3:21 pm , July 19, 2019
সাঈদ পান্থ ॥ বাবুগঞ্জ উপজেলার ৩ নদীর ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে বাবুগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সন্ধ্যা, সুগন্ধা নদী আর আড়িয়াল খাঁ নদীর তান্ডপে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এবারেও এর ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়নি। এরইমধ্যে নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিলীন হতে শুরু করেছে। যার কারণে নদী তীরের মানুষদের প্রতিনিয়তই নিদ্রাবিহীন রাত কাটাতে হচ্ছে ভাঙন আতঙ্কে। নদীভাঙনে বিলীন হয়ে এরইমধ্যে বাবুগঞ্জের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে সৈয়দ মোশারফ-রশিদা একাডেমি, আবুল কালাম কলেজ সংযোগ সড়কসহ বেশ কিছু স্থাপনা, বসতবাড়ি, আবাদি জমি, দোকান ঘরসহ কয়েক একর ফসলি জমি ও ফলদ বৃক্ষ।
সর্বোশেষ ১৬ জুলাই রাতে সুগন্ধ্যা নদীর আকস্মিক ভাঙনে একই রাতে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে ৫ টি বসতঘর। উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভূতেরদিয়া এলাকার এ নদীতে ভাঙন শুরু হয়। এতে ঐই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা হাজী আঃ খালেক মোঃ মিজানুর রহমান, মোঃ সেলিম ফকির, সেকান্দার মুন্সী, আলমগীর ফকিরে বসত ঘর সুগন্ধ্যার করালগ্রাসে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি যে বর্তমানে ঐ গ্রামের বড় একটি অংশ নদী ভাঙণের ঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে ওই এলাকার দক্ষিন ভূতেরদিয়া তাবলিকুল ইফতেদায়ী মাদ্রসা, একটি মসজিদ, মোঃ আমীর হোসের ফকির ও মোঃ সেকান্দার মুন্সীর বসতবাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, হঠাৎ রাতের আঁধারে ভাঙন শুরু হলে তারা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। রাতের আঁধারেই তাদের চোখের সামনে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায় ৫টি বসতঘর। এরপর থেকে আশপাশের সবাই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নূরে আলম বেপারী বলেন ‘ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনরোধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই বাবুগঞ্জের সন্ধ্যা এবং সুগন্ধা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তবে রাতে হঠাৎ করেই বাবুগঞ্জের সুগন্ধ্যা নদীর দক্ষিন ভূতের দিয়া পয়েন্টের ভাঙন তীব্রতর বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (দোয়ারিকা) সেতু, মহিষাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজ, জামেনা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পূর্ব ক্ষুদ্রকাঠি গ্রাম, চরসাধুকাঠি মাদ্রাসা, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বাবুগঞ্জ বাজার, মীররগঞ্জ ফেরিঘাট ও বাজারসহ বেশকিছু সরকারি-বেসরকারিসহ বহু স্থাপনা। পরে ১৭ জুলাই ভোরে শুরু হওয়া ভাঙনে উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভূতের দিয়া গ্রামের কয়েকটি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বিলীন হয়েছে বেশ কিছু স্থাপনা, দোকান ঘরসহ ফলদ বৃক্ষ। জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের সঙ্গে অমাবস্যায় সৃষ্ট জোয়ার এবং উত্তরবঙ্গ থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে নদীতে ভাটার সময় স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যায়। এ থেকেই দেখা দেয় যতো বিপত্তি। অপরদিকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে চলতি মৌসুমের প্রথমদিকে উপজেলার কয়েকটি বসতঘরসহ আবাদি জমি গ্রাস করে নিয়েছে রাক্ষুসে সুগন্ধা নদী। স্থানীয়দের দাবি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দ্রুত ভাঙন কবলিত এলাকা প্রতিরোধে কাজ শুরু না করলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বাবুগঞ্জ উপজেলার নদী তীরবর্তী অসংখ্য গ্রাম। এদিকে বাবুগঞ্জ উপজেলার সন্ধ্যা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা ১৮ জুলাই বিকেলে পরিদর্শন করেছেন বরিশালের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম। পাশাপাশি তিনি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে খাবার সামগ্রিক বিতরণ করেন এবং তাদের সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম, বরিশাল-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ গোলাম কিবরিয়া টিপুসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে।
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম বলেন, ‘সুগন্ধা নদীর ভাঙনের কবল থেকে সেতুসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় নদীর ৪০০ মিটার এলাকায় ৬০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলতে ৩ কোটি টাকার একটি অস্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর বাস্তবায়নে আছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এখানকার ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’