দক্ষিণাঞ্চলে ভঙ্গুর ফেরি চলাচল ব্যবস্থা দূর্ভোগে যাত্রী ও যানবাহন চালকরা দক্ষিণাঞ্চলে ভঙ্গুর ফেরি চলাচল ব্যবস্থা দূর্ভোগে যাত্রী ও যানবাহন চালকরা - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চলে ভঙ্গুর ফেরি চলাচল ব্যবস্থা দূর্ভোগে যাত্রী ও যানবাহন চালকরা

2:58 pm , December 31, 2019

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রয়োজনীয় সচল ফেরির অভাবে, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের অর্ধেক সময় কাটে ফেরিঘাটে’ এ প্রবাদ এখনো বাস্তব। ফলে নদ-নদী নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় দূর্ভোগ জনগনের পিছু ছাড়ছে না। যদিও গত দুই দশকে ঢাকাÑফরিদপুরÑবরিশাল-পটুয়াখালীÑকুয়াকাটা এবং বরিশালÑপিরোজপুরÑখুলনা মহাসড়কের ১০টি ফেরি পয়েন্টে ছোটÑবড় সেতু নির্মিত হয়েছে, কিন্তু এর পরেও ওইসব মহাসড়ক ছাড়াও বরিশালÑভোলা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নদ-নদী পারাপারের ফেরি সার্ভিস যথেষ্ট বিড়ম্বনায় রেখেছে এ অঞ্চলের মানুষকে। পণ্য পরিবহনেও সময় ও ব্যয় বাড়ছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বিআইডব্লিউটিসি দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সংযোগ সড়কের ১৮টি পয়েন্টে ফেরি সার্ভিস। এসব বেশীরভাগেই দীর্ঘদিনের পুরনো ও মেয়াদত্তীর্ণ ফেরি চলছে সম্পূর্ণ জোড়াতালি দিয়ে। সড়ক অধিদপ্তর ১৭টি পয়েন্টে যে ২৬টি ফেরি পরিচালন করছে তার মধ্যে মাত্র ২টি নতুন। অবশিষ্টগুলো পাঁচ বছর থেকে ২০ বছরের পুরনো। অনেক ফেরিতে দুই যুগেরও বেশী পুরনো ইঞ্জিন রয়েছে সম্পূর্ণ জোড়াতালি দিয়ে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিসি ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তী লাহারহাটÑভেদুরিয়া সেক্টরে ৪টি ইউটিলিটি ফেরি পরিচালন করলেও তার ৩টি এক যুগেরও বেশী পুরনো। ঐ সেক্টরে সংস্থাটির ৪টি ফেরির মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে একটি ফেরি বিকল অবস্থায় মেরামতের অপক্ষোয় রয়েছে। অথচ ঐ মহাসড়ক ও ফেরি সার্ভিসের উপরই চট্টগ্রাম-বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নির্ভরশীল। ওই মহাসড়কেরই ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যে ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ উপমহাদেশের সর্বাধিক দৈর্ঘের ফেরি সার্ভিসে মাত্র ৩টি কে-টাইপ ফেরি রয়েছে। তবে প্রায়সই একটি ফেরি বিকল থাকছে। ফলে প্রতিনিয়ত শত শত যানবাহন মেঘনার দুপাড়ে আটকে থাকছে। অনেক পণ্যবাহী ট্রাক দিনের পর দিন মেঘনার দুপাড়ে আটকে থাকছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর তার বরিশাল এবং পটুয়াখালী ফেরি বিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে যেসব ফেরি সার্ভিস চালু রেখেছে তারমধ্যে বরিশালÑপটুয়াখালী মহাসড়কের লেবুখালী এবং বরিশালÑখুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে ২টি ফেরি নতুন। অন্য ২৬টি ফেরিই পুরনো। ‘ইউটিলিটি-১’ ও ‘ইউটিলিটি-১ উন্নত’ মডেলের এসব ফেরির বেশীরভাগই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। বেশীরভাগ ফেরির ইঞ্জিনগুলো এতই পুরনো যে তা এখন মেরামত করেও পরিচালন সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহল। তবে এ দুটি ফেরি পয়েন্টে একাধিক ফেরি থাকলেও পর্যায়ক্রমে চলছে ১টি করে।
এমনকি এসব ফেরির অবকাঠামোর অবস্থাও অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। ফলে অনেকটা লাগসই প্রযুক্তিতে জোড়াতালি দিয়ে চলছে ফেরিগুলো। বর্ষার সময় পায়রা, কঁচা, বলেশ^র-এর মত বড়-বড় নদী পাড়ি দিতে অনেক সময়ই ফেরির ইঞ্জিন মাঝ নদীতে বিগড়ে যায়। ফলে খরশ্রোতা নদ-নদীর প্রবল শ্রোতে বিপুল সংখ্যক যাত্রী ও যানবাহন সহ ফেরিগুলো ভেসে যাবার মত অঘটনও ঘটছে। আবার শীতের প্রচন্ড কুয়াশায় এসব ফেরি চলাচলের মত ভালমানের সার্চলাইট সহ প্রয়োজনীয় নৌ সরঞ্জামেরও অভাব রয়েছে। অথচ এসব ফেরি অনেক গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ অতিক্রম করেই প্রতিদিন সহস্রাধিক যানবাহন পারাপার করছে। সড়ক অধিদপ্তরের কোন ফেরি নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের নিবন্ধিত নয়। ফলে তাতে নৌ সহায়ক সরঞ্জামাদি থাকা না থাকার দায়ও নেই কারো। অপরদিকে সরকারী নীতিমালার আলোকে দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো ফেরি ও ফেরিঘাটগুলোই ইজারার মাধ্যমে পরিচালন হওয়ায় যানবাহন পারাপারে ইজারাদারের খামখেয়ালীপনার কাছেই জিম্মি এ অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ যাত্রী সহ যানবাহনের চালক ও মালিকগন। সড়ক অধিদপ্তরও ফেরিগুলো ইজারা দেয়ার সময় ফেরি পারাপারে তেমন কোন নীতিমালা বেধে দেয়না। ফলে ইজারাদার তার খেয়ালখুশি মত ফেরি পরিচালন করায় প্রতিদিনই প্রায় সব ফেরি ঘাটগুলোতে অপেক্ষমান যানবাহনের লাইন থাকছে। বরিশালÑখুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে কাগজে কলমে প্রতি ঘন্টায় একবার ফেরি পারাপার হচ্ছে । তবে তাও হচ্ছেনা। এমনকি ঘন্টায় একটি ট্রিপ দিলেও যানবাহনের লাইন লম্বা হচ্ছে। ফলে ঐ ফেরি পয়েন্টের দ্ ুপ্রান্তেই প্রতিনিয়ত অপেক্ষমান যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। চরম দূর্ভোগে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মানুষ। অথচ এখানে বর্তমানে ১টি নতুন ফেরি সহ মোট তিনটি সচল ফেরি রয়েছে।
বরিশাল-পটুয়াখালীÑকুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা নদী পারাপারকারী ৪টি ফেরির মধ্যে ৩টি সচল থাকলেও সেখানে যানবাহন পারাপারে চরম দূর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে। এ দুটি ফেরি পয়েন্টেই ১টির বেশী ফেরি কখনোই যানবাহন পারাপার করছে না। বরিশাল ও পটুয়াখালীতে সড়ক অধিদপ্তরের অন্য ১৫টি ফেরি পয়েন্টে মাত্র ১টি করে ফেরি থাকায় সেসব স্থানে যথেষ্ট ঝুকি নিয়েই যানবাহন পারাপার হচ্ছে। কারন দীর্ঘদিনের পুরনো ঐসব ফেরি প্রায়সই বিকল হয়ে সড়ক যোগাযোগই বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে।
এসব ব্যাপারে বরিশাল ও পটুয়াখালীর ফেরি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীদ্বয়ের সাথে সেল ফোনে আলাপ করা হলে তারা পুরনো ফেরির কথা স্বীকার করে জানান, এসব বিষয়ে সার্বক্ষনিকভাবে উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে। নতুন ফেরি ও ইঞ্জিন সংগ্রহ করা হলে এঅঞ্চলের তা মোতায়েন করা হবে । খুব শীঘ্রই কঁচা ফেরি পয়েন্টে নতুন একটি ফেরি মোতায়েনের কথাও জানান বরিশাল ফেরি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী।
অপরদিকে বরিশালÑভোলা মহাসড়কের লাহারহাটÑভেদুরিয়া সেক্টরে একটি ফেরি বিকল থাকা প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিসি’র বরিশালের এরিয়া ম্যানেজার জানান, ফেরিটি মেরামতের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT