বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলের ৯ জেলায় নির্মিত হচ্ছে সহস্রধিক বহুমূখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলের ৯ জেলায় নির্মিত হচ্ছে সহস্রধিক বহুমূখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র - ajkerparibartan.com
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলের ৯ জেলায় নির্মিত হচ্ছে সহস্রধিক বহুমূখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র

2:46 pm , December 6, 2019

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিশ^ ব্যাংক-এর অর্থায়নে উপকুলের ১১টি জেলার ঝুকিপূর্ণ এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সহ¯্রাধিক বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান ও পূণর্বাসন করছে এলজিইডি। এরমধ্যে নতুন ৫৫৬টি বিদ্যালয় ভবন সহ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান সহ ৪৫৫টি পুরনো আশ্রয়কেন্দ্র পূণর্বাসন করা হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে এ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আশা করছেপ্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী জাভেদ করিম। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৩৭ দশমিক ৫ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ^ব্যাংক। বাংলাদেশের নিজস্ব কোষাগার থেকে ব্যয় বহন করা হচ্ছে ১০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো নির্মানের অগ্রগতি ৪৫%-এর বেশী। আর্থিক অগ্রগতির পরিমান প্রায় ৪০%। প্রকল্পের আওতায় নির্মানাধীন ও সংস্কারাধীন ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রগুলোর সাথে সংযোগ রক্ষাকারী সাড়ে ৫শ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ছাড়াও পাঁচশ মিটার কালভার্ট নির্মান করা হবে বলেও জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। ফলে পল্লী অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধী সহ পশুসম্পদ-এর নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত হবে বলেও জানা গেছে। বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশেষ করে ১৯৭০ ও ১৯৯১ এর ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এবং ২০০৭ সালের সাইক্লোন সিডর-এ দেশের উপকূলীয় এলাকায় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া প্রতিবছর বন্যায় দেশের উল্লেখযোগ্য অংশ নিমজ্জিত হওয়ায় প্রাণহানি ছাড়াও ফসলহানি ও অবকাঠামোর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। নতুন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও আগাম সতর্কতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সম্পদ রক্ষা ও প্রাণহানী কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে যেখানে প্রায় ৫ লক্ষ, ১৯৯১ সালের সাইক্লোনে প্রায় ১ লক্ষ লোক নিহত হয়, সেখানে ২০০৭ এর সিডর-এ প্রাণহানির সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার। যদিও এই ৩টি ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা প্রায় একই ধরণের ছিল। ২০০৭ এর প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর এর পর বিশ্বব্যাংক সহ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতায় সরকার দেশের উপকূলীয় জনগণকে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে প্রাথমিকভাবে রক্ষার জন্য বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম জোরদার করে। জরুরী ভিত্তিতে ২০০৭ সালের সাইক্লোন পরবর্তী পরিস্থিতি উত্তরণের লক্ষ্যে সরকার “জরুরী ২০০৭ ঘূর্ণিঝড় পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসন প্রকল্প” অনুমোদন করে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই কর্মসূচীর আওতায় ইতোমধ্যে ৩৫২টি নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও পূর্বে নির্মিত ৪৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্রের পুনর্বাসন সম্পন্ন হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর বেশ কয়েকটি গ্রীস্মমন্ডলীয় ঝড় বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মহাসেন, নার্গিস, ফণী ও বুলবুল। লক্ষ্য করা গেছে নির্মাণ সমাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ও গবাদি পশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা করায় তেমন কোন প্রাণহানী ঘটেনি। উপকূলীয় এলাকায় আরো ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা থাকায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে একনেক “বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প” অনুমোদন করে। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর সহ উপকুলীয় ৯টি জেলার মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে নির্মান ও পূণর্বাসনের ফলে বিশাল জনগোষ্ঠী দূর্যোগের সময় নিরাপদ অবস্থান লাভ করবে। প্রকল্প এলাকার আওতাধীন দেশের উপকূলীয় জেলাসমূহে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্ট বিপদাপন্নতা হ্রাস করে জনগণের জন্য ঝুঁকি কমিয়ে আনবে । দুর্যোগের সময় জনগণ এবং তাদের সম্পত্তিসহ গৃহপালিত প্রাণিসম্পদের নিরাপদ আশ্রয় প্রদান ছাড়াও প্রাথমিক ও অন্যান্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সকলের জন্য শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করবে। ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকালে স্বল্প মেয়াদী এবং আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবহারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে দীর্ঘস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও সম্প্রসারিত টীকাদান কর্মসূচী ও এনজিও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আয়োজনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালকের নেতৃত্বে এলজিইডি’র প্রকৌশলীবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের পরামর্শক সমন্বয়ে গঠিত বাস্তবায়ন ইউনিট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। অতীত প্রকল্প অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্প এমডিএসপি বাস্তবায়নে বেশ কিছু নতুন সংযোজন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধণের মত বিষয় কাজে লাগানো হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর মনিটরিং, ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক বিডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছেছ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। এছাড়াও নির্মাণ কাজে উন্নত নকশা অনুসরণ, শেল্টার সমূহে সুপেয় পানি ও বিদ্যুত সরবরাহ, সৌর বিদ্যুত, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, স্টোররুম, প্রতিবন্ধী ও সন্তান সম্ভবা মহিলাদের জন্য বিশেষ সুবিধাদি, প্রাথমিক চিকিৎসা ও সামাজিক কাজে ব্যবহারে স্থান সংকুলানের ব্যবস্থা এই প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সামাজিক ও পরিবেশগত সুরক্ষা ও এতদসংক্রান্ত ব্যব্স্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ যেখানে প্রযোজ্য সেখানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী প্রতিটি দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের সুবিধার্থে ভবনের পুরো ছাদ ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি ভবনে বর্তমানে একটি করে স্টোর রুম রয়েছে। যা বৃদ্ধি করে দ্বিগুন করা হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT