3:46 pm , October 20, 2025

ভোলার নাগরিক সমাজের দাবি, ইলিশ রক্ষায় ক্ষুদ্র জেলেদের নিরাপদ জীবিকা এখনই নিশ্চিত করা জরুরি
খবর বিজ্ঞপ্তি ॥ কোস্ট ফাউন্ডেশন ২০ অক্টোবর ২০২৫, রোজ সোমবার, কোস্ট ভোলা সেন্টার, ভোলা সদর, ভোলায় “শুধু খ-কালীন সহায়তা-নির্ভর সমাধান নয়, চাই বিকল্প ও টেকসই আয়ের সুযোগ এবং প্রশিক্ষণ” শীর্ষক এক সেমিনারের অনুষ্ঠিত হয়েছে। সনত কুমার ভৌমিক, উপ-নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ফাউন্ডেশন এর সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপত্বি করেন মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী কোস্ট ফাউন্ডেশনের সম্মানিত সাধারণ পরিষদের সদস্য, এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ ইকবাল হোসেন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, ভোলা। এছাড়াও ভোলা প্রেস ক্লাব, কোস্টগার্ড, পুলিশ প্রশাসন, ধনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়াম্যান, সাংবাদিক ও জেলে নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
বক্তারা বলেন, ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষুদ্র জেলেরা চরম জীবিকা সংকটে পড়ে; তাই তাদের জন্য স্বল্পমেয়াদি সহায়তার বাইরে গিয়ে টেকসই বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা এখন সময়ের দাবি।
আলোচকরা বলেন ইলিশ প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় ক্ষুদ্র জেলেদের সরকারি সহায়তা যথাসময়ে পৌঁছে দেয়া এবং এর কার্যকর তদারকি করা জুরুরি, ভিজিএফ চাল দেয়া বন্ধ করে মোবাইলে টাকা দেয়া, পাশাপাশি জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ ও ভর্তুকি কার্যক্রম সম্প্রসারনের উপর গুরুত্ব দেন। বক্তারা আরও বলেন বর্তমান জেলেদের তালিকা জেলে প্রতিনিধিদের সংগে নিয়ে সংশোধন করতে হবে। জেলেদের আধুনিক মাছ শিকারের কৌশল, জেলেদের দক্ষতা বৃদ্ধি, উন্নত মাছ শিকারের সরঞ্জাম, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক সুবিধা প্রদানের জন্য সরকারের যুগপোযোগি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুটকি পল্লী, মাছ সংরক্ষনাগার, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, জেলে পরিবারে জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতির শতভাগ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। মোসাম্মাৎ রাশিদা বেগম, প্রকল্প সমন্বয়কারী, জিসিএ (এঈঅ) প্রকল্প, কোস্ট ফাউন্ডেশন, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, ভোলার নিবন্ধিত জেলেদের ৬০% প্রতিবছর নিষেধাজ্ঞাকালীন ২-৩ মাস আয়হীন অবস্থায় থাকে। সরকারি ৪০ কেজি চালের সহায়তা অপ্রতুল এবং বেশিরভাগ সময়ই তা দেরিতে পৌঁছায়। ফলে অনেক পরিবার মহাজনী ঋণের ফাঁদে পড়ে। তিনি বলেন, “খ-কালীন সহায়তা ক্ষুধা মেটায়, কিন্তু জীবন বদলায় না। জেলেদের মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা নিশ্চিতে বিকল্প আয় ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি।
নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে জেলে পরিবার, ট্রলার মালিক-শ্রমিক, আড়তদার, দানদার, বরফ কলের সাথে সম্পৃক্তসহ জাল প্রস্তুতকারি, তেল সরবরাহকারি, খাবার সরবরাহকারি লক্ষ লক্ষ পরিবার চরম বিপাকে পড়ে।
সনত কুমার ভৌমিক বলেন ইলিশ হলো গভীর পানির মাছ, কিন্তু ডুবু চরের কারনে ইলিশ মাছ নদীতে আসতে বাধাগ্রস্থ হছে, প্রতিবছর ৪.৫%-৫% ইলিশমাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এখনি সরকারকে এবিষয়ে করনীয় নির্ধারন করা প্রয়োজন। জেলে পরিবারের সদস্যরা বিশেষ করে নারী ও যুবকরা বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে ছাগল পালন, মাছ চাষ, মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ, সব্জি চাষ ইত্যাদি করতে পারে।
জেলে নারী পরিবারের সদস্য রিমা বেগম বলেন সরকারী সহায়তার বেশীরভাগই জেলে নয় এমন পরিবারের কাছে চলে যাচ্ছে। জেলে নারী আকলিমা বেগম বলেন যে নারীরা আয়বর্ধনমূলক কাজের সাথে জড়িত তাদের পরিবারের জেলেরা নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় নদী বা সাগরে মাছ ধরতে যান না।
জেলে প্রতিনিধি বশির মাঝি বলেন যারা নদীতে যায় না তাদের নামে জেলে কার্ড আছে, যারা নদী ও সাগরে যুদ্ধ করে তাদের অনেকেরই কার্ড নেই। ঘরে খাবার নেই, কিন্তু কার্ড না থাকায় সরকারি সহায়তায় পায় না। নেয়ামত উল্লাহ, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার এর প্রতিনিধি বলেন নিরাপদ বিকল্প নিশ্চিত করতে হবে এবং এজন্য সরকারকে মৎস্য সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সাংবাদিক নজরুল হক অনু বলেন ভোলার মাছ ধরার সীমানা নির্ধারন নিয়ে বলেন ভোলা মেঘনা নদীর চর ইলিশা থেকে চর পিয়াল ৯০কি.মি এবং তেতুলিয়া নদীর সীমানা ১০০কি.মি. এর বাহিরে গিয়ে মাছ ধরলেও অনেক সময় জেলেদের আটক করা হয়, ফলে জেলেদের মানবাধিকার লংঘন হয়।
প্রধান অতিথি মোঃ ইকবাল হোসেন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, ভোলা বলেন আমাদের নদীতে একসময় প্রায় ২৬০ প্রজাতির মাছ ছিল এবং সমুদ্রে প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ ছিল, কিন্তু বর্তমানে নদীতে ২৫/২৬ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। আমাদের জেলেদের জন্য বৈধ জাল বিতরন করা হচ্ছে, ভিজিএফ সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য গবাদী পশুপালনের জন্য বকনা বাছুর বিতরণ করার বিষয় তুলে ধরেন।
মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী বলেন জেলেরা মহাজনি ঋনের কারনে নিজেদের ইচ্ছেমত মাছ বিক্রি করতে পারেন না, তাদের সরকারি ভাবে ঋন সহায়তা দেয়া উচিত, যাতে তারা মাছ ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন অজেলেদেরকে তালিকা থেকে যত দ্রুত সম্ভব বাদ দিতে হবে।