3:08 pm , August 10, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ইতিহাসের সর্বাধিক সংখ্যক যানবাহন পারাপারের পরেও দেশের প্রধান ফেরি সেক্টরগুলোতে দেড় সহস্রাধিক যানবাহন আটকা পড়ে আছে। হাজার হাজার যাত্রীর দূর্ভোগের সীমা নেই। ঢাকা থেকে পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া ঘাটে এসে যাত্রীবাহী যানবাহনগুলোকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পদ্মার প্রবল স্রোতে মাওয়া সেক্টরে ‘মিডিয়াম টাইপ’ ফেরিগুলো লৌহজং চ্যানেল দিয়ে রাতেরবেলা পাড়ি দিতে পাড়ছে না। পদ্মার পাটুরিয়া ও মাওয়া সেক্টরেই উজানের অত্যাধিক বালু মিশ্রিত ঘোলা পানির প্রবল স্রোতে ফেরি চলাচল যেমনি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, তেমনি তা ঝুকিপূর্ণ।
বিআইডব্লিউটিসি’র ৫০টি ফেরির মধ্যে ৪৯টি যুদ্ধকালীন তৎপড়তায় দিনরাত যানবাহন পারপার করছে আরিচা, মাওয়া, শরিয়তপুর, ভোলা এবং লাহারহাট সেক্টরে। এরপরেও যানবাহনের কমতি নেই। নিম্নচাপজনিত দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মাওয়া, চাঁদপুরÑশরিয়তপুর এবং ভোলাÑলক্ষ্মীপুর সেক্টরে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় যে যানজটের সৃষ্টি হয়, তার রেশ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
শণিবার সকাল ৬টার পূর্ববর্তি ২৪ঘন্টায় দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক ১৭হাজার ১২৭টি যানবাহন পারপার করেছে বিআইডব্লিউটিসি’র ফেরি বহর। কিন্তু এরপরেও অপেক্ষমান ছিল দেড় সহস্রাধিক যানবাহন। এসময়ে আরিচা সেক্টরের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ২০টি ফেরির মাধ্যমে দশ সহস্রাধিক যানবাহন পারাপারের পরেও অপেক্ষমান ছিল আরে ৫শতাধিক। অপরদিকে মাওয়া সেক্টরের শিমুলিয়াÑকাঠালবাড়ি এবং মঙ্গলমাঝীর ঘাট রুটেও ১৮টির মধ্যে ১৭টি ফেরি আরো ১০হাজার ৮৩টি যানবাহন পারাপার করলেও শিমুলিয়া ঘাটে ৫শতাধিক পারাপারের অপেক্ষায় আছে। মাওয়া সেক্টরে ‘ডাম্ব ফেরি-রনীগঞ্জ’ বন্ধ রয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে। শণিবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতেও ফেরি ঘাট গুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন অব্যাহত ছিল।
চাঁদপুরÑশরিয়তপুর সেক্টরে ৫টি কে-টাইপ ফেরি ২৪ঘন্টায় ৫৫৯টি যানবাহন পারাপারের পরে শণিবার সকালে অপেক্ষায় ছিল আরো সোয়া ২শ যানবাহন। অপরদিকে চট্টগ্রামের সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের ভোলাÑলক্ষ্মীপুর সেক্টরে ২৬৭টি যানবাহন পারাপার হলেও অপেক্ষায় ছিল ২৪২টি। ২৮কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্বাধিক দুরত্বের এ ফেরি সেক্টরে মাত্র ৩টি কে-টাইপ ফেরি চলাচল করায় পারাপারকৃত যানবাহনের প্রায় সমসংখ্যকই প্রতিনিয়ত অপেক্ষায় থাকছে। উপরন্তু এ ফেরি সেক্টরের লক্ষ্মীপুর প্রান্তের ‘রহমতখালী চ্যানেল’র মুখে নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল জোয়ারের ওপর নির্ভরশীল।
ঐ একই মহাসড়কের ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তি লাহারহাট-ভেদুরিয়া সেক্টরে শনিবার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ঘন্টায় প্রায় ৪শ যানবাহন পারপার হলেও অপেক্ষমান ছিল আরো প্রায় সোয়াশ । এ সেক্টরে ৪টি ‘ইউটিলিটি টাইপÑ১’ ফেরি যানবাহন পারাপার করছে।
এদিকে ঈদ উল আজহাকে সামনে রেখে দেশের সব ফেরি সেক্টরেই সোমবার সকাল পর্যন্ত যানবাহনের চাপ থাকবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যনÑঅতিরিক্ত সচিব প্রনয় কান্তি বিশ্বাস। তবে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংস্থা যুদ্ধকালীন তৎপড়তায় কাজ করছে বলে জানান তিনি। তার মতে, বহরের ৫০টি ফেরিই সচল রাখার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি। তবে যাত্রীবাহী সেক্টরে নৌযান সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি জানান, নির্মানাধীন দুটি নতুন নৌযান গত জুনে সরবারহের কথা থাকলেও নির্মাতা ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু ‘পিএস মাহসুদ’ জাহাজটি বিকল হয়ে পড়ায় সংকট কিছুটা বেড়েছে। ‘পিএস অস্ট্রিচ’ জাহাজটি যাত্রী পরিবহন থেকে সরিয়ে আগের একজন মন্ত্রী বিনা দরপত্রে বেসরকারী খাতে ইজারা দেয়ার কথাও স্বীকার করেন তিনি।