কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে চক্রান্তে গরিব ও এতিমদের প্রায় ২২কোটি টাকা লোপাট কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে চক্রান্তে গরিব ও এতিমদের প্রায় ২২কোটি টাকা লোপাট - ajkerparibartan.com
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে চক্রান্তে গরিব ও এতিমদের প্রায় ২২কোটি টাকা লোপাট

3:17 pm , August 20, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কোরবানির পশুর চামড়ার বিনিময়ে এবার দক্ষিণাঞ্চলে অর্ধ লক্ষাধীক এতিমখানা, মাদ্রাসা সংযুক্ত লিল্লাহ বোর্ডিং এবং কয়েক লাখ ছিন্নমুল ও অভাবী মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে একটি ব্যবসায়ী চক্র। বিষয়টি নিয়ে সরকার সহ প্রশাসনের উদাসীনতায় হতবাক এসব সুবিধা বঞ্চিত মানুষ ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। এবারের ঈদ উল আযহায় দক্ষিনাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকাতেই কেউ পশুর চামড়া বিক্রী করতে পারেননি। এমনকি বেশীরভাগ চামড়াই অনেক অনুরোধ করে ক্রেতা সহ কিছু মাদ্রাসায় বিনামূল্যে দিয়েছেন কোরবানি দাতাগন। অন্যান্য বছর তা মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো প্রতিকিমূল্যে চামড়া কিনে পাইকার বা আড়তদারদের কাছে বিক্রী করে অর্জিত মুনাফা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা করত। কোরবানি দাতাগনও চামড়ার বিক্রীত অর্থ একাধীক এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং ছাড়াও গরীব মিসকিনদের মধ্যে বন্টন করতেন ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী।
কিন্তু এবার চামড়ার আরতদারগন কারসাজি করে ঈদের দিন মাঠ পর্যায় থেকে কোথাও নামমাত্র মূল্যে আবার কোথাও বিনামূল্যে চামড়া সংগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ এতিমখানা সহ সুবিধা বঞ্চিত মহলের। বেশীরভাগ গরুর চামড়া সহ খাসির চামড়া বিনামূল্যেই দিয়ে দিতে বাধ্য হতয়েছেন কোরবানি দাতাগন। যার পেছনে ট্যানারী মালিকদের প্রচ্ছন্ন ভূমিকা ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কোন প্রাকতথ্য প্রশাসনের কাছে ছিলনা বলেও জানা গেছে। ফলে সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিষয়ে সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেনি। তা করলে হয়তো এ বিপর্য়য় অনেকটাই এড়ানো যেত বলে দাবী করেছেন ওয়াকিবহাল মহল।
সদ্য সমাপ্ত ঈদ উল আযহায় দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলাতে ৪ লাখ ৩৪ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে বলে জানিয়েছে বরিশাল বিভাগীয় প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর। যা ছিল আশাতিত এবং গত বছরের চেয়ে অন্তত ১৫% বেশী। কোরবানিকৃত পশুর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ষাড়, ২৩ হাজার গরু ও বকনা এবং ১ হাজার মহিষ ছাড়াও প্রায় ১লাখ ১৭ হাজার ছাগল ও খাসি সহ প্রায় ১২শ ভেড়া ও অন্যান্য পশু কোরবানি হয়েছে। প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের মতে, দক্ষিণাঞ্চলেও বছর জুড়ে যত পশু জবাই হয়, তার অর্ধেকই হয়ে থাকে ঈদ উল আযহার সময়ে। অধিদপ্তরের মতে দেশ প্রতিবছর সোয়া দু’কোটি পশু জবাই হয়ে থাকে। এবছর তা আরো কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এবারের ঈদ উল আযহার সময়ও দক্ষিণাঞ্চলে যে প্রায় ৪.৩৪ লাখ বিভিন্ন ধরনের পশু কোরবানি হয়েছে, তার চামড়ার নুন্যতম গড়মূল্য ৫শ টাকা হিসেব করলেও এ অঞ্চলের এতিমখানা, মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং সহ গরিব ও দুঃস্থ্য মানুষ অন্তত ২২কোটি টাকা পেতে পারতেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ গরিব, মিছকিন ও এতিমদের মুখের সে গ্রাস কেড়ে নিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংগুলো সরাবছরই কোরবানির সময়ে পশুর চমড়া বা এর বিক্রিত অর্থের দানের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
কিন্তু এবার এতিমÑগরীব আর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সে অর্থের প্রায় পুরোটাই চলে যাচ্ছে চামড়ার আড়তদার থেকে ট্যানারী মালিকদের পকেটে। ঈদ উল আযহার দিন থেকে নানামুখি ফন্দি ফিকির করে কোরবানি দাতা এবং মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলোর কাছ থেকে পশুর চামড়া সংগ্রহ করে তারা এখন ট্যানারি মালিকদের কাছে সরকর নির্ধারিত দামেই বিক্রীর সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে গত কয়েকদিনের ঘটনাকে একাধীক মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালকদের তরফ থেকে, “ট্যানারী মালিক ও আড়তদারদের ‘সংঘবদ্ধ চক্রান্ত” বলে দাবী করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ‘ নানা পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরী করে কোরবানির দিন কাঁচা চামড়ার বেশীরভাগই বিনামূল্যে ও কিছু পানির দরে সংগ্রহ করে এখন মুনাফা লোটার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে সংঘবদ্ধ চক্রটি’।
দক্ষিণাঞ্চলের চামড়ার সবচেয়ে বড় আড়ত বরিশালে। দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলা থেকে বেশীরভাগ চামড়া এখানে নিয়ে আসেন মাঠ পর্যায়ের ক্রেতারা। এখান থেকে তা ঢাকার বড় আড়তে যায়। লবন দেয়া এসব চামড়ার একটি অংশ কিছু ট্যানারীতেও সরাসরি যাচ্ছে। আবার অনেক জেলা থেকে লবন দেয়া চামড়া সরাসরি ঢাকার আড়তে যাচ্ছ বলেও জানা গেছে। এবার দক্ষিণাঞ্চলের কোন আড়তদারই বানিজ্যিক ব্যাংক থেকে কোন ঋন পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। সেক্ষেত্রে পুজির সংকটের কথা জানিয়েও তারা চামড়া না কেনার কথা জানিয়েছেন। তবে কোরবানি দাতাদের কাছ থেকে বিনামূল্যে চামড়া সংগ্রহের পরে এখন মাঠ পর্যয়ের ক্রেতাদের কাছ থেকে চামড়া কেনার অর্থ কিভাবে যোগান হচ্ছে, তার উত্তরে আড়তদারদের দাবী, তারা ‘বাকিতে চামড়া কিনছেন’। তবে মাঠ ক্রেতাদের দাবী পুরোটাই তারা বাকিতে বিক্রী করছেন না। লগ্নিকৃত পুজির টাকাটা তারা আড়তদারদের কাছ থেকে পাচ্ছেন’।
এদিকে গতবছর যেসব মাদ্রাসা ও এতিমখানা স্থানীয় আড়ত সহ পাইকারদের কাছে চামড়া বিক্রী করেছিলেন, তার অর্থ এক বছর পার হলেও এখনো পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছ থেকে ঋন নিয়ে ও তহবিলের টাকা খরচ করে মাদ্রাসাগুলো ঐ চামড়া সংগ্রহ করে আড়তে দিয়েছিল। একবছর পরেও লাভ দুরের কথা, চামড়া কেনার আসল টাকাও তুলতে পারেননি একাধীক মাদ্রাসা ও এতিমখানা কতৃপক্ষ। উপরন্তু সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষও এবার কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রীর টাকা থেকে কোন দান গ্রহন করতে পারেননি এসব চক্রান্তের কারনে। যা ছিল ইসলামের বিধান অনুযায়ী তাদের হক।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT