দক্ষিনাঞ্চলের সেতু ও মহাসড়ক উন্নয়নে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দক্ষিনাঞ্চলের সেতু ও মহাসড়ক উন্নয়নে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প - ajkerparibartan.com
দক্ষিনাঞ্চলের সেতু ও মহাসড়ক উন্নয়নে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

3:08 pm , September 4, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ এককালের নদ-নদী নির্ভর যোগাযোগ ব্যাবস্থার দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক পরিবহন উন্নয়নে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে উঠছে। ফরিদপুর বরিশাল কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক নির্মানে ভুমি অধিগ্রহন এবং বরিশাল খুলনা ও বরিশাল পটুয়াখালী কুয়াকাটা মহাসড়কে দুটি সেতু সহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক সহ জেলা সংযোগ সড়কের মান উন্নয়ন কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পায়রা ও বেকুঠিয়া সেতু নির্মান সহ এসব মহাসড়ক সমুহের উন্নয়ন সম্পন্ন হলে দক্ষিনাঞ্চলের জাতীয় মহাসড়কে ফেরি নির্ভরতা হ্রাস পাবে। কুয়েত উন্নয়ন তহবিলে ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে বরিশাল পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ৪ লেনের সেতুটির নির্মানকাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৬৫ভাগ স¤পন্ন হয়েছে। ২০২০-এর ডিসেম্বরের মধ্যে ‘পায়রা সেতু’টি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার লক্ষে কাজ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে চীনা নির্মান প্রতিষ্ঠান। পায়রা সেতু নির্মিত হলে পটুয়াখালী এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর সহ কুয়াকাটার সাথে সারা দেশের ফেরি বিহীন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বেশীরভাগ এলাকা থেকে কুয়াকাটার সড়ক পথে দুরত্ব কক্সবাজারের চেয়ে অর্ধেকে নেমে আসবে। অপরদিকে চীনা অনুদানে চট্টগ্রাম বরিশাল ঝালকাঠী পিরোজপুর বাগেরহাট মোংলা খুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে কঁচা নদীর ওপর প্রায় ৯শ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ চীন ৮ম মৈত্রী সেতু’র নির্মান কাজও এগিয়ে চলেছে। ১ হাজার ৪৯৫ মিটার দীর্ঘ এসেতুটি নির্মিত হলে তা চট্টগ্রাম-লক্ষ্মীপুর এবং ভোলার সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ বেনাপোল ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সড়ক যোগাযোগকে সহজতর করবে। চীনা অনুদানে বেকুঠিয়াতে ‘৮ম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেত’ুটির নির্মান কাজ ২০২১-এর জুন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।
অপরদিকে ঐ মহাসড়কেরই ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তি তেতুলিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মানের সম্ভাব্যতা সমিক্ষা ও নকশা প্রনয়ন করছে সেতু কতৃপক্ষ। দাতা পাওয়া গেলে যত দ্রুত সম্ভব এখানে সেতু নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে এ সেতু নির্মানের ঘোষনাও দিয়েছেন। এরফলে চট্টগ্রাম বন্দর সহ ঐ অঞ্চলের সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং বেনাপোল ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সড়কপথে দুরত্ব অর্ধেকেরও বেশী হ্রাস পাবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম   লক্ষ্মীপুর   ভোলা   বরিশাল  মোংলা  খুলনা মহাসড়কটি উন্নয়নের পাশাপাশি ভোলা Ñ লক্ষ্মীপুর ও ভোলা   বরিশালের মধ্যবর্তি ফেরি সার্ভিসের উন্নয়ন সম্ভব হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর যানবাহনের চাপ বহুলাংশে হ্রাস পাবে বলেও আশা করছেন ওয়াকিবাহল মহল।
বরিশাল মহানগরী থেকে লাহারহাট হয়ে ভোলা এবং লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ জাতীয় মহাসড়কটি ৩০ফুট প্রসস্ত করে আরো অধিক ভার বহনক্ষম পর্যায় উন্নীত করনে ৩১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গত এপ্রিলে একনেক-এর অনুমোদন লাভের পরে ইতোমধ্যে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আগামী নভেম্বর থেকে প্রকল্পটির বাস্তব উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু হয়ে ২০২১-এর জুনের মধ্যে শেষ হবে।
এদিকে প্রায় ১২১ কোটি টাকার দেশীয় তহবিলে ফরিদপুরÑবরিশালÑপটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের বরিশাল অংশের ৬০কিলোমিটার মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। প্রকল্পের আওতায় সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় ইতোমধ্যে পটুয়াখালীÑবরিশালÑফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কের লেবুখালী থেকে বরিশাল মহানগরী হয়ে ভুরঘাটা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার মহাসড়ক ১৮ফুট থেকে ২৪ফুট প্রসস্ততায় উন্নীত করেছে। ঐ মহাসড়কেরই বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু ও মেজর জলিল সেতুর ১২কিলোমিটার সংযোগ সড়কের বিদ্যমান কার্পেটিং-এর ওপর ‘ডিবিএসটি’ করে তা আরো টেকসই করা হয়েছে। এছাড়াও দুটি কালভার্টের নির্মান কাজও শেষ হয়েছে।
