সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে দিশেহারা বানারীপাড়াবাসী সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে দিশেহারা বানারীপাড়াবাসী - ajkerparibartan.com
সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে দিশেহারা বানারীপাড়াবাসী

2:46 pm , August 4, 2019

সাঈদ পান্থ ॥ বরিশাল জেলার মধ্যে ভয়াল এক নদীর নাম সন্ধ্যা। যা জেলার বানারীপাড়া উপজেলার পাশ থেকে বয়ে গেছে। এই নদীর ভাঙনের ফলে ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে এই উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। হাজারো পরিবার সহায়-সম্বল, ভিটামাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে। সব কিছু হারিয়ে অনেকেই এখন বেছে নিয়েছেন যাযাবর জীবন। সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বানারীপাড়ার জিরারকাঠি, হক সাহেবের হাট, মসজিদবাড়ি, চাউলাকাঠি, কালীরবাজার, নলেশ্রী, দিদিহার, উত্তরকূল, বাংলাবাজার, শিয়ালকাঠি, দান্ডয়াট, উত্তর নাজিরপুর, দক্ষিণ নাজিরপর, জম্বদ্বীপ, ব্রাহ্মণকাঠি, কাজলাহারসহ বানারীপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজার, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি বানারীপাড়া উপজেলার মানচিত্রেও ছোট হয়ে গেছে। সর্বোশেষ গত শনিবার বানারীপাড়া উপজেলার ফেরিঘাটের পশ্চিম তীরে ভেঙ্গে গেছে। অব্যাহত ভাবে এই ভাঙন থাকলে পুরো ফেরীঘাট ভেঙে যাবে। এদিকে বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই উপজেলার বিভিন্ন বালু মহলের ইজারা আহ্বান করা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে বানারীপাড়া জুড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, একদিকে নদীর তান্ডব ও অপরদিকে লোকাল ড্রেজার দিয়ে নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন আরও তীব্র রূপ ধারণ করেছে। যদিও বর্তমানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের চাপে বন্ধ আছে অবৈধ বালু উত্তোলন। কিন্তু তার মধ্যে বরিশাল জেলা প্রশাসন থেকে দেয়া হচ্ছে বালু মহল ইজারা। যদিও চলতি বছর ৬ জুন বৃহস্পতিবার বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ভাঙন পরিদর্শনে এসে বর্তমান সরকারের পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এমনকি এসময় তিনি সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের এলাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তা রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া আশ্বাস দেন। কিন্তু মন্ত্রীর এ কথার পরেও সম্প্রতি জনগনের স্বার্থকে উপেক্ষা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এই উপজেলায় বিভিন্ন বালু মহলের দরপত্রের আহবান করা হয়েছে। খবরটি উপজেলা বাসীর মাঝে ছড়িয়ে পড়লে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বানারীপাড়াবাসী। তারা অবিলম্বে এই ইজারা বাতিলের দাবী জানিয়েছেন। নতুবা তারা আন্দোলনের যাবে বলে হুশিয়ারী দিয়েছে।
এর আগে স্থানীয় এমপি শাহে আলম, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি রুবিনা মীরা এই উপজেলার ভাঙন প্রতিরোধের জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়। এদিকে এলাকাবাসীর পক্ষে স্বোচ্চার নদীর ভাঙন রোধে এবং বালু উত্তোলন বন্ধে মাঠে নেমেছেন বানারীপাড়া উপজেলা পরিষদ’র সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শরীফ উদ্দিন আহমেদ কিসলু। তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে চলতি বছর এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখ জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত দিয়েছি। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন সাড়া না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছি এবং এ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়েছি। এখন দেখা যাক কি হয়।’ নাম প্রকাশ না করা শর্তে অপর এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে আমরা স্বোচ্চার। কিন্তু তারপরও জেলা প্রশাসন থেকে যে ইজারা দেয়া হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে নামবো। উপজেলাবাসীকে এক করে আমরা এই আন্দোলন করবো।’
স্থানীরা জানান, সম্প্র্রতি বালু উত্তোলনের ফলে সৈয়দকাঠি, চাখার, বাইশারী ও বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাইশারী ইউনিয়নের নাটুয়ারপাড় মহিলা মাদ্রাসা, উত্তর নাজিরপুর গ্রামের ধানের হাট, শিয়ালকাঠি ফেরিঘাট, সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের মসজিদবাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নলেশ্রী, দিদিহার এলাকা, চাখারের কালীরবাজার, সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের গোয়াইলবাড়ি, খেজুরবাড়ি, খোদাবখশা এবং সদর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকাঠি ও কাজলাহার গ্রামের বিস্তীর্ণ জনপদ, শিক্ষা, ধর্মীয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদী গ্রাস করে ফেলেছে। হুমকির মুখে রয়েছে খেজুরবাড়ি আবাসন, বাংলাবাজার ও উত্তর নাজিরপুর গুচ্ছগ্রাম। এদিকে অব্যাহত ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে নদীর গতিপথ। সন্ধ্যা নদীর ভাঙন রোধে সব সরকারের আমলেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এলাকাবাসী বালুমহাল ইজারা বাতিল করে নদীর ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ সাদীদ বলেন, ‘এখননো উপজেলার কোন বালু মহল ইজারা দেয়া হয়নি। তবে এই ইজারা জেলা থেকে দেয়া হয়। প্রক্রিয়া চলছে। যদিও বালুমহল ইজারার সময় শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া বালু মহল নিয়ে কয়েকটি মামলা ছিলো তাও শেষ হয়ে গেছে।’ এব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ‘সরকার যে বৈধভাবে বালুমহল ইজারা দেয়া সেটাই শ্রেয়। অনেক অসাধু ব্যক্তিরা মামলা করে আটকে রেখে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে। কিন্তু সঠিকভাবে ও বৈধপথে বালু উত্তোলন করলে ভাঙন হয় না। বরং নদীর গতিপথ সঠিক থাকে। তিনি বলেন, ‘আমরা যে বালুমহলের ইজারা দিয়েছি, এবং যারা ইজারা পাবে তাদেরকে সঠিক নিয়মে বালু উত্তোলনের চেস্টা চালাবো। এতে করে নদী আর ভাঙবে না।’

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT