বরিশাল কারাগারে ফ্যাসিস্ট এর দুই কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় চলছে দুর্নীতি ! বরিশাল কারাগারে ফ্যাসিস্ট এর দুই কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় চলছে দুর্নীতি ! - ajkerparibartan.com
বরিশাল কারাগারে ফ্যাসিস্ট এর দুই কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় চলছে দুর্নীতি !

4:28 pm , November 12, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের ডিআইজি প্রিজন অসীম কান্ত পাল ও সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন চাকরি জীবনে যেখানেই কর্মরত ছিলেন, সেখানেই অনিয়ম দুর্নীতির চিহ্ন রেখে এসেছেন। আ.লীগ শাসনামলে কর্মক্ষেত্রে তারা যেমন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, সেই চর্চা এখনও বরিশাল জেলে অব্যাহত রেখেছেন। যে কারণে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার পাশাপাশি কারাভ্যন্তরে বিস্তর অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য। কারা উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয়, বরিশাল বিভাগের ডিআইজি প্রিজন অসীম কান্ত পাল চট্টগ্রামের আওয়ামী শীর্ষ সন্ত্রাসী দিদারুল আলম মাসুম-এর পক্ষ নিয়ে পক্ষপাতিত্বমূলক তদন্ত করেন। অনেকেই বলেছেন, অসীম কান্ত পাল হলেন ‘ভারতের ‘র’ এর এজেন্ট। আবার কেউ কেউ বলেছেন- সে ইসকন অনুসারী। বছরে ২ বার করে আ.লীগ শাসনামলে গত ১২ বছরে স্ব-পরিবারে ভারতে গেছেন প্রায় ২৫ বার। এসব খরচ আয়কর ফাইলে দেখাননি। রাজশাহীতে কর্মরত থাকাকালীন ৩ বছরে ৮টন এসি বাবদ প্রায় ১৫ লাখ টাকা সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করেছেন। পরিদর্শনে গিয়ে সরকারি রেস্টহাউস/সার্কিট হাউজে না থেকে পর্যটন মোটেল, ব্যয়বহুল রিসোর্ট ও ৫ তারকা হোটেলে অবস্থান করেছিলেন। সকল ব্যয় কারাগারের জেল সুপারদের পরিশোধ করতে বাধ্য করতেন। এসব তথ্যের সত্যতা মিলবে অসীম কান্ত পাল চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহী ও রংপুরে কর্মরত থাকাকালীন বিষয়ে অনুসন্ধান করলে। যা অফিস ফাইলেও অনেক তথ্য রেকর্ড রয়েছে। এসব বিষয়ে কারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বহুবার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দোসর হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ টু-শব্দটি পর্যন্ত করেনি।
সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন-এর নেতৃত্বে বরিশাল কারাগার এক ভয়াবহ জগতে রূপ নিয়েছে। মাসে মোটা অংকের টাকার বিনিময় সেলে আটক বন্দিদের মোবাইল, মাদক ও ঘুমের ওষুধ সরবরাহ ওপেন সিক্রেট বিষয়। বন্দিদের আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে দাম হাকেন রক্ষীরা। শুধু নেশাদ্রব্যই নয়, আমদানি ওয়ার্ড থেকে বন্দি বেচাকেনা, নি¤œমানের খাবার পরিবেশন, বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার সময় অর্থ আদায়, আর্থিক চুক্তিতে সুস্থ বন্দিকে অসুস্থ সাজিয়ে কারা হাসপাতালে রাখাসহ বিভিন্ন অনিয়মের ওপর ভর করেই চলছে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার। যার নেপথ্যে রয়েছেন ওই সিনিয়র জেল সুপার।
বিশ্বস্ত এক সূত্র জানায়, রাসেল নামে এক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে। সিনিয়র জেল সুপার তাকে জেলার মোহাম্মদ মাহবুব কবিরের মাধ্যমে টর্চার করে যাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক স্টাফ জানান, জেলার মানসিকভাবে অসুস্থ। সর্ব প্রথম তার মানসিক চিকিৎসা দরকার।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন আ.লীগ শাসনামলে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এর সহযোগিতায় সিলেট কারাগারের মূল্যবান সম্পদ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নিকট হস্তান্তরের চেষ্টা করেন। যা সেখানের অনেকেই জানেন। কারাবন্দী ও স্টাফদের কল্যাণে ভুয়া ভাউচার করে প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল জেলের সিনিয়র জেল সুপার দায়িত্ব গ্রহণের সময় কমন ফান্ডে মোট উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় ৬৯ লাখ টাকা। উদ্বৃত্ত তো দূরের কথা, সেখানে উল্টো ২০ লাখ টাকা ঘাটতি দেখান এ কর্মকর্তা।
গত ৫ আগস্ট আন্দোলনের সময় জিআইজি ও জেলার পরিবার সহ অজ্ঞাত স্থানে চলে যায় এবং মুঠোফোন বন্ধ করে দেয়। আ.লীগ শাসনামলেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন। যারমধ্যে বন্দি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণের অর্থও রয়েছে। ক্ষমতার প্রভাবে তার কর্তৃক অনেক কর্মকর্তা বৈষম্যতার শিকার হয়েছেন। চট্টগ্রাম কারাগারে তার অনিয়ম দুর্নীতির সহযোগী ছিলেন- সুপার প্রশান্ত, জেলার সোহেল রানা, সাবেক জেল সুপার গিয়াস।
সিলেট, চট্টগ্রামের পর বরিশালে এসেও মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেনের অব্যাহত রয়েছে পুরনো অভ্যাস। এক কথায় “টাকায় সব মেলে বরিশাল কারাগারে।” যারা জেলহাজত থেকে বের হয় তাদের সাথে কথা বললেও যে কেউ প্রমাণ পাবে। বিশেষ করে আ.লীগ নেতাকর্মীরা জেলখানায় স্পেশাল কদর পান ডিআইজি ও জেল সুপারের বদৌলতে। তদন্ত করলেই যা দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে যাবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল, চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহী ও রংপুরে কারাগারে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের অনিয়ন ও দূর্নীতির সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ন্যায়বিচারের কামনা করেছেন।
বরিশাল বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স অসীম কান্ত পাল-এর ব্যবহৃত মুঠোফোনে বুধবার বিকেল সোয়া ৪ টায় একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে সাক্ষাৎকারের বিষয় তুলে ধরে ম্যাসেজ পাঠালেও কোনো রেসপন্স করেননি।
বিকেল সাড়ে ৪ টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন এর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনিও রিসিভ করেননি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT