উজিরপুরের এক গ্রামে দু’শতাধিক বাঁশের সাঁকো উজিরপুরের এক গ্রামে দু’শতাধিক বাঁশের সাঁকো - ajkerparibartan.com
উজিরপুরের এক গ্রামে দু’শতাধিক বাঁশের সাঁকো

2:35 pm , September 1, 2019

শামীম আহমেদ ॥ চারিদিকে শুধু খাল ও বিলে ঘেরা। একটি মাত্র রাস্তা। তারমধ্যে ছোট ছোট দ্বীপের মতো গাছগাছালি ঘেরা ঘরবাড়ি। এরই ফাঁক ফোকর দিয়ে ছোট-বড় প্রায় দুই শতাধিক গাছ ও বাঁশের সাঁকো। দুই-একটা স্থায়ী নৌকার ঘাট। অধিকাংশ বাড়ির সামনে বাঁধা রয়েছে ছোট ছোট নৌকা।এই চিত্র বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত বিলাঞ্চল বলেখ্যাত হারতা ইউনিয়নের দক্ষিণ নাথারকান্দি গ্রামের। প্রায় সাত হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের হারতা ইউনিয়নে জনসংখ্যা ২৫ হাজারের অধিক। এরমধ্যে ৬নং ওয়ার্ড দক্ষিণ নাথারকান্দি গ্রামের জনসংখ্যা সাড়ে চার হাজার।ঘণবসতিপূর্ণ এ গ্রামটিতে বছরের অধিকাংশ সময়ই যাতায়াত করতে হয় পানি পেরিয়ে। গ্রামে একটি মাত্র রাস্তা। সেটিও থাকে সব সময় কাঁচা। আর রাস্তাটির এক থেকে দুইশ’ গজ পরপরই ছোট বড় প্রায় দুই শতাধিক রয়েছে ভাঙাচোরা সাঁকো। কোথাও আবার লোহার পাতের ওপর কাঠ ও সুপারি গাছ বিছিয়ে যাতায়াত করছেন ঐ গ্রামবাসী।শুকনো মৌসুমে খাল ও বিলের পানি কিছুটা কমে আসলে চলাচলে অযোগ্য বেহালদশার সাঁকো সংযুক্ত কাঁচা রাস্তা দিয়েই বাধ্য হয়ে যাতায়াত করতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের। বর্ষা মৌসুমে গ্রামটি একটি দ্বীপে রূপ নেয়। চারদিকে পানি আর পানি। তখন যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকলেও নাগরিক সেবা বলতে সবকিছু থেকেই বঞ্চিত রয়েছেন পুরো গ্রামবাসী। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে অদ্যবর্ধি গ্রামটিতে লাগেনি কোন উন্নয়নের ছোঁয়া। ফলে গ্রামবাসীর যাতায়াতের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো আর নৌকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে চলতে হয়।সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার হারতা বাজার সংলগ্ন নৌকা ঘাট (দক্ষিণপাড়) থেকেই অবহেলিত গ্রামটি শুরু। এই ঘাট থেকে কঁচা নদী পাড় হয়ে কিছুদূর এগুলেই বাঁশের সাঁকো শুরু। ছোট ছোট খালের ওপর স্থানীয় বাসিন্দারা যাতায়াতের সুবিধায় নিজেরাই এসব সাঁকো তৈরি করেছেন। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি ও গ্রামের একমাত্র কাঁচা রাস্তায় ওঠার জন্য সাঁকোগুলো তৈরি করা হয়েছে। দক্ষিণ হারতা বাজার থেকে পশ্চিম দিকে এগুলেই বোঝা যায় কতোটা উন্নয়নবঞ্চিত দক্ষিণ উপজেলার নাথারকান্দি গ্রামের বাসিন্দারা।কৃষিনির্ভর সবুজ-শ্যামল পরিবেশের ছোট ছোট খালবেষ্টিত ওই গ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। বছরের এক মৌসুমে বোরো ধান আরেক মৌসুমে বিভিন্ন জাতের সবজির আবাদ করেন ওই এলাকার চাষিরা। বাকি সময় খালে ও বিলে পানি থাকে। তখন মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা।গ্রামের বাসিন্দা দুলাল রায় ও কেশব বিশ্বাসসহ অনেকেই জানান, প্রতিদিনই গ্রামের ওইসব ভাঙা সাঁকো ও সংস্কারবিহীন নামেমাত্র ব্রিজ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা চলাচল করে থাকেন। হারতায় সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। ওই হাটে গ্রামের মানুষ তাদের উৎপাদিত ধান-চাল ও বিভিন্ন কৃষিপণ্য খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ও বর্ষায় নৌকায় পারাপার করে থাকেন। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হয় বলেও তারা উল্লেখ করেন।উক্ত গ্রামের বাসিন্দা হরিপদ বিশ্বাস জানান, যোগাযোগ সমস্যার কারণে তাদের গ্রামের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে আর বর্ষায় নৌকায় করে পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেকেই লেখাপড়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে অদ্যবর্ধি উন্নয়ন বলতে সাবেক সাংসদ এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসের আপ্রান চেষ্ঠায় ওই গ্রামবাসী শুধু বৈদ্যুতিক আলোর সুবিধা দিয়েছেন।দক্ষিণ নাথারকান্দি গ্রামটির যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ বলে উল্লেখ করে হারতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হরেন রায় বলেন, নিজের এলাকার জন্য তেমন কোন কাজ পাইনি। তাই ইচ্ছে থাকা সত্বেও অবহেলিত গ্রামটির উন্নয়নের জন্য কোন কাজ করতে পারছিনা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT