করোনা সংক্রমন মহামারীর শংকা করোনা সংক্রমন মহামারীর শংকা - ajkerparibartan.com
করোনা সংক্রমন মহামারীর শংকা

2:43 pm , July 14, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সারাদেশে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৭ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৪২৪ জনের। এমন শিরোনামের যে কোন সংবাদে আতংকিত হওয়াটা স্বাভাবিক। সংক্রামক এই ভাইরাসের তান্ডবে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে সামান্য সচেতনতা অবলম্বন মানহানিকর ও অযৌক্তিক বিষয়ে পরিনত হচ্ছে প্রতিদিন। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধী ব্যবস্থা নেই। সচেতনতা অবলম্বন ও স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া এ ভাইরাস প্রতিরোধে কোন উপায় না থাকলেও তা উপেক্ষায় ব্যস্ত সবাই। বরিশাল জেলায় করোনার সংক্রমনের শুরু থেকেই স্বাস্থবিধি লঙ্ঘন খুবই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিনত হয়েছে। জেলায় ১৪ জুলাই দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ১ হাজার ৯০৭। যারমধ্যে নগরীতেই সংখ্যাটা ছিলো প্রায় ১ হাজার ৭শ। জেলায় মৃত ৩৩ জনের মধ্যে মহানগরীতেই সংখ্যাটা ছিলো ২০ জন। খবরের পাতায় এমন সংবাদের ঠিক বিপরীত দৃশ্য মহানগরীতে দেখা যায় হারহামেশা। স্বাস্থবিধি মানাতো দুরের কথা, নূন্যতম সচেতনতাও নেই বেশির ভাগ নগরবাসীর মধ্যে। ঈদের পর থেকে করোনার হটস্পটে পরিনত হওয়া নগরীতে স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়টি একটু বেশি তুচ্ছজ্ঞান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সচেতন নাগরিকরা। অভিযোগে তারা জনায়, এ নগরীর মানুষ হয়ত দেশের মধ্যে সবচে বেশি অসচেতন। কারন যেখানে সেখানে, যেমন ইচ্ছে তেমন চলাফেরা চলেছে তাদের। কোন স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই নগরবাসীর। শুধুমাত্র প্রশাসনের ভয়ে মুখে নামেমাত্র একটি মাস্ক ব্যাবহার ছারা আর কিছুই হচ্ছে না করোনার বিরুদ্ধে। তাও ব্যবহার করছেন না অনেকেই। কারও কাছে এটা লজ্জার বিষয় আবার কারও কাছে অযৌক্তিক। তবে এর মধ্যেই প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে সংক্রমন। তাই অসচেতন নগরবাসীকে আরও সচেতন করতে প্রচারনা, ভ্রাম্যমান আদালত এর বেশি বেশি অভিযান পরিচালনা করার আবেদন জানিয়েছে সচেতন মহল। স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের প্রতি কঠোর অবস্থানে যাওয়ার কথাও বলেন তারা। যেমন কঠোর অবস্থানে কিছুদিন পূর্বে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, র‌্যাব সহ ছিল পুলিশ সদস্যরা। কারন কঠোরতা কিছুটা কমে যাওয়ায় বিগত কয়েকদিনে ভয়ংকর অবনতি হয়েছে বরিশালের স্বাস্থ্যবিধির। কোথাও মানা হচ্ছে না নুন্যতম সচেতনতার বিষয়টি।
সচেতন মহলের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরজমিনে দেখা গেছে, নগরীর প্রত্যেকটি এলাকার অলি-গলি থেকে শুরু করে সকল স্থানে মানুষের অবাদ বিচরন। সকাল থেকে ঢের রাত পর্যন্ত এই বিচরন অব্যাহত থাকে। নগরীর দুটি বাসটার্মিনাল, সদর রোড, গীর্জা মহল্লা, ফলপট্রি, চকবাজার, কাটপট্রি, বাজার রোড এর মতো ব্যবসায়িক এলাকাগুলোতে গেলে এই নগরীতে কোন সংক্রমক রোগের প্রকোপ চলছে তা মোটেও মনে হবে না। পথচারীদের সাথে সাথে গন পরিবহনে চলাচলকারী নগরীর বাসিন্দারাও একই রকমে চলছেন স্বাস্থ্য বিধির তোয়াক্কা না করেই। কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মানা হচ্ছে না সামাজিক দুরত্ব বজায়ের নিয়ম। কেউ কেউ চেষ্টা করলেও সমাজিক সহযোগিতার অভাবে তা ফলপ্রসু হচ্ছে না। অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্বের এই বিষয়টিকে কেথাও কোথায় পুরো নাস্তানাবুদ করেছে নগরীর এক শ্রেনীর বাসিন্দারা। নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে প্রতিদিন জরো হয়ে মোবাইলে লুডু এ্যাপস এর মাধ্যমে চলে হাজার হাজার টাকার জুয়া। কাধে কাধ মিলিয়ে দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশ্যে এমন জুয়া খেলছে শহীদ মিনার সংলনগ্ন রেন্ট-এ-কার এর ড্রাইভাররা। এছাড়াও প্রতিদিন নগরীর খেয়াঘাট গুলো থেকে ট্রলারে কোন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই হাজারো মানুষ যাতায়াত করছেন। নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে গেলে মনে হবে কোন বড় ধরনের উৎসব চলছে। বঙ্গবন্ধু উদ্যান, ত্রিশ গোডাউন, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, স্বাধীনতা পার্কে ভীর করছে নগরবাসী। তবে এর কোন স্থানেই কোন ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়না মোটেও।
তাই এ সকল স্থানে ভ্রাম্যমান আদালতের নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রনে আনা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে গত ঈদের ন্যায় ঈদুল আযহার সময় ও তার পরে বরিশাল জেলা ও নগরীতে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে বলে মন্তব্য করেছে একাধিক চিকিৎসক।
এ বিষয়ে বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগীয় অফিসের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, করোনা ভাইরাস দিন দিন প্রকট হলেও আমাদের সচেতনতা বা স্বাস্থ্যবিধি মানার মানুষিকতা কমে যাচ্ছে। এতে করে যে মানছে না শুধু যে সেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা নয়, ক্ষতি হচ্ছে সকলের। এই ব্যাধি প্রতিরোধে যে বিষয়গুলো অপরিহার্য আমরা তাই লঙ্ঘন করছি বলে জানান তিনি। নিজের সাথে সাথে পরিবারকে বাচানোর তাগিদ দিয়ে তিনি সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহবান জানান। একই সাথে যারা তুচ্ছজ্ঞান করছে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লীষ্ঠ মহলকে আরও কঠোর হওয়ার আহবান জানান।
উল্লেখ্য ১৪ জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমনের সংখ্যা সরকারীভাবে ৪ হাজার ১৩০ এবং মৃতের সংখ্যা ৮৬’তে উন্নীত হয়েছে। এরমধ্যে জুলাই মাসের প্রথম ১৩ দিনেই দক্ষিণাঞ্চলে মোট ১ হাজার ১৬২ জন আক্রান্তের বিপরীতে মৃত্যু হল ২৬ জনের।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT