3:21 pm , August 20, 2019
খান রুবেল ॥ ভাঙনের সুর ধরেছে বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনার মাত্র কদিনেই বিভিক্ত হয়ে পড়েছে নেতৃবৃন্দ। কমিটি নিয়ে বানিজ্য, বিতর্কিতদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা ও সুপারফাইভ নেতাদের মূল্যায়ন না করায় ফাটল শুরু হয়েছে। এর ফলে সুপারফাইভ নেতা ও তাদের অনুসারীদের দেখা মেলেনি সংগঠনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী বা সাংগঠনিক কার্যক্রমে। তাছাড়া শিঘ্রই মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ দেয়ার কথাও জানিয়েছেন মূল্যায়ন না পাওয়া নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, বছরখানেক পূর্বে বরিশাল জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সুপার ফাইভ কমিটি ঘোষনা করে কেন্দ্র থেকে। এরপর স্বেচ্ছাসেবক দলের দুটি ইউনিটই দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন ঐক্যবদ্ধভাবে। কিন্তু বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর কমিটির ঐক্যে ফাটল ধরেছে। যার মূলে সদ্য ঘোষিত মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।স্বেচ্ছাসেবক দল জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুজ্জামান বলেন, সভাপতি-সম্পাদক ছাড়াও সুপার ফাইভ কমিটিতে আমি সহ কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহিদুর রহমান সমির ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খান মো. আনোয়ার হোসেন রয়েছেন। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটিতে আমাদের মূল্যায়ন করেনি। আমরা রাজনীতি করছি। আমাদেরও কর্মী রয়েছে। রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, সভাপতি মাহাবুবুর রহমান পিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মঞ্জু তাদের মত করে কমিটির তালিকা করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছে। তালিকা জমা দেয়ার পূর্বে একবারের জন্যও আমাদের দেখানো হয়নি। পূর্বে কমিটি’র তালিকা দেখতে চাইলে দেখছি-দেখাচ্ছি এবং আজ না কাল বলে ঘুরিয়েছে। সর্বশেষ তারা কেন্দ্র থেকে নিজেদের মনগড়া পকেট কমিটি অনুমোদন করে এনেছে।অভিযোগ প্রসঙ্গে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান পিন্টুর বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মঞ্জু বলেন, সুপারফাইভ কমিটির যে তিন নেতা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচিতে আসতে পারেননি তাদের মধ্যে একজন অসুস্থ এবং দু’জন বরিশালের বাইরে ছিলো। যে কারনে তার আসতে পারেনি। এখন তারা অবমূল্যায়নের অভিযোগ তুলে থাকলে সেটা তাদের নিজস্ব কথা।
তিনি বলেন, নতুন কমিটিতে কোন বিতর্কিত বা সমাজ বিরোধী লোক নেই। কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। যা রাজনৈতিক মামলা। এর বাইরে মাদক, নারী সংঘটিত বা চাঁদাবাজী সহ অন্য কোন মামলা নেই। তারা দলের জন্য পরিশ্রম এবং ত্যাগ স্বীকার করেছে। এজন্যই তাদের কমিটিতে পদ দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে। যদি কেউ সভাপতি-সম্পাদকের কাজে খুশি না হন তাহলে অভিযোগ করতেই পারে। তবে তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন এটা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত। স্বেচ্ছাসেবক দলের কোন ফাটল নেই। নেতাকর্মীরা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ আছে।
সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, গত ৭ আগস্ট ঘোষনা হওয়া ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটির সহ-সভাপতি এবং যুগ্ম সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই বিতর্কিত এবং সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। অথচ আমাদের ত্যাগী এবং নির্বাচিত নেতা-কর্মীদের নামে মাত্র পদ দেয়া হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বেচ্ছাসেবক দলের ফায়দা লোটার জন্যই এমন কমিটি করেছেন। এর প্রতিবাদ সরুপ আমরা স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করিনি। এর আগে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর প্রস্তুতি সভাতেও যাননি মূল্যায়ন না হওয়া তিন নেতা ও তাদের অনুসারীরা।
তারা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সংগঠনে অমূল্যায়ন হওয়া নেতৃবৃন্দ আলোচনা করছেন। খুব শিঘ্রই বিষয়টি কেন্দ্রে দেখা করবেন তারা। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি নিয়ে হওয়া অপরাজনীতির বিষয়ে অভিযোগ করবেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। তারা যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সর্বোচ্চ বানিজ্য করেছেন। টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রি করেছেন। বিশেষ করে কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। তিনি ইতিপূর্বে আহ্বায়ক কমিটিতে থাকাকালে উপজেলার নেতা-কর্মীদের পদ দেয়ার কথা বলে বিভিন্নভাবে ফায়দা লোটেন। ঠিক সেভাবে করেই সাধারণ সম্পাদকের সাথে আতাত করে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলে পদ বানিজ্য ও কমিটিকে বিতর্কিত করে তুলেছেন তিনি।