3:16 pm , August 26, 2019
খান রুবেল ॥ একটি মাত্র থানা নিয়ে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর যাত্রা শুরু হয় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের। ২০০৭ সালে ৪ জুলাই কোতয়ালী থানাকে মডেল থানা হিসেবে ঘোষনা করেন সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ। পরবর্তী ২০১০ সালের ১ জুন কোতয়ালী থানার জনবল বিভক্ত করে শুরু হয় আরো তিনটি প্রশাসনিক থানার কার্যক্রম। এরপর বিগত ৯ বছরে নতুন করে পুনর্গঠন হয়নি বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায়। বর্তমানে বিদ্যমান চারটি থানায় বৃদ্ধি পায়নি জনবলও। একটি থানার জনবল নিয়েই চলছে চার থানার কার্যক্রম। ফলে নগরবাসির নিরাপত্তা প্রশ্নে হিমশিম খেতে হচ্ছে নগর পুলিশকে। যদিও ৮২ বর্গ কিলোমিটার মেট্রোপলিটন এলাকায় বিদ্যমান চারটি থানার বাইরে আরো চারটি নতুন থানা এবং তিনটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের উদ্যোগ রয়েছে নগর পুলিশের। তাই প্রতি বছরই এর প্রস্তাবনাও পাঠানো হচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তরে। কিন্তু সেই প্রস্তাবনা আদৌ বাস্তবে রূপ নেয়নি। প্রস্তাবিত চারটি থানা হলো- কাশিপুর থানা, রূপাতলী থানা, চরমোনাই থানা এবং বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় থানা। এর বাইরে সদর উপজেলার সায়েস্তাবাদ, চন্দ্রমোহন ও রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নে আরো তিনটি পুলিশ ফাঁড়ির প্রস্তাবনা রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে বরিশাল মেট্রোলিটন এলাকায় থানার সংখ্যা ৮টি ও ফাঁড়ি হবে ৮টি। এতে করে মহানগরীর জনগণের নিরাপত্তা এবং আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা আরো জোরদার হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) এর যাত্রা শুরুতে বরিশালের জনসংখ্যা ছিলো ১ লাখ ৬৫ হাজারের মত। তখন বরিশাল নগরীর আয়তন ছিলো ৪০ দশমিক ৩৩ বর্গ কিলোমিটার। সে অবস্থাতেই ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর নগরীর বান্দ রোডস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অভ্যন্তরে মেট্রোপলিটন পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের উদ্বোধন করা হয়।এরপর ২০১০ সালে মহানগর পুলিশ আইন অনুযায়ী প্রায় ৮ লাখ জনসংখ্যার ৮২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যে কোতয়ালী মডেল থানার বাইরে আরো তিনটি থানার কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে কোতয়ালী ও বাবুগঞ্জ থানার কিছু অংশ নিয়ে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ভাড়া বাড়িতে এয়ারপোর্ট থানা, নগরীর উত্তর অংশ এবং সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন নিয়ে আমানতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে কাউনিয়া এবং সদর সদর উপজেলার সাহেবের হাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি পরিত্যক্ত ভবনে শুরু হয় বন্দর থানার কার্যক্রম।এদিকে বর্তমানে বরিশাল সিটি এলাকার ৫৭ বর্গ কিলোমিটার সহ মোট ৮২ বর্গ কিলোমিটার মহানগরী এলাকায় সর্বশেষ আদম শুমারী অনুযায়ী লোকসংখ্যা দাড়িয়েছে সাড়ে ১১ লাখের বেশি। কিন্তু বাড়েনি চার থানার জনবল ও সুযোগ সুবিধা। পুনর্গঠন হয়নি মেট্রোপলিটন এলাকা। এখনো বাড়িতেই তিন থানার কার্যক্রম এবং এক থানার জনবল দিয়েই চলছে নগরবাসির নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম।বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের থানার অধীনে অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে। যেখানে যাওয়া আসায় অনেক সময় লেগে যায়। তার মধ্যে জনবল সংকটতো রয়েছে। তার মধ্যে আবার জনসংখাও বেড়েছে দ্বিগুন। এ কারনে কাউনিয়া থানা এলাকায় আরো একটি থানা হলে ভালো হয়। অপরদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে, মেট্রোপলিটন পুলিশের যাত্রা শুরু থেকে এই থানায় যে জনবল ছিলো থেকে একটু বৃদ্ধি পায়নি। বরং এখানকার জনবল নিয়ে ওই তিনটি থানার কার্যক্রম শুরু করে। ফলে কোতয়ালী থানার জনবল পূর্বের তুলনায় অনেকাংশেই কমে গেছে।তারা বলেন, কোতয়ালী’র বাইরে তিনটি থানা হয়েছে ঠিকই কিন্তু দূর্ভোগ কমেনি। কেননা কোতয়ালী থানার অধিনে রয়েছে চরমোনাই ইউনিয়ন। যেখানে যেতে নদী পথ পাড়ি দিতে হয়। কোন একটি ঘটনা ঘটলে সেখানে পৌছাতে পৌছতে আলামতও নষ্ট হয়ে যায়। তাই কোতয়ালী পুলিশের জনবল বৃদ্ধি’র পাশাপাশি চরমোনাইতে স্বতন্ত্র থানা’র প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।এদিকে মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, বছর কয়েক পূর্বে মহানগরীর জনগণের নিরাপত্তার কথা ভেবে আরো চারটি থানা ও ৩টি ফাঁড়ি’র প্রস্তাবনা পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সে প্রেরণ করা হয়। যার মধ্যে এয়ারপোর্ট থানার এলাকা বিভক্ত করে কাশিপুর থানা, কোতয়ালী মডেল থানা বিভক্ত করে রূপাতলী থানা, বন্দর থানা ও কোতয়ালী থানা বিভক্ত করে চরমোনাই থানা এবং বন্দর থানা বিভক্ত করে বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় থানা।এ চারটি নতুন থানার প্রস্তাবনার সাথে থানার সীমানা, প্রস্তাবিত থাকার অধিক্ষেত্র তালিকাভুক্ত করে তা পুলিশ সদর দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এক হাজার ২১৩ জন জনবল হলেই চারটি থানা’র কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব বলে সূত্রটি জানিয়েছে।এ প্রসঙ্গে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘চারটি থানা এবং ৩টি ফাঁড়ি’র প্রস্তাবনা হেড কোয়ার্টারে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে চাইলেই প্রস্তাবনা বাস্তবে রূপ নেয়া সম্ভব নয়। আমরা হেড কোয়ার্টারে প্রেরণ করেছি। সেখান থেকে ফাইল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় সহ অন্যান্য দপ্তরে যাবে। এরপর অনুমোদন। সে ক্ষেত্রে কিছু সময়তো লাগবেই। তবে নতুন চারটি থানা এবং তিনটি ফাঁড়ির বিষয়ে আমরা আশাবাদী বলে জানান পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান।