2:53 pm , June 13, 2020
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমন অপ্রতিরোধ্য গতিতেই বাড়ছে। শনিবার দুপুরের পূর্ববর্তি ৪৮ ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলে আরো ৬ জনের মৃত্যু সহ নতুন আক্রান্ত হয়েছে আরো ১৮০ জন। এ অঞ্চলে ইতোমধ্যে ৩১ জনের মৃত্যুর খবর জনমনে দুঃশ্চিন্তা বৃদ্ধি করছে। গড় মৃত্যহার ৩%-এর বেশী। তবে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলায় মৃত্যুহার অত্যাধীক বেশী। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দ্বিতীয় বারের মত ‘বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় রোগীর সংখ্যা অত্যাধীক এবং এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বার্তা দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য বিভাগের অপর এক বার্তায় ‘বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকা লক ডাউন করারও সুপারিশ’ করা হয়েছিল । তবে গত ৪৮ ঘন্টায় নতুন করে আরো ৩৩ জন সহ দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্ত ১,৩৯৩-এর মধ্যে মোট সুস্থ্য রোগীর সংখ্যা ৩৬৯ জনে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন নগরী জুড়ে চিকিৎসক সহ চিকিৎসা কর্মী এবং আইনÑশৃংখলা বাহিনীর সদস্য ও ব্যাংক কর্মী সহ সাধারন মানুষ আক্রান্ত হলেও কারো কোন হেলদোল নেই। গোটা নগরী জুড়ে এখন করোনা সংক্রমনের আতংকিত খবর। স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্বেগের বিষয়টিও প্রশাসন আমলে নেয়নি এখনো। এমনকি নগর প্রশাসনের তরফ থেকেও পরিস্থিতি উত্তরন সহ তা প্রতিরোধে নুন্যতম কোন পদক্ষেপ নেই। পুলিশ বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। শনিবার দুপুরের পূর্ববর্তি ৪৮ ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় আরো ১৮১ জন আক্রান্ত ও ৬ জনের মৃত্যুর কথা বলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাই ১০৩। মৃত্যু হয়েছে দু জনের। জেলায় শতাধীক আক্রান্তে মধ্যে নগরীতেই সংখ্যাটা প্রায় ৮০। মহানগরীতে মৃত দুজনের মধ্যে ডাঃ আনোয়ার হেসেন গত সোমবার দুপুরে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নেয়ার পরে মঙ্গলবার রাতে একটি হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া নগরীর বাজার রোডের মুড়িপট্টি এলাকার অপর ১ জন শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরন করেছেন। তবে শুধু বরিশাল নয় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের অবস্থাই ক্রমশ অবনতি লাভ করছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪শ ছুই ছুই করছে। যার মধ্যে বরিশাল জেলাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৮৬২। আর মহানগরীতে প্রায় সাড়ে ৭শ। বরিশালে পরে পটুয়াখালীতে গত তিন দিনে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। শনিবার দুপুরের পূর্ববর্তি ৪৮ ঘন্টায় পটুয়াখালীতে নতুন করে ৪২জন আক্রান্ত সহ ৪ জনের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে জেলাটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৫’তে পৌছল। বৃহস্পতিবার জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার কাকরাবুনিয়াতে ৬৫ বছর বয়সি একব্যক্তি ছাড়াও শুক্রবার কলপাড়া, দুমকি ও বাউফলে আরো ৩জনের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে জেলাটিতে করোনা সংক্রমনে মোট ১০ জনের মৃত্যু হল। গত ৪৮ ঘন্টায় দ্বীপ জেলা ভোলাতে নতুন করে ১৩ জন সংক্রমিত হবার ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯০’তে উন্নীত হল। মোট মৃত্যু হয়েছে দু জনের। পিরোজপুরে আরো ৮জন আক্রান্ত হবার মধ্যে দিয়ে মোট সংখ্যা ১০২ জনে উন্নীত হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। নতুন ৩জন আক্রান্ত হবার মধ্যে দিয়ে ছোট জেলা বরগুনায় সংখ্যাটা ১০৩-এ উন্নীত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে দুজনের। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট জেলা ঝালকাঠীতে গত ৪৮ ঘন্টায় আরো ৩জন আক্রান্ত হবার মধ্যে দিয়ে মোট আকান্ত ৮১। মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত ৩জনের। বরিশাল মহানগরী সহ জেলায় মোট আক্রান্ত ৮৬২ জনের বিপরিতে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন ১২৯ জন। পটুয়াখালীতে ১৫৫ জন আক্রান্তের বিপরিতে মারা গেছেন ১০জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩১ জন। বরগুনায় ১০৩ জন আক্রান্ত হলেও মারা গেছেন ২জন। সুস্থ হয়েছেন ৬২ জন। পিরোজপুরে ১০২ জন আক্রান্তের বিপরিতে মারা গেছেন ৩ জন । সুস্থ হয়েছেন ৬৬জন। ভোলাতে ৯০ জন আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয়েছে দুজনের। সুস্থ হয়েছেন ৩৪ জন। আর ছোট জেলা ঝালাঠীতে ৮১ জন আক্রান্তের বিপরিতে মারা গেছেন ৩জন। সুস্থ হয়েছেন ৪৭ জন। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড রোগীর চাপে বিপর্যস্ত অনেকটাই। গোটা দক্ষিণাঞ্চলের করোনা সংক্রমিত রোগীই এ হাসপাতালে আসছে। হাসপাতালটির করোনা ওয়ার্ডে শনিবার সকাল পর্যন্ত এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ৪৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। এর মধ্যে গত ৪৮ ঘন্টায় নুতন দুজন ভর্তি হলেও ছাড়পত্র পেয়েছে ১জন । মৃত্যু হয়েছে দুজনের। হাসপাতালটির আইসোলেশন ওয়ার্ডে নতুন ১৫ জন সহ মোট ২৪জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। এপর্যন্ত আইসালেশন ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত ২২৩ জনের ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৪৩ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জনের।