অপরদিকে ‘আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ প্রসস্ততায় উন্নীতকরন প্রকল্প’এর আওতায় বরিশাল-ঝালকাঠীÑপিরোজপুরÑখুলনা মহাসড়কের বিভিন্ন অংশের উন্নয়ন কাজও এগিয়ে চলছে। একই সাথে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে মঠবাড়িয়া হয়ে বরগুনার পাথরঘাটা পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটিকে ১২ফুট থেকে ১৮ফুট প্রসস্ত করে বহন ক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এসব খাতে ব্যয়ে হচ্ছে প্রায় দুশ কোটি টাকা।
বরিশাল মহানগরীর রূপাতলী মিনিবাস টার্মিনাল থেকে ঝালকাঠী জেলা সীমান্ত পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার অংশের প্রসস্ততা বৃদ্ধি সহ মান উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। বরিশাল সীমান্ত থেকে ঝালকাঠী শহরের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়ন ও প্রসস্ততা ২৪ ফুটে উন্নীতকরনে ব্যয় হচ্ছে আরো ২৬ কোটি টাকা। ঝালকাঠী জিরো পয়েন্ট থেকে রাজাপুর হয়ে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার অংশ মহাসড়কটির উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে ৫৭কোটি টাকা।
অপরদিকে ভান্ডারিয়া থেকে চরখালী ফেরি ঘাট হয়ে পিরোজপুর শহরের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়নেও প্রায় ৬৮কোটি টাকা ব্যায় হচ্ছে। এসব সড়কসমুহের উন্নয়ন শেষ হলে সাগর পাড়ের পাথরঘাটা থেকে বরিশালÑমাওয়া হয়ে রাজধানী ঢাকা পৌছতে সময় লাগবে মাত্র ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা। তবে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে এসময় আরো অন্তত দু ঘন্টা হ্রাস পাবে। আগামী ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে এসব সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হবে বলে বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বাবু সুসীল কুমার সাহা জানিয়েছেন।
এদিকে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যায়ে বরিশালÑগোপালগঞ্জÑখুলনা মহাসড়কের আগৈলঝাড়া বাইপাস সহ এর সংযোগ সড়কের প্রসস্ত করন এবং মান উন্নয়নের কাজও শেষ করেছে বরিশাল সড়ক বিভাগ। এরফলে বরিশাল থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে কোন ধরনের ফেরি পারাপার ছাড়াই খুলনা বিভাগীয় সদর সহ সন্নিহিত এলাকার সড়ক যোগাযোগ আরো সহজতর হয়েছে।
তবে ফরিদপুর-বরিশালÑকুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরনে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে ভ’মি অধিগ্রহন শুরু হলেও মূল প্রকল্প বাস্তবায়ন এখনো কিছুটা অন্ধকারে। প্রকল্পটির জন্য এখনো দাতা যোগাড় হয়নি। এশিয় উন্নয়ন বাংক এ লক্ষে ঋণ প্রদানের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বরিশাল মহানগরীর অভ্যন্তর দিয়ে এ চারলেন মহাসড়ক নির্মান পরিকল্পনায় অনেক মূলবান সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা ভেঙে ফেলতে হবে বিধায় বিষয়টি নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরী হতে যাচ্ছে। সাধারন মানুষ প্রস্তাবিত বরিশাল বাইপাস নির্মানের মাধমে এ বিপত্তি এড়াবার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিনাঞ্চল এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর আর কুয়াকাটার সড়ক পরিবহন উন্নয়নে এ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নতি করনের কোন বিকল্প নেই।
সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ৪ লেন মহাসড়ক নির্মানের লক্ষে প্রায় ৩হাজার একর জমি অধিগ্রহনের প্রক্রীয়া শুরু হয়েছে। এ লক্ষে ২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প চুড়ান্ত অনুমোদন শেষে বাস্তবায়নও চলছে। আগামী জুনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহন সম্পন্ন হলে মূল প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া তড়ান্বিত হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক প্রকল্পটি নিয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল।
বরিশালের সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ সহ বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহ জনস্বার্থে এসব সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে এসব উন্নয়ন প্রকল্পই জনস্বার্থ বিঘিœত না করে জনকল্যানে বস্তবায়নেরও তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT