দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশের সাথে দুরুত্ব শতাধিক কিলোমিটার হ্রাস করবে দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশের সাথে দুরুত্ব শতাধিক কিলোমিটার হ্রাস করবে - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশের সাথে দুরুত্ব শতাধিক কিলোমিটার হ্রাস করবে

2:00 am , January 31, 2020

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল-কোটালিপাড়া-গোপালগঞ্জ-ভাটিয়াপাড়া-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল এবং ভাংগা-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের কালনাতে মধুমতি নদীর ওপর ৯৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬লেন-এর ‘কালনা সেতু’ নির্মিত হচ্ছে । জাপান উন্নয়ন তহবিল-জাইকা’র অর্থায়নে সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়ের ‘ক্রস বর্ডার রোড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’এর আওতায় এ সেতুটি নির্মানের ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও ঢাকার সাথে নড়াইল, যশোর ও বেনাপোলের সড়ক যোগাযোগ সংক্ষিপ্ত ও সহজতর হবে। সেতুটি নির্মান বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে ২০৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
এর ফলে বেনাপোলের সাথে সংক্ষিপ্ত এ সড়ক পথে আর কোন ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা থাকবেনা। এমনকি দেশের প্রধান স্থল বন্দর বেনাপোলের সাথে বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের সড়ক পথে দুরত্ব ৫০ কিলোমিটার থেকে দেড়শ কিলোমিটার পর্যন্ত হ্রাস পাবে। ঢাকাÑমাওয়া মহাসড়ক সহ পদ্মা সেতুর ব্যবহারও বৃদ্ধি পাবে। উপরন্তু ঢাকা-মানিকগঞ্জ-আরিচা মহাসড়কের ওপর যানবাহনের চাপ যথেষ্ট হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম। ৭.৬২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক সহ ৫৯০ মিটার দীর্ঘ কালনা সেতু নির্মানে জাপান উন্নয়ন তহবিল-জাইকা সহজ শর্তে ঋন দিচ্ছে ৭৫৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল-এর ২০৬ কোটি টাকায় ভুমি অধিগ্রহন ও প্রশাসনিক ব্যয় সহ সেতুটির মধ্যবর্তি অংশে ১৫০ মিটার দীর্ঘ ‘নিয়েলসান লোস আর্থ টাইপ স্টিল গার্ডার’এর সরঞ্জামসমুহ আমদানী শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধ করা হচ্ছে।
মধুমতি নদীর বিগত ৫০ বছরের সর্বোচ্চ জোয়ার থেকে ৭.৬২ মিটার উচ্চতায় নির্মানাধীন এ সেতুটির উভয় প্রান্তে সাড়ে ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক সহ প্রয়োজনীয় নদী শাসনও প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ সংক্রান্ত প্রকল্প-প্রস্তাবনা ‘ডিপিপি’ একনেক-এর সভায় অনুমোদন লাভ করে ২০১৬ সালে।
দেশের প্রথম ৬ লেনের এ সেতুটির চার লেনে ভারি থেকে মাঝারি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সেতুটির উভয় পাশে ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহন চলাচলে ১টি করে ‘স্লো মুভিং ভেহিকেল লেন’ নির্মিত হবে। মূল সেতুটি ‘প্রী-স্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডার’ প্রযুক্তিতে নির্মিত হলেও মাঝের ১৫০ মিটার দৈর্ঘের মূল স্প্যানটি নির্মিত হবে ‘নিয়েলসান লোস আর্থ টাইপ স্টিল গার্ডার টাইপ’এ। সেতুর এই অংশটি ইস্পাতে নির্মিত হচ্ছে জাপানে। সেখান থেকে তা বিযুক্ত অবস্থায় সাগর পথে চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দর হয়ে নৌপথেই মধুমতি নদী দিয়ে কালনায় সেতু এলাকায় পৌছবে আগামী আগষ্টের মধ্যে। এরপরে বড় ধরনের ক্রেনের সাহায্যে দেড়শ মিটার দীর্ঘ সেতুর ঐ অংশটি নির্মানাধীন পিয়ারের ওপর তুলে সংযূক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীগন।
জাপানের ‘টেককেন-এএমএল-ওয়াইডিসি জেভি’ নামের নির্মান প্রতিষ্ঠান সেতুটির নির্মান কাজ আগামী বছরের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। ১২টি পিয়ার-এ ১৩টি স্প্যানের ওপর নির্মানাধীন এ সেতুটির এবাটমেন্ট ছাড়াও সংযোগ সড়কে একাধীক কালভার্ট ও আন্ডারপাস নির্মান করা হচ্ছে। জাপান ও যুক্তরাষ্টের ‘ওসিজিগসি-পাডেকো’ সেতুটি নির্মানের পরামর্শকের দায়িত্বে রয়েছে। সড়ক অধিদপ্তরের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ইতোমধ্যে কালনা সেতুর ভৌত অবকাঠামো নির্মান কাজ প্রায় ২০ভাগ শেষ হয়েছে। নির্মান প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেতুটির নির্মান কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। তবে অপ্রত্যাশিত কোন কারনে বিলম্ব হলেও ২০২১-এর ডিসেম্বরের মধ্যে কালনা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন ক্রস বর্ডার প্রজেক্ট-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক।
তবে কালনা সেতু নির্মানের পাশাপাশি ভাংগা থেকে ভাটিয়াপাড়া-কালনা-নড়াইলÑযশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়কটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৪ লেনে উন্নীত করার তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবাহল মহল। এ ব্যপারে জানতে চাইলে প্রকল্প ব্যবস্থাপক জানান, এলক্ষে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক-এর আর্থিক সহায়তায় সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সহ বিস্তারিত নকশা প্রনয়ন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে বিশাল ব্যয়বহুল এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখনো দাতা চুড়ান্ত না হলেও ভারতীয় ‘লাইন অব ক্রেডিট’এর আওতায় তা বাস্তবায়নের লক্ষে ডিপিপি প্রস্তুতির কাজও শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ভাংগা-কালনা-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করনে সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় চেষ্টা করছে বলেও জানিয়েছে সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT