নগরীর অধিকাংশ ক্লাব ফাঁকা নগরীর অধিকাংশ ক্লাব ফাঁকা - ajkerparibartan.com
নগরীর অধিকাংশ ক্লাব ফাঁকা

2:53 pm , September 25, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পুলিশের অভিযান টের পেয়ে সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে নগরীর ক্লাব গুলো। প্রায় প্রতিটি ক্লাবের প্রধান ফটকেই ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে বড় বড় তালা। ফলে যেখানে গভীর রাতেও বসতো মাদক ও জুয়ার আসর, এখন সেখানে দিনেও মিলছে না মানুষের দেখা। অনেকটা ছাড়াবাড়িতে পরিনত হয়েছে ক্লাব নামের জুয়ার আসরগুলো। জানাগেছে, সম্প্রতি ঢাকায় বিভিন্ন ক্লাবের আড়ালে চলা জুয়ার আসরে হানা দেয় র‌্যাব। সেই সাথে বরিশাল নগরীর জুয়ার আসর গুলোতেও অভিযান শুরু করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। হঠাৎ করে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর নূরিয়া স্কুলে অভিযান করে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। এসময় সেখান থেকে জুয়া খেলার লক্ষাধিক টাকাসহ আটক করা হয় যুবলীগ নেতাসহ ৯ জনকে।
এছাড়া পরদিন ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে হঠাৎ করেই নগরীর নাজিরের ‘নবজাগরণ ক্লাবে’ অভিযান করে কোতয়ালী পুলিশ। কোতয়ালী পুলিশের পর পর দুটি অভিযানের কারনে নড়েচড়ে বসে নগরীর অন্যান্য ক্লাবের পরিচালকগন। পুলিশের ভয়ে শূণ্য হতে থাকে ক্লাবগুলো। এমনকি শেষ পর্যন্ত তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয় অধিকাংশ ক্লাবে। তবে হঠাৎ করেই ক্লাব গুলো বন্ধ রাখা ও তালা ঝুলিয়ে দেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহের তীর আরো তীক্ষ্ম হয়েছে। ‘জুয়া বা অনৈতিক কর্মকান্ড না হলে ক্লাব গুলো হঠাৎ করেই বন্ধ রাখা হতো না’ এমন মন্তব্য তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ‘মহানগরীতে বেশ কয়েকটি ক্লাব রয়েছে। যেখানে প্রতিনিয়ম জুয়ার আসর বসছে। সেখানে মাদক সেবন এমনকি মাদক ব্যবসার অভিযোগও দীর্ঘ দিনের। যার মধ্যে নগরীর সদর রোডের মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব, কালুশাহ সড়ক রহিম সেবা সংঘ, নজরুল পাঠাগার ও ক্লাব, পুলিশ লাইন রোডের আমবাগান ক্লাব’, ভাটিখানা বাজার সংলগ্ন বাবুল স্মৃতি সংঘ ও পাঠাগার, কালিজিরা বাজারের মধ্যে থাকা আওয়ামী লীগ নেতার নিয়ন্ত্রিত একটি ক্লাব ও নগরীর জেলখানার মোড় এলাকার ফ্রেন্সড ক্লাব অন্যতম।এরই বাইরে নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য আড়ৎ, চাঁদমারী বিটিসিএল (টিএন্ডটি) শ্রমিক লীগ ক্লাব, তার পাশেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রবিন মিয়ার ঠিকাদারী অফিসের আড়ালে জুয়ার আসর রয়েছে। যেটাকে স্থানীয়রা ‘রবিনহুট মোনাজাত ক্লাব’ নামে আখ্যায়িত করেছে।
এছাড়াও রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকার রূপাতলী হোটেল, ১ তলা লঞ্চ ঘাট, চাঁদমারী ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল সংলগ্ন গোলাম মাওলাদার ময়দার মিলের পেছনে, কেডিসি বালুর মাঠ বস্তির জালাল এর বাসা, প্যারারা রোড ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল, কাশিপুর ট্রাক টার্মিনাল, গড়িয়ারপাড় ট্রাক শ্রমিক কার্যালয়, নগরীর সদর রোডের আবাসিক হোটেল আলী ইন্টারন্যাশনাল, পলাশপুর ব্রিজের নীচে, নগরীর বান্দ রোডস্থ বরফকল (শিশু পার্ক) সংলগ্নে মানবাধিকার সংগঠনের সাইনবোর্ড টানানো একটি কক্ষ, শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টারের পরিত্যক্ত কক্ষ, কাউনিয়া বিসিক এবং কাউনিয়া বাসের হাট সংলগ্ন ১ ও ২ নং ওয়ার্ডের নাম দিয়ে চলা অপর একটি ক্লাব এবং নতুন বাজার কাউন্সিলর কার্যালয় সংলগ্ন দ্বিতীয় তলার ছাদসহ নগর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে জুয়ার আসর বসছে। যেখানে প্রতিদিন এবং রাতে রাতে তাসের মাধ্যমে ‘রামি, পোস, নাইন কার্ড এবং কেরামসহ বিভিন্নভাবে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা হতো।
কিন্তু হঠাত করেই গত দু’দিন ধরে ক্লাব গুলোর সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। সরেজমিনে গিয়ে প্রায় প্রতিটি ক্লাবের গেটেই তালা ঝুলানো দেখাগেছে। বিশেষ করে নগরীর কালুশাহ সড়কের ‘রহিম সেবা সংঘ, বাংলাবাজার নজরুল পাঠাগার ও ক্লাব, নগরীর সদর রোডস্থ মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব, ভাটিখানা বাজার সংলগ্ন ক্লাবটি বন্ধ দেখা গেছে। ক্লাবগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে কোন মানুষের আনাগোনাও দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা জানায়, দুটি ক্লাবে অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ক্লাবগুলো রহস্যজনক কারনে বন্ধ রাখা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় যেসব নেতারা ক্লাবটিতে আড্ডা দিতেন তারাও কেউ আসছে না। ফলে ক্লাবগুলো নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রহস্য আরো বেড়ে গেছে।
যদিও বরিশাল মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা এবং নগর বিশেষ শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘পুলিশের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু পূর্বে যেভাবে ক্লাবগুলোতে মানুষের আনাগোনা ছিলো তাদের এখন আর দেখা যাচ্ছে না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহের তালিকার শীর্ষে থাকা ক্লাবগুলোতে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তার পরেও এসব ক্লাবের প্রতি পুলিশের নজরদারী অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সূত্রগুলো।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT