীয় সদর বরিশালে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আছেন একমাত্র জেলা স্কুলে। তবে ৪টি প্রতিষ্ঠানেই সহকারী শিক্ষক পদগুলো প্রায় পরিপূর্ন। এ কর্মকর্তার মতে, শিক্ষকরা প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে যেতে না চাওয়ায় সেখানে শিক্ষক সংকট সবচেয়ে বেশী। ভোলা জেলায় ৪টি বিদ্যালয়ের সবগুলো চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। পিরোজপুরের ৬টি বিদ্যালয়ের একমাত্র সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আছেন। ঝালকাঠীতে দুটি বিদ্যালয়ের একটিতেও প্রধান শিক্ষক নেই। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহকারী শিক্ষকও আছে সৃষ্টপদের অর্ধেক।
বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক বলেন, ৫২ জন শিক্ষক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫ জন। মাত্র ১৫ জন শিক্ষক দুটি শিফটে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বরগুনা সরকারি বালক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদ চৌধুরী জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ৫১ শিক্ষক পদের বিপরীতে আছে ২২ জন। জানা গেছে, শিক্ষক সংকটের সুযোগে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা এ দুটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে কোচিং সেন্টার অদলে কমপক্ষে ১৫টি অনুমোদনহীন বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। তারা বাগিয়ে নিচ্ছে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
এদিকে সরকারি চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলোর ক্ষেত্রেও নানা গড়িমসি দেয়া দিয়েছে। ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এ নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ২০ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানিয়েছে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সর্বশেষ শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল ২০১১ সালে। এর পর থেকে বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছিল। তবে বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে স্কুলগুলোর জন্য বিষয়ভিত্তিক পর্যাপ্ত শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ছাড়া, বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে যারা শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়ে আসেন, তাদের বেশিরভাগই পরে অন্য চাকরিতে চলে যান। এতে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট থেকেই যায়।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগের প্রার্থীরা জানান, তারা সাত হাজার ১৬১ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও অনেকেই বিভিন্ন পদে এরই মধ্যে চাকরি পেয়ে গেছেন। কেউ কেউ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি জুলাই পর্যন্ত পিএসসির অধীন অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বা অপেক্ষায় আছেন। এ সময়ের মধ্যে ৩৭তম বিসিএসের নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণিতে এক হাজার ৩৬৫ জন নিয়োগ পেয়েছেন। ৩৮তম বিসিএসে দুই হাজার ২০৪ জন নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়াও গত ৪ জানুয়ারি ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শিক্ষক প্রার্থীরা বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই নিয়োগ থেকে চাকরিতে অপেক্ষমাণ তালিকা করা হোক। যে শিক্ষক সংকট চলছে, তাতে শূন্য পদের অপেক্ষমাণ তালিকা করা জরুরী। সরকারি নিয়োগে অপেক্ষমান তালিকা থাকলে কোনো পদ শূন্য থেকে যাবে না। তারা আরো জানান, তারা পাশ করেছেন ৭ হাজার ১৬১ জন। প্রথমে পদ ছিল ১ হাজার ৩৭৮টি, পরে পদ বাড়িয়ে ১ হাজার ৯৯৯টি করা হয়। এছাড়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সর্বশেষ নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ২০১১ সালে। এরপর থেকে বিসিএস নন ক্যাডার থেকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বরিশাল আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর মো: মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বরিশাল বিভাগের ২২টি সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট ভয়াবহ। স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আছে মাত্র দুটিতে। তিনি মাউশিকে পরিসংখ্যানে দেখিয়েছেন, স্কুলগুলোতে গড়ে ৩৮ ভাগ শিক্ষক নেই। তবে বরিশাল নগরীর দুটি স্কুল বাদ দিলে এ পার্সেন্টিজ দাঁড়াবে ৫০ ভাগের বেশি। পরিচালক বলেন, চলতি সপ্তাহে মাউশি’র পরিচালককে (মাধ্যমিক) এ বিষয়ে লিখিত তথ্য দিয়েছেন। দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ এবং পদোন্নিত বন্ধ থাকায় এ জটের সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন জানান। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকা বিশেষ করে ভোলার দৌলতখান, পিরোজপুরের কাউখালী এবং বরগুনার বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে যাদের নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে তাদের নিয়োগ কার্যক্রম এতো দিনে শেষ হয়ে যেত। আমাদের দেশে করোনা মহামারি না আসলে হয়তো এতোদিনে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়ে যেতো। খুব শীঘ্রই এটির একটি সমাধান আসবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর মো. বেলাল হোসেন বলেন, এই নিয়োগ কার্যক্রমটি পিএসসি নিয়ন্ত্রন করে। তবে পরীক্ষা হয়েছে। রিটেনের রেজাল্টও প্রদান করা হয়েছে। ভাইভার জন্য ডাকা হবে এমন সময় করোনায় আসায় আর ভাইভা করা যায়নি। তবে খুব শিঘ্রই ভাইভা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এবিষয়ে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সচিব আছিয়া খাতুনের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT