নেছারাবাদে খেলার মাঠ দখল করে স্কুল করার নামে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ইউএনও’র বিরুদ্ধে নেছারাবাদে খেলার মাঠ দখল করে স্কুল করার নামে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ইউএনও’র বিরুদ্ধে - ajkerparibartan.com
নেছারাবাদে খেলার মাঠ দখল করে স্কুল করার নামে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ইউএনও’র বিরুদ্ধে

4:31 pm , November 12, 2025

গৌতম কুমার, নেছারাবাদ প্রতিবেদক ॥ পিরোজপুরের নেছারাবাদে স্বরূপকাঠি মিনি স্টেডিয়ামের মাঠ দখল করে স্কুল স্থাপনের নামে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নানা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম শামীমের বিরুদ্ধে। উপজেলার ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত স্বরূপকাঠি স্টেডিয়াম মাঠ নামে পরিচিত সরকারি খাস জমিতে “নেছারাবাদ আইডিয়াল ইনস্টিটিউট” নামে একটি প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন ইউএনও। অভিযোগ রয়েছে, এ অজুহাতে তিনি ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ক্লিনিক ও হাসপাতাল, ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ ও সামগ্রী সংগ্রহ করেন। উপজেলায় ইতোমধ্যেই ১৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৭টি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টি সহশিক্ষা এবং ১৪টি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন একটি স্কুল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ নেছারাবাদে ইউএনও পদে যোগদানের পরপরই জাহিদুল ইসলাম শামীম একাধিক বিতর্কে জড়ান। সম্প্রতি “সুশিক্ষার মানোন্নয়ন” উদ্যোগের কথা বলে তিনি মাঠটি দখল করে টিনশেড ঘর নির্মাণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই স্কুল নির্মাণের জন্য ইউএনও ইট, কাঠ ও নগদ টাকা সবই স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা হিসেবে তুলেছেন। তিনি উপজেলার আটটি ইটভাটা থেকে বিনামূল্যে ৫ হাজার করে মোট ৪০ হাজার ইট সংগ্রহ করেন। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এছাড়া উপজেলার ১৪টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। যার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত কাঠের বড় অংশ বনবিভাগের জব্দকৃত গাছ থেকে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব কাঠের একটি অংশ ইউএনও অফিসের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শাহ আলম ব্যক্তিগত ফার্নিচার তৈরিতে ব্যবহার করেছেন।
আবেদ আলী প্রাইভেট হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ইউএনও স্যার আমাদের সভায় ডেকে বলেন স্কুলের জন্য সহযোগিতা করতে হবে। আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। না দিলে যদি কোন সমস্যা হতো।”
জাহানারা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মো. রুহুল আমিন বলেন,“স্যার স্কুলের জন্য সবার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। আমি ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। না দিলে সরকারি দিক থেকে বিপাকে পড়তে হতো।”
আশা ব্রিকসের পরিচালক মো. অলি হাসান বলেন, “স্যার স্কুল করবে বলে আমাদের ভাটায় ডেকে পাঁচ হাজার করে ইট চেয়েছেন। আমি মোট আট হাজার ইট দিয়েছি।”
ইবিসি ব্রিকসের মালিক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন,”আমি কম ইট দিয়েছিলাম। তবে বাকি সব ইটভাটা থেকে ৫ হাজার ইট নিয়েছেন। শুনেছি বাজার কমিটির কাছ থেকে তিনি ৭৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।”
বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক কাজী আনিসুজ্জামান বলেন। “স্যার স্কুল করছেন, এজন্য সমিতির পক্ষ থেকে আমরা ৭৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছি।”
স্থানীয় কয়েকজন সমাজকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,”১৬৯টি স্কুল থাকা সত্ত্বেও নতুন স্কুলের দরকার নেই। বরং এলাকার অনেক সড়ক ও সেতু মেরামতের কাজ জরুরি ছিল। মাঠ দখল করে সহযোগীতার নামে এভাবে চাদা উত্তোলন করে স্কুল করা অনৈতিক।”
এ বিষয়ে ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলাম শামীম বলেন,“সুশিক্ষার মান উন্নয়নে আমি স্কুল করার উদ্যোগ নিয়েছি। সবাই আমার উদ্যেগে সাড়া দিয়ে কিছু কিছু সহযোগীতা করেছে”। কি পরিমান সহযোগীতা সংগ্রহ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি জানাতে অনীহা প্রকাশ করেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT