কর নির্ধারনে অনিয়মের অভিযোগে বিসিসি’র চীফ এ্যাসেসর বরখাস্ত কর নির্ধারনে অনিয়মের অভিযোগে বিসিসি’র চীফ এ্যাসেসর বরখাস্ত - ajkerparibartan.com
কর নির্ধারনে অনিয়মের অভিযোগে বিসিসি’র চীফ এ্যাসেসর বরখাস্ত

3:26 pm , November 29, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দৈনিক আজকের পরিবর্তনে সংবাদ প্রকাশের পরে বিসিসি’র কর নির্ধারণ নিয়ে অনিয়মের প্রমান পেয়েছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি নিজ উদ্যোগে গ্রাহক হয়রানীর তদন্ত করে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছেন। আর তাই হোল্ডিং ট্যাক্স (কর) নির্ধারণে অনিয়মের অভিযোগে কর্পোরেশনের চীফ এ্যাসেসর আ.ন.ম মোশফেক আহসান আজমকে চাকুরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে না তা জানতে চেয়ে নোটিশ দেয়া হয়েছে। আগামী ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাদ দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক অফিস আদেশ প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে অনিয়ম তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কর নির্ধারন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে মেয়র নির্দেশ দিয়েছেন বলে বিসিসি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলায়েত হাসান বাবলু জানিয়েছেন।
আদেশ সূত্রে জানাগেছে, ‘ চীফ এ্যাসেসরের দায়িত্ব পালনকালে মোশফেক আজম উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন সময়ে একক ক্ষমতা বলে কর নির্ধারন বোর্ড বসিয়ে অবৈধভাবে কর ধার্য করেছেন। যা বিসিসি’র চাকুরি বিধিমালা ৩৮ এর (খ) ধারার অপরাধ।
এছাড়াও মোশফেক আজমের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। যদিও এ প্রসঙ্গে চীফ এ্যাসোসর মোশফেক আজিম ইতিপূর্বে জানিয়েছেন, ‘তিনি কারোর অধিনে চাকুরি করেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশের বাইরে তিনি কিছু করেননি। যা করেছেন তা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশেই করেছেন বলে দাবি বরখাস্ত হওয়া ওই কর্মকর্তার।
বিসিসি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলায়েত হাসান বাবলু বলেন, ‘হোল্ডিং কর নির্ধারনের বিষয়ে সংক্ষুব্ধ কয়েকজন গ্রাহক অনিয়মের অভিযোগ এনে সিটি মেয়র বরাবর অভিযোগ করেন। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ আবেদনগুলো গুরুত্বের সাথে দেখেন। এমনকি তিনি নিজেই অভিযোগের তদন্ত শুরু করেন।
সনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, ‘ মেয়রের প্রাথমিক তদন্তে অনিয়মের বিষয়টি সামনে চলে আসে। তদন্ত করে মেয়র দেখতে পান হোল্ডিং কর নির্ধারনে অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম নীতি ও আইনের তোয়াক্কা করা হয়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে স্থাপনা পরিবর্তন না হলেও গ্রাহককে নোটিশ দিয়ে তাদের করের পরিমান কয়েক শতগুন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
মেয়র এ ব্যাপারে কর ধার্য্য শাখার সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন এবং ফাইল তলব করেন। পাশাপাশি চীফ এ্যাসোসর মোশফেক আজমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে নিজের দোষ ঢাকতে গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে বিসিসি’র মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘অনিয়ম করে কেউ পার পাবেনা। বিসিসি’র কারোর ভুলে কোন গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেই গ্রাহকের দেয়া অভিযোগ আমলে নেয়া হবে। তদন্তে অনিয়মের ক্ষেত্রে আর কারোর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বিসিসি’র আলোচিত সমালোচিত মোশফেক আজমকে চীফ এ্যাসেসর থেকে সরিয়ে দেয়ায় নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ নগরবাসি স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিসি’র একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মোশফেক আজম একজন দুর্নীতি পরায়ন লোক। হোল্ডিং কর নির্ধারণে অনিয়মের ক্ষেত্রে আজমের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি ছিল অনেকটা ওপেন সিক্রেট। তিনি নিজে ঘুষ গ্রহনের পাশাপাশি কর ধার্য্য ও কর আদায় শাখায় তার সহকর্মীদের ঘুষ গ্রহনের বিষয়ে উৎসাহিত করতেন। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহনের পর মোশফেক আজম প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহন অনেকটা কমিয়ে দিলেও তার অপকর্ম এক দিনের জন্য বন্ধ হয়নি। বরং আইনের অপব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে একক ক্ষমতাবলে তিনি যেমন বোর্ড বসিয়ে অবৈধভাবে কর ধরেছেন, আবার তার নিজেরসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের কর ধার্য্যরে ক্ষেত্রে বিরত থেকেছেন। গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, ‘বর্তমান পরিষদের আগে মোশফেক আজম অনৈতিক সুবিধা গ্রহন করে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। যে কারনে তৎকালিন সময়ে কখনই তার বেতন বোনাসের টাকায় হাত দিতে হতো না।
তাছাড়া নগর ভবন সূত্রে জানাগেছে, ‘ইতিপূর্বে অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অপরাধে মোশফেক আজমকে আরও একবার বরখাস্ত করা হয়েছিলো। সে সময় তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর কাজে যোগদান করতে পারেনি। পরে আহসান হাবিব কামাল মেয়র থাকাবস্থায় মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে পুনরায় চীফ এ্যাসেসরের দায়িত্ব গ্রহন করেন। সর্বশেষ পুনরায় অনিয়ম ধরা পড়ায় মোশফেক আজমকে দ্বিতীয় বারের মতো সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্ত শেষ হলে এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত আজিমের সহকারী আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দায়িত্বশীল সূত্র।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT