বহু বিতর্কের নায়ক ওসি শিশিরের বিরুদ্ধে মামলা বহু বিতর্কের নায়ক ওসি শিশিরের বিরুদ্ধে মামলা - ajkerparibartan.com
বহু বিতর্কের নায়ক ওসি শিশিরের বিরুদ্ধে মামলা

3:01 pm , September 19, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ অবশেষে থানার মধ্যে সাবেক পুলিশ সদস্য’র স্ত্রীকে মারধর সহ শীরিকভাবে নির্যাতনের ঘটনায় উজিরপুর মডেল থানার বিতর্কিত ওসি শিশির কুমার পাল ও কনস্টেবল জাহিদুল ইসলাম (কং নং-৯৬৮) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্যাতনের শিকার নারী রাশিদা বেগম বাদী হয়ে বরিশাল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক সানা মো. মাহরুফ হোসাইন মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ সুপারকে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অপর অভিযুক্ত হলো- একই থানার কনস্টেবল মো. জাহিদুল ইসলাম। কং নং- ৯৬৮। এদিকে উজিরপুর থানার ওসি শিশিরের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডে ক্ষুন্ন হচ্ছে গোটা পুলিশ বিভাগের ভাবমুর্তি। এর পরেও কোন এক অদৃশ্য ইশারায় তার বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে না বিভাগীয় বা আইনগত কোন ব্যবস্থা। সম্প্রতি সাবেক পুলিশ সদস্য’র স্ত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াসার। গত মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও তা করেনি কমিটি। যদিও ঘটনার সাথে জড়িত কনস্টেবলকে প্রাথমিকভাবে ক্লোজড করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন ঘটনার মূল হোতা বিতর্কিত ওসি শিশির পাল। তাকে স্ব-পদে রেখে তদন্ত কার্যক্রম বহাল রাখার সুযোগে অভিযোগকারী এবং মামলার বাদীকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শণের অভিযোগ রয়েছে ওসি’র বিরুদ্ধে। বাদী পক্ষের মামলা পরিচালনাকারি আইনজীবী আজাদ রহমান জানান, ‘অভিযুক্তরা পুলিশ বিভাগে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন সময় মানুষকে হয়রানী করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় ওসি শিশির কুমার পালের নির্দেশে কনস্টেবল জাহিদুল ইসলাম তার ঘরের মালামাল জব্দ করে।পরবর্তী একই তারিখে মালামাল ফেরত দেয়ার জন্য তাকে থানায় ডেকে নেয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাশিদা বেগম থানা সংলগ্ন বাচ্চুর দোকানে চা পান করতে যায়। এসময় কনস্টেবল জাহিদুল সেখানে এসে তার নাম জিজ্ঞাসা করলে বলতে বিলম্ব হওয়ায় তাকে গালাগাল করে। এর প্রতিবাদ করায় জাহিদুল দোকানের দেয়ালের সাথে চেপে ধরে তাকে দুই গালে ও ঠোটে সিগারেটের আগুনের ছ্যাকা দেয়।এ ঘটনায় ওসি শিশির কুমার পালের কাছে বিচার দিতে গেলে তিনি বিচার না করে ডিআইজি’র কাছে যেতে বলে। এসময় রাশিদা বেগম তাকে বিচার করার জন্য বললে ওসি তার চুলের মুঠি ধরে গোল ঘরের পাশে নিয়ে যায় এবং মারধর করে।এক পর্যায় তাকে উঠিয়ে আছাড় দিলে রাশিদা বেগম সেখানে মল ত্যাগ করেন। তখন রাশিদা বেগমের ছেলে এসে প্রতিবাদ করলে তাকে থাপ্পর দেয়া সহ সাদা কাগজে সাক্ষর নেয়। এছাড়াও রাশিদা বেগমের সাথে থাকা ১৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায়। পাশাপাশি এই ঘটনায় মামলা করলে তাদের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে বলে হুমকি দেয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।এর আগে ওই নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় ডিআইজি এবং পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত কনস্টেবল জাহিদুল ইসলামকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ‘শুধুমাত্র সাবেক পুলিশ সদস্য’র স্ত্রীকে থানার মধ্যে নির্যাতনের ঘটনাই নয়, এমন আরো অনেক ঘটনারই অনুঘটক ওসি শিশির পাল। যিনি পুলিশের উর্দিপড়ে ক্ষমতার অপব্যহার করে সাধারণ মানুষকে হয়রানী এবং মামলায় ফাঁসিয়ে রাতারাতি অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তবে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা সহ আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে যে অর্পিত দায়িত্ব তার উপর রয়েছে তা পালনে বার বারই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন ওসি শিশির পাল।
জানাগেছে, ২০১৮ সালের ২ মার্চ উজিরপুর মডেল থানায় যোগদান করেন ওসি শিশির কুমার পাল। এর পর থেকেই একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন শিশির কুমার পাল। পাশাপাশি তার দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই এলাকার আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে শুরু করে। বেড়ে যায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতী ও মাদক ব্যবসা সহ বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ড। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল উজিরপুর থানা পরিনত হয়েছে দালালদের নিরাপদ অভয়ারন্যে। যা নিয়ে গত ৯ মে উপজেলা প্রশাসনের আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সমন্বয় সভায় ওসি’র বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়েন প্রায় সকলেই।
এলাকার ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘ওসি শিশির পালের অনৈতিক আচরণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না উপজেলার সম্মানিত ব্যক্তিরাও। তাছাড়া কিছুদিন পূর্বে এক সাংবাদিককে নির্যাতন করেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হন শিশির পাল।
জানাগেছে, ওসি শিশির থানায় গোদানের পর পরই এ এস আই আমিনুল মাদক মামলায় আসামী ছেড়ে দেয়ার নাম করে ঘুষ নিতে গিয়ে ক্লোজড হন। ওই ঘটনার পেছনে শিশিরের পরোক্ষ যোগসূত্র থাকলেও নেয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা। তাছাড়া মামলায় জামিনে থাকা উপজেলার জয়শ্রী গ্রামের শাহ আলম মৃধা নামের এক ব্যক্তিকে রিকল দেখানো সত্যেও গ্রেফতার করান ওসি। একই ভাবে জামিনে থাকা বামরাইলের এক যুবক এবং মুন্ডুপাশা গ্রামের সোহরাবের পুত্র হাসানকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠান তিনি। যদিও আদালত তাদের দু’জনকেই মুক্তি দেয়।
এছাড়াও মাদক সহ আটক আসামীকে ছেড়ে দেয়া, জল্লা ইউপি চেয়াম্যান নান্টু হত্যাকান্ডের পর মুসলমানদের বসত বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ওসি শিশিরের ব্যর্থতার পাশাপাশি ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছে। কেননা নান্টু হত্যা কান্ডের পরদিন তার সামনেই বাহেরঘাট এলাকায় প্রবাসী খোকন সরদারের বহুতল ভবন ও হালিম সিকদারের পুত্র সাইদুল সিকদার দোকান ঘরটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ধরনের আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে ওসি শিশির পালের বিরুদ্ধে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শুধু উজিরপুরেই নয়, পূর্বের কর্মস্থলেও শিশির পালের বিরুদ্ধে এ ধরনের বিতর্কিত নানা কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্রভাবশালী এই ওসি পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) এর দায়িত্ব থাকাবস্থায় নিয়ন্ত্রণ করেন নাজিরপুর থানা। একাই তিনি দুটি কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করেন।
ওসি শিশির পালের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সরকারি মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা তা রিসিভ করেননি। তবে অভিযুক্ত উজিরপুর থানার ওসি শিশির কুমার পাল অভিযোগ অস্বীকার করলেও মামলার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT