শেবাচিম হাসপাতালের আইসিইউ অচল ও চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন শেবাচিম হাসপাতালের আইসিইউ অচল ও চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন - ajkerparibartan.com
শেবাচিম হাসপাতালের আইসিইউ অচল ও চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

2:44 pm , December 13, 2019

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ভেন্টিলেটর মেশিন (কৃত্রিম উপায়ে শ^াস-প্রশ^াস দেয়ার যন্ত্র) বিকল থাকার চিকিৎসা না পেয়ে নবীন চিকিৎসক মারুফ হোসেন নয়নের মৃত্যুর অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গঠিত চার সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জসীম উদ্দিন হাওলাদারকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন- এনেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম, মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইমরুল কায়েস ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাশরেফুল ইসলাম সৈকত। আজ শনিবার থেকে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু হবে। ডা. মারুফ হোসেন নয়নের মৃত্যুতে কোন গাফিলতি ছিলো কিনা এবং কিভাবে আইসিইউ’র ভেন্টিলেটর যন্ত্র বিকল হলো, এ ক্ষেত্রে কারোর কোন গাফেলতি রয়েছে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখবেন তারা। উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরে ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই সালে শেবাচিম হাসপাতালের পূর্ব দিকে ১০টি ভেন্টিলেশন মেশিন নিয়ে চালু হয়েছিলো আইসিইউ। কিন্তু মাত্র দু’বছরের মাথায় ৯টি ভেন্টিলেটর বিকল হয়ে যায়। অবশিষ্ট থাকা অপর ভেন্টিলেটরটাও বিকল হয়ে যায় গত ১১ ডিসেম্বর সকালে। যে বিষয়টি অবগত ছিলো না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ১০ ডিসেম্বর শেবামেকের প্রাক্তন ছাত্র ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মারুফ হোসেন নয়ন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারনে ওইদিনই তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর দিন অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর তার অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত আইসিইউতে স্থানান্তর করেন।
মৃত ডা. নয়নের স্বজনদের অভিযোগ তাকে দ্রুত আইসিইউতে নেয়া হলেও সবকটি ভেন্টিলেটর বিকল থাকায় শেষ পর্যন্ত তাকে কৃত্রিম উপায়ে শ^াস-প্রশ^াস দেয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পরামর্শ অনুযায়ী তাকে ঢাকায় নেয়ার উদ্দেশ্যে ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালের বাইরে এ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বলে দাবি মৃত ডা. নয়নের বাবা মো. মোশারেফ হোসেনের।
এদিকে নয়নের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের সকল পর্যায়ের চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিন্দার ঝড় ওঠে। যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে নয়নের মৃত্যুর জন্য পরিচালককে দায়ি করেন তারা। যা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে পড়েন পরিচালক। তাই ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে দেন পরিচালক।
হাসপাতালের আইসিইউ সূত্রে জানাগেছে, ‘ইউনিটটি চালুর পূর্বে ঢাকা থেকে ১০ জন সেবিকা (নার্স) কে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়। এর পরে তাদের মধ্যে থেকে হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফরিদা বেগম। সম্প্রতি তিনি ওই ইউনিটের ইনচার্জের দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
তিনি দায়িত্বে থাকাবস্থাতেই ৯টি ভেন্টিলটর যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে। এরপর নতুন ইনচার্জ দায়িত্ব গ্রহনের প্রায় তিন মাসের মাথায় অবশিষ্ট ভেন্টিলেটরটিও বিকল হয়ে পড়ে। তবে ফরিদা বেগম দায়িত্বে থাকাবস্থায় বিকল হওয়া ভেন্টিলেটরের মধ্যে ৩টি মেরামত করে সচল করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই তিনটিও অল্প সময়ের মধ্যেই পুনরায় বিকল হয়ে পড়ে।
নার্সদের দাবি সঠিকভাবে পরিচালনা এবং অদক্ষতার কারনেই ভেন্টিলেটরগুলো কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া পূর্বে ইনচার্জ ফরিদা বেগম দায়িত্ব ছাড়া নিয়ে গড়িমসি করেন। তাকে আইসিইউ’র দায়িত্ব ছাড়তে হলে আত্মহুতির হুমকিও দেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ কারনে আইসিইউ ভেন্টিলেটর বিকল হওয়ার পেছনে সাবেক ইনচার্জের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও এমন কোন বিষয় থেকে থাকলে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন চিকিৎসক এবং নার্সরা।
যদিও আইসিইউ’র কার্যক্রম বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে হাসপাতাল পরিচালক ডা. বাকির হোসেনের বক্তব্য, যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারনে এ হাসপাতালে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে মন্ত্রনালয়। এ কারনে বিকল হওয়া ভেন্টিলেটরগুলো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি বরাদ্দ না থাকায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররাও কাজ করতে রাজি হননি বলে দাবি পরিচালকের।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT