মাল্টা চাষে ঝুঁকছে চাষীরা মাল্টা চাষে ঝুঁকছে চাষীরা - ajkerparibartan.com
মাল্টা চাষে ঝুঁকছে চাষীরা

2:58 pm , September 25, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মাল্টা চাষে দিনে দিনে আগ্রহী হচ্ছে বরিশালের চাষীরা। দেশী মাল্টায় লোভনীয় লাভ হওয়ায় উজিরপুর ও বাবুগঞ্জে বিশ মুক্ত রসালো ও স্বাদ যুক্ত মাল্টা বাগান করছেন অনেকেই। প্রচুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ রসালো ফল হচ্ছে মাল্টা। যে ফলটি এক সময় বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ হলেও তা আর পাহাড়েই সীমাবদ্ধ নয়। বরিশালের সমতল ভূমিতে মাল্টার চাষ করে ইতোমধ্যে সফলতা পেতে শুরু করেছেন কৃষকরা। রোগ-বালাই না থাকায় এবং লাভজনক বেশী এই মাল্টা চাষে। চায়না থেকে আমদানীকৃত মাল্টায় ফরমালিন ও ক্যামিকেল থাকায় দেশীয় মাল্টা ক্রয়ের জন্য প্রতিদিন ভীড় জমায় খুচরা ও পাইকারী ক্রেতারা।
উজিরপুর উপজেলার দক্ষিন শিকারপুর গ্রামের মৃত দিপক কুমার ব্যানার্জীর ছেলে শ্যামল ব্যানার্জী(৪০) ছোট বেলা থেকেই কৃষি কাজের উপরে বেশি ঝোক ছিল। তিনি শাক সবজি চাষ, আমের বাগান, মাছের ঘের, গবাদী পশুর খামার করে এবার ৫০ শতাংশ জমির উপরে মাল্টা চাষ করে তার ভাগ্যের চাকা ঘুুরিয়ে দিয়েছেন। ৩ বছর বয়সি প্রতিটি গাছে ২শত থেকে আড়াই শতটি ফল ধরেছে। শতাধিক বারিমাল্টা-১ প্রজাতীর গাছে ৬০ থেকে ৭০ মন ফলন হওয়ার সম্বাবনা রয়েছে। প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন শ্যামল ব্যানার্জী। শুধু শ্যামল ব্যানার্জীই নয় উপজেলা প্রত্যন্ত অঞ্চল সাতলা, হারতা, ওটরা, জল্লা, বড়াকোঠা, বামরাইল, শিকারপুর, শোলক ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এভাবেই চাষীরা মাল্টা চাষের বাগান করেছে। বড়াকোঠা ইউনিয়নের ডাবেরকূলে মোহাম্মদ আলী ডাকুয়ার মাল্টা বাগান, শিকারপুর ইউনিয়নের বরতা গ্রামের ইউপি সদস্য জুবায়ের মিয়ার রয়েছে বৃহৎ মাল্টা বাগান। ক্রেতারা কালারফুল মাল্টার ক্রয়ে অভ্যস্ত হওয়ায় কৃষক শ্যামল ব্যানার্জী এবছর মাল্টার কালারফুল করার জন্য ফরমালিনের বিকল্প আমদানীকৃত পলিব্যাগ দিয়ে মাল্টা মুরিয়ে দেয়। ১৫/২০ দিনের মধ্যে ব্যাগ খোলার পর মাল্টার কালার সবুজ থেকে হলদে আকার ধারন করে। মাল্টা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন তালুকদার জানান, প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ রসালো মাল্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা মাল্টা চাষে ঝুকে পড়ছে। এটি সহজেই পচনশীল নয়। কলমের মাল্টা গাছে ১৫ থেকে ২০ বছর সহজেই ফলন দিতে পারে। কৃষকদের মধ্যে শ্যামল ব্যানার্জী একজন সফল কৃষক। বাংলাদেশ দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের প্রকল্পের আওতায় এবং এ.সি.বি.পি প্রকল্প ও রাজস্ব খাতে প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৪০/৫০টি মাল্টা বাগান স্থাপন করা হয়েছে।
একইভাবে মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলার খারপুরা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহিম সরদার। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০১৩ সালে আবদুর রহিম সিদ্ধান্ত নেন মাল্টা বাগান করবেন। আট শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক ৫০টি মাল্টার চারা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সংগ্রহ করে ২০১৩ সালে রোপণ করেন। দুই বছরের মাথায় মুকুল আসে আশানুরূপ ফল আসে। প্রাথমিকভাবে মাল্টা চাষে সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে ১৫ শতাংশ জমিতে শতাধিক বারি-১ জাতের মাল্টার চারা রোপণ করে চাষ শুরু করেন তিনি। ইতোমধ্যে মাল্টা বিক্রি করে ভালো লাভ পেয়েছেন। বর্তমানে আবদুর রহিম সরদারের বাগানে শতাধিক গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে মাল্টা।
আবদুর রহিম জানান, মাল্টা গাছ রোপণের দুই বছরের মাথায় ফল পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ১০০-১২০টি গাছ লাগানো যায়। এক ফুট বাই এক ফুট গর্ত করে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে ১০ দিন ফেলে রেখে গাছ রোপণ করতে হয়। প্রতিটি চারা গাছ ১২০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ বছর বয়সী প্রতিটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৩শ-৪শটি মাল্টা পাওয়া যায়। অক্টোবর-নভেম্বরে ফল সংগ্রহ করা হয়। বাবুগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম বলেন, আমি রহিম সরদারের বাগান দেখেছি, তাকে কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। মাল্টা অর্থকরী ফসল। এটি সুস্বাদু ফল। এটি চাষে এলাকার পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT