দক্ষিনাঞ্চলে বোরো চাল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ১৫ লাখ টন দক্ষিনাঞ্চলে বোরো চাল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ১৫ লাখ টন - ajkerparibartan.com
দক্ষিনাঞ্চলে বোরো চাল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ১৫ লাখ টন

1:00 am , March 4, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দেশে প্রায় ৫৬ লাখ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৬০ লাখ টন আমন চাল উৎপাদনের পরে ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে ২ কোটি ৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠে মাঠে ব্যস্ত কৃষকরা। এরমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলার সোয়া ৩ লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। গত বছর রবি মৌসুমে দেশে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৪৯ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের মাধ্যেমে প্রায় ২ কোটি ৩ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়। উৎপাদন লক্ষ্য ছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ টনের মত। যদিও গত বছর একাধিক প্রাকৃতিক দূর্যোগে দেশের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির বোরা ধান আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
তা না হলে উৎপাদন আরো অন্তত ১ লাখ টন বৃদ্ধি পেতে পারত বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র। তবে চলতি বছর দেশের কয়েকটি জেলায় লাগাতর শৈত্য প্রবাহে বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরী’র কবলে পড়েছে। এরপরেও কৃষকগন দ্রুত বীজতলা তৈরী বা অন্য এলাকা থেকে ভাল বীজ সংগ্রহ করে রোপন শেষ করছে। ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭০ ভাগ জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিশে^র ৪র্থ ধান উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এ দানাদার খাদ্য ফসলের গুরুত্ব অপরিসীম হলেও ধানের দর নিয়ে কৃষকদের হতাশাও চরমে। বোরো ধান ইতোমধ্যে প্রধানদানাদার খাদ্য ফসলের স্থান দখল করেছে। কিন্তু গত বছরও ধানের দর পতনে কৃষকের মুখে হাসি ফোটেনি। যদিও সরকার নানা শর্তে এবার ধান কিনবে। কিন্তু তাতে কৃষক কতটুকু লাভবান হবেন তা নিয়ে সংশয়Ñসন্দেহ রয়েছে। কারন এখনো বাংলাদেশেই সেচ ব্যয় বিশে^র সর্বাধিক। সেকারনে উৎপাদন ব্যয়ও মন প্রতি ৬শ টাকার কাছে। কিন্তু ধানের দরে কৃষক উৎপাদান ব্যয়ও তুলতে পারছে না।
তবে চলতি রবি মৌসুমেও বোরো আবাদে সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করছে। সেচ মৌসুমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি সব ধরনের সার বিপননের বিষয়টিও নিবিড় পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। বোরো’র জমিতে সেচ নির্বিঘœ রাখতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ইতিপূর্বেই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকেও বিষয়টি সার্বক্ষনিক মনিটরিং করা হচ্ছে।
আমাদের দেশ এখনো ধানের গড় ফলন ৪.০১ টন। যা চীন, জাপান ও কোরিয়াতে ৫-৬ টনের মত। তবে গত কয়েকদশকে দেশে ধানের উৎপাদন রেকর্ড পরিমান বেড়েছে। ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট-ব্রি’র মতে, দেশে ১৯৭০-৭১ সালে ধানের উৎপাদন ছিল ১ কোটি টন। যা ২০০৮-০৯ সালে ৩ কোটি ৩৪ লাখ টনে উন্নীত হয়। সরকারী মতে বর্তমানে তা ৪ কোটি টনেরও বেশী। ১৯৭০ সালে ব্রি প্রতিষ্ঠার পরে মৌসুম ও পরিবেশ উপযোগী উফসী ধানের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদনে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। ইতোমধ্যে ব্রি ৯২টি উন্নতজাত ও উচ্চ ফলনশীল ধানবীজ উদ্ভাবন করেছে। এরমধ্যে ৬টি হাইব্রিড ও অন্যগুলো ইনব্রিড। এমনকি ব্রি লবন ও বণ্যা সহিষ্ঞু জাতের ধানও উদ্ভাবন করেছে। দেশের ৮০ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীলÑউফশী জাতের ধান আবাদ হচ্ছে। ফলে গত ৪ দশকে দেশে ধান উৎপাদনে নিরব বিপ্লব ঘটে গেছে। এমনকি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশে^র প্রায় ২০টি দেশে এখন ব্রি উদ্ভাবিত ধানের আবাদ হচ্ছে।
কিন্তু একদিকে ধানের দাম কম, অপরদিকে সেচ ব্যয় সারা বিশে^র মধ্যে বেশী হওয়ায় কৃষকদের জীবনমানের কোন উন্নতি হচ্ছে না। কৃষি মন্ত্রনালয়ের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমাদের দেশে সেচ ব্যয় এখনো ধান উৎপদন ব্যয়ের প্রায় ২৮Ñ৩০%। অথচ আমাদের নিকট প্রতিবেশী ভারতের মরুময় এলাকা পাঞ্জাবে সেচ ব্যয় মোট উৎপাদন ব্যয়ের মাত্র ১৩%। যা থাইল্যান্ডে ৮% ও ভিয়েতনামে মাত্র ৬%। এমনকি আমাদের দেশে দেশে যে সিংহভাগ এলাকায় ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার হয়, সেখানে কোন ভতুর্কি নেই। অথচ কৃষি-সেচে বিদ্যুৎ বিলের ওপর ২৫% ভর্তূকি দেয়া হচ্ছে।
মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদদের মতে, উৎপাদন ব্যয় তুলে কৃষকগন যদি সামান্য মুনাফার মুখ দেখে তবে ধান আবাদে তাদের উৎসাহ আরো বাড়বে। তবে এজন্য কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধানÑচাল ক্রয় সহ সেচ ব্যয় হ্রাসের কোন বিকল্প নেই বলে জানিয়ে সেচ যন্ত্রে ব্যহৃত বিদ্যুতের পাশাপাশি সেচযন্ত্রে ব্যবহৃত ডিজেলেও পুনরায় ভর্তূকির বিষয়টি বিবেচনা করার তাগিদ রয়েছে। ২০৭-০৮ অর্থ বছরে একবারই ডিজেল চালিত সেচকাজে নগদ সহায়তা প্রদান করেছিল সরকার।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT