দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য উন্নয়নের আরেক নাম সেরনিয়াবাত পরিবার দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য উন্নয়নের আরেক নাম সেরনিয়াবাত পরিবার - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য উন্নয়নের আরেক নাম সেরনিয়াবাত পরিবার

3:10 pm , August 28, 2019

খান রুবেল ॥ বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য উন্নয়নের আরেক নাম সেরনিয়াবাত পরিবার। স্বাধীনতার পর এই পরিবার থেকেই শুরু হয় দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন। যা বর্তমান সময়ে ধরে রেখেছেন সেরনিয়াবাত পরিবারের উত্তরাধীকারী ও তৃতীয় বংশধর বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের জননন্দিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তবে এর শুরুটা ছিলো সেরনিয়াবাত পরিবারের অন্যতম উত্তরসুরি ও তৎকালিন সময়ের তুখোড় রাজনীতিবিদ শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এর মাধ্যমে। গৌরনদী উপজেলার সেরালে ১৯২১ সালে জন্ম নেয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত তৎকালিন আমলে ভূমি প্রশাসন, ভূমি সংস্কার ও ভূমি রাজস্ব, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও কৃষি মন্ত্রী ছিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীনের পূর্বে ১৯৭০ এর নির্বাচন থেকে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত প্রার্থী ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার থেকে। যার শুরুটাও করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত। তিনি মন্ত্রী থাকাবস্থায় দেশের অন্যান্য উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষক কুলের উন্নয়ন করেন। সে কারনেই কৃষক কুলের নয়ন মনি উপাধী লাভ করেছিলেন ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট শহীদ হওয়া আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। এদিকে রব সেরনিয়াবাত এর মৃত্যুর পরে বরিশালের রাজনীতিতে আবির্ভূত হন তারই জ্যেষ্ঠপুত্র আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। ১৯৯১ সালে প্রথম বরিশাল-১ আসনের এমপি নির্বাচিত হন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে চলা ভাগ্নে আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে রয়েছে অসামান্য অবদান। যার কারণে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এখনো মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। যে কারনে বাবার মত করেই দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক উপাধি পেয়েছেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।
জানাগেছে, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি ৯৬’র এর ক্ষমতা আমলে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ছিলেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ছাড়াও পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পরিবিক্ষণ কমিটির মন্ত্রী পদমর্যাদার আহ্বায়ক। তার আগে মাত্র ২৬ বছর বয়সে বরিশাল পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন হাসানাত আবদুল্লাহ। এছাড়া ৭৪ সালে যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হলে বরিশাল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পালণ করেন তিনি। ৯২ থেকে ৯৮ পর্যন্ত ছিলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক।
দলীয় সূত্র এবং বরিশালের প্রবীন নাগরিকরা জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলে বর্তমানে যেসব উন্নয়ন দৃশ্যমান তার সিংহভাগ এসেছে আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি’র স্বদিচ্ছায়। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষিত বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল আধুনিক নদী বন্দর সহ অসংখ্য সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ’র হাত ধরেই এসেছে।
শুধু তাই নয়, বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলবাসির প্রাণের দাবি একটি স্বতন্ত্র শিশু হাসপাতাল। সেই দাবি পুরণেও পিছ পা হননি ৭৫’র ১৫ই আগস্ট শিশু পুত্র সহ আপনজন হারানো আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি। নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকায় তার প্রচেষ্টাতেই নির্মান হচ্ছে ‘শহীদ সুকান্ত বাবু শিশু হাসপাতাল’। যার নির্মান কাজ শেষে সুবিধা ভোগ করবেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। তাছাড়া রাজনৈতিক শেষ জীবনে গৌরনদীকে জেলায় রূপান্তরের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
এদিকে শুধু উন্নয়নেই নয়, দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কিং মেকার হিসেবে আখ্যা পেয়েছেন ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে মুজিব বাহিনীর প্রধান আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি। ৭৫’র ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর খুনিদের হাত থেকে বাঁচতে ভারতে পালিয়ে থাকতে হয় তাকে। টানা চার বছর পর ৭৯ সালে দেশে ফিরে বরিশাল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন হাসানাত আবদুল্লাহ। পরবর্তী ১৯৭১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম এবং ৯৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। তবে মামলার ঝামেলার কারনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। এর পর ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে পর পর দু’বার এমপি নির্বাচিত হন।
বরিশাল জেলা সহ বিভাগ জুড়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র প্রভাব ইতিপূর্বেও বেশ লক্ষনীয় ছিলো। বর্তমানেও সেই প্রভাব আরো দৃঢ় হয়েছে বলে দাবি দলীয় নেতাদের। উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র এমনকি ইউপি চেয়ারম্যান পদে নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিতে হাসানাত আবদুল্লাহর মতামতকেই গুরুত্ব দিচ্ছে হাই কমান্ড। শুধু তাই নয়, দলীয় কোন্দলে দু-একজন ছাড়া তার মনোনিত সকল প্রার্থীই বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের গৌরব অক্ষুন্ন রাখেন।
অপরদিকে রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিন ভাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ তিনি। যিনি বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের। প্রতিনিধিত্ব করছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে থেকে। দাদা এবং বাবার মত করেই জনগণ ও নগর উন্নয়নের জন্য বিসর্জন দিচ্ছেন নিজের সব শখ-আহ্লাদ। নগর উন্নয়নে রাত-দিন সমান করে দেখছেন তিনি। বরিশাল সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে গত এক বছরে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে এরই মধ্যে আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছেন সাদিক আবদুল্লাহ। অর্জন করেছেন শ্রেষ্ঠত্ব। বিশেষ করে ৫ বছর মেয়াদী রাস্তা ও রাতের বেলা ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে ইতিমধ্যেই নগরবাসীর মন জয় করেছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, এক সময় বরিশাল আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ ছিলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেশছাড়া হন তিনি। সেই সুযোগে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র সেই জায়গাটা দখল করে নেন তারই হাত ধরে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা সাবেক মেয়র শকওত হোসেন হিরন। এমনকি তিনি মেয়র নির্বাচিত এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে একক আধিপত্ত গড়ে তোলেন। সেরনিয়াবাত পরিবারের হাতে গোনা কয়েকজন নেতা-কর্মীরা ছাড়া বাকি সবাই ভোল পাল্টে নোঙর করেন হিরনের ঘাটিতে।
তবে শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুতে নেতৃত্বহীন ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে মহানগর আওয়ামী লীগ। দলে দেখা দেয় নেতৃত্বের চরম সংকট। সেই মুহুর্তে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সেরনিয়াবাত পরিবারের উত্তরসুরি সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লার’র উত্থান ঘটে। তিনি যুক্ত হন মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। কোন পদ পদবী না থাকলেও খুব অল্প সময়েই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন সাদিক আবদুল্লাহ। সেই সাথে সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের অনুসারীদের কাছে টেনে নেন তিনি। এক পর্যায় মহানগর আওয়ামী লীগের আইকন আখ্যা পান ১৫ই আগস্ট ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া দেড় বছরের সেদিনের শিশু সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
এদিকে সাদিকের দক্ষ নেতৃত্বে মুগ্ধ হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। যার ফলে খুব সহজেই পেয়ে যান মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও নৌকার টিকেট পান তিনি। এমনকি তৃনমুল ও নগরবাসির ভালোবাসায় বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
মেয়র হিসেবে গত এক বছরে চমক প্রদক অনেক কাজই করেছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। যার মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় ছিলো নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করতে নগর ভবনকে দুর্নীতি মুক্ত করা। তার দক্ষ নেতৃত্ব এবং পরিচালনার কারনে আজ ঘুরে দাড়িয়েছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির সাথে বেড়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের ভেতন-ভাতা। শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের সাবেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
সম্প্রতি ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য রাতভর নৌ বন্দরে দাড়িয়ে থেকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন এবং যাত্রীদের জন্য ফ্রি-বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করে পুনরায় আলোচনায় উঠে আসেন সাদিক আবদুল্লাহ। তার আগে দেশের ইতিহাসে প্রথম পাঁচ বছরের গ্যারান্টিতে আধুনিক মেশিনে সড়ক উন্নয়ন এবং প্রথমবারের মত থ্রিডি জেব্রা ক্রসিং স্থাপন করে পত্রিকার শিরোনামও হয়েছেন একাধিকবার। বর্তমানে নগর উন্নয়নে রয়েছে তার মহা পরিকল্পনা।
অপরদিকে আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র সহধর্মীনি শাহানারা আব্দুল্লাহ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য। বরিশালের রাজনীতি, সামাজিক ও সংস্কৃতির উন্নয়নে অবদান রয়েছে। নারী নেতৃত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন তিনি। তাছাড়া সেরনিয়াবাত পরিবারের উত্তরাধীকার আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র মেঝ ছেলে মঈন আবদুল্লাহ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ছোট ছেলে সেরনিয়াবাত আশিক আবদুল্লাহ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। বরিশাল, গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার উন্নয়নের অংশিদার তারাও।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT