4:23 pm , July 4, 2025

জসিম জিয়া ॥ ২০২১ সালে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত করে গঠন করা হয় আহবায়ক কমিটি। নির্দেশনা ছিলো তিনমাসের মধ্যে মহানগরকে সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। কিন্তু চার বছরের বেশি সময় পার হলেও সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়নি। এই সময়ের মধ্যে দুইবার কমিটি বদল হয়েছে, কিন্তু ফলাফল শূণ্যের কোঠায়। এমন অবস্থা যে শুধু মহানগরের ক্ষেত্রে তা কিন্তু নয়। বিভাগের অধিকাংশ জেলার একই চিত্র। এই সময়ের মধ্যে শুধুমাত্র সম্মেলন সম্পন্ন করতে পেরেছে পটুয়াখালী জেলা বিএনপি। গত ২ জুলাই অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন (ভার্চুয়ালে) দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পিরোজপুর জেলা বিএনপিও কিছুটা এগিয়ে আছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তারা ভোটাভুটির মাধ্যমে কমিটি গঠনের দিকে এগুচ্ছেন। তবে বরিশাল জেলা ও মহানগরে কবে সম্মেলন হবে সেই বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
সাংগঠনিক কাঠানো পুনর্গঠনের জন্য বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে। কিন্তু তিনিও দফায় দফায় নেতাদের সাথে বৈঠক করে কোনো ধরণের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন দলের মধ্যে বিভাজন আর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগীতার কারণে সংগঠনের এ অবস্থা তৈরী হয়েছে। দলের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার আর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগীতায় সংগঠনের বারোটা বাজছে। গত চার বছর ধরে এখানে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। বিএনপির এমন কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অনেকে বলছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এখানে সম্মেলন সম্পন্ন করা যাবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা কমিটি পুনর্গঠন এখন পর্যন্ত শুরু করা যায়নি। অথচ সম্মেলন করে নতুন কমিটি উপহার দিতে গেলো বছরের ২৫ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে সময় বেধে দেওয়া হয়েছিলো ৬০ দিন।
এ প্রসঙ্গে বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আমি মনে করি দলের মধ্যে বিভাজন নেই, আছে প্রতিযোগীতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এটা গণতন্ত্রেরই একটা অংশ। বিগত সময়ে সরকারের দমন-নিপীড়ন এবং করোনার কারণে সঠিক লক্ষে পৌঁছানো যায়নি। আগামী দুই মাসের মধ্যে আমরা বেশ কিছু জায়গায় সম্মেলন করতে পারবো।
তৎকালীন সময় সরকার বিরোধী আন্দোল সংগ্রাম বেগবান করার লক্ষ্যে সারাদেশে কমিটি পুনর্গঠন এর সিদ্ধান্ত হয়। ২০২১ সালের ৩রা নভেম্বর মনিরুজ্জামান ফারুক কে আহবায়ক, মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্য সচিব এবং আলী হায়দার বাবুল কে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক করে গঠন করা হয় মহানগর বিএনপির আংশিক আহবায়ক কমিটি। এরপর ২০২২ সালের ২২শে জানুয়ারি ৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। সেখানে আগের কমিটির ১৭১ সদস্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কেউ স্থান পাননি। সরোয়ার বিরোধীদের দিয়েই মূলত এ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ফলে শুরু থেকেই কমিটি নিয়ে নানা রকমের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। এতে করে বরিশাল বিএনপির রাজনীতি লেজেগোবরে অবস্থা হয়। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতেও চলছিলো একই অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের ১৩ জুন রাতে আহবায়ক কমিটি ভেঙ্গে ৭ জুলাই মনিরুজ্জামান ফারুককে আহবায়ক, জিয়া উদ্দীন সিকদারকে সদস্য সচিব এবং আফরোজা খানম নাসরিনকে ১ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই কমিটি নিয়েও শুরু হয় জটিলতা।
গত ৫ এপ্রিল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক ও সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার এক বিজ্ঞপ্তিতে বিলুপ্ত ৩০টি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ৮টি টিম গঠনের কথা জানান। এর দায়িত্ব দেওয়া হয় আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য মিলিয়ে ৩৯ জন নেতাকে। তবে একই দিন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা নাসরিন পাল্টা বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর থেকে নাসরিন দলীয় কর্মসূচি নিজের সমর্থকদের নিয়েই পালন করছেন। ফলে এখন পর্যন্ত কোন ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করা যায়নি।
এদিকে সম্মেলন না হওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বেশির ভাগ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় দলীয় শৃঙ্খলা হচ্ছে বিঘিœত। মহানগর ও কয়েকটি জেলার নেতারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ইতিমধ্যে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে গেছে, এই সময়ে সম্মেলন আয়োজন বেশ কঠিন। ফলে আগামী শুষ্ক মৌসুমের আগে সম্মেলন সম্পন্ন করা যাবে কি না এ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অপর একটি সূত্র বলছে সম্মেলনের আগে দলীয় কোন্দলের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে। সেটা সম্ভব না হলে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্ভব হবেনা। এই মুহূর্তে সম্মেলন করতে গেলে নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়াতে পারে। যা নির্বাচনী মাঠে নেতীবাচক প্রভাব ফেলবে।