আজ কলংকিত ১৫ আগস্ট আজ কলংকিত ১৫ আগস্ট - ajkerparibartan.com
আজ কলংকিত ১৫ আগস্ট

2:44 pm , August 14, 2019

রুবেল খান ॥ আজ ১৫ই আগস্ট ইতিহাসের সেই কলংকিত দিন। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট কালো রাতে বিপদগামী কতিপয় সেনাদের হামলায় কেঁপে উঠেছিলো ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর এবং শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত’র ২৭নং মিন্টো রোডের বাড়ি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ পরিবারের ২৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বিদেশে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর কণ্যা বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সেই ভয়াল কালো রাতে ঘাতকের গুলিতে শহীদ হওয়া বঙ্গবন্ধু’র পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা শহীদ হয়েছেন তারা হলেন, বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, ছোট ভাই শেখ আবু নাসের, পুত্র বধু সুলতানা কামাল খুকু, পারভীন জামাল রোজী, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বোনের ছেলে শেখ ফজলুল হক মনি, বেগম আরজু মনি, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত’র ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতী সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, তার ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্ণেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও মন্ত্রী আমীর হোসেন আমু’র খালাতো ভাই আবদুন নঈম খান রিন্টু। সেদিন ঘাতকদের বুলেট থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত’র পুত্র আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি এবং তার স্ত্রী শাহান আরা বেগম। শাহান আরা বেগম জ্যেষ্ঠপুত্রকে হারিয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও বুলেটের স্পিলিন্টারের আঘাত আজও তাকে মনে করে দিচ্ছে ১৫ই আগস্টের সেই কাল রাত্রির ঘটনা। দুঃসহ যন্ত্রনা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সন্তান ও স্বজন হারানোর শোকে কাতর এই মা। প্রতি বছরের ন্যায় আজ ১৫ই আগস্ট ইতিহাসের সেই কলংকিত এবং বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী উদযাপানে সরকারি, বেসরকারি এবং দলীয় ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে জানা যায়, শেখ মুজিবুর রহমান এর হত্যাকান্ড ছিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে চক্রান্তপূর্ণভাবে সপরিবারে হত্যার একটি ঘটনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিপদগামী দল শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে গিয়ে একটি অভ্যূত্থান সংঘটিত করে তাকে হত্যা করে। এমনকি পরবর্তীতে খন্দকার মোশতাক আহমেদকে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। এদিকে দীর্ঘ বছর পরে বঙ্গবন্ধু সহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকান্ডের ঘটনায় ১২ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী ৫ জনের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হলেও এখন দেশের বাইরে পালিয়ে রয়েছে ৬ জন। ফলে তাদের রায় আজো কার্যকর করা যায়নি। জানাগেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ২১ বছর পরে ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বা ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। ১৯৯৬ সালের ২ আক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মামলা দায়ের করেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারক মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২৫ দিন শুনানী শেষে অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ নিশ্চিত করেন। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বাদী-বিবাদীর আপিলের প্রেক্ষিতে চার দফায় রায় প্রকাশ হয়। সর্বশেষ আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ৫ আক্টোবর থেকে টানা ২৯ কর্মদিবস শুনানি করার পর ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরা হলেন- লে. কর্ণেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্ণেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিরারি) ও লে. কর্ণেল একেএম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার)। এদিকে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছয়জন বিদেশে পালিয়েরয়েছে। এরা হলো- কণেল খন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্ণেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্ণেল এএম রাশেদ চৌধুরী, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, লে. কর্ণেল এসএইচ নূর চৌধুরী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আব্দুল মাজেদ। অপরদিকে ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়। তাই প্রতি বছর ১৫ই আগস্টের এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে। তাছাড়া পুরো আগস্ট মাসকে শোকের মাস হিসেবে পালন হচ্ছে। প্রতি বছরের ন্যায় আজ ১৫ই আগস্ট যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি উদযাপন করা হবে। এ লক্ষে সরকারি, বেসরকারি এবং দলীয় ভাবে নেয়া হয়েছে নানান কর্মসূচি। বঙ্গবন্ধু’র শাহাদাৎ বার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে কর্মসূচি রয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষের। আজ সকল সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কালোপতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা দিয়েছেন তারা। অবশ্য আগস্ট মাস জুড়েই সরকারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোকের প্রতীক কালো কাপুর বুকে ধারণ করে চলছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তাবক অর্পন ছাড়াও শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা এবং আলোচনা সভা রয়েছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সাজানো হয়েছে শোকের আবরণে। বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। দলীয় কার্যালয়ে কালোপতাকা উত্তোলন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতীকৃতিতে পুষ্পস্তাবক অর্পন সহ বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন তারা। তাছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী বিসিসি’র ৩০টি ওয়ার্ডে নির্মান করা হয়েছে তোড়ন। যা মুড়ে দেয়া হয়েছে শোকের প্রতীক কালো কাপড় দিয়ে। প্রতিটি তোড়নেই শোভা পেয়েছে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সুকান্ত বাবু সহ ১৫ই আগস্টে শহীদ হওয়া ২৬ জনের ছবি। এবারের শোক দিবসে ব্যতিক্রম ধর্মী আয়োজন করা হয়েছে নগরীর নাজিরের পুল এলাকায়। সেখানে নির্মান করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির সেই ৩২ নম্বর বাড়িটি’র প্রতীক। যুবলীগ নেতা এ্যাড. রফিকুল ইসলাম খোকন’র উদ্যোগে প্রতীকি ৩২ নম্বর বাড়িটি তৈরী করা হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT