3:57 pm , July 3, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ডায়রিয়া ও ডেঙ্গুর পরে নতুন করে করোনার হানায় বরিশালের জনস্বাস্থ্য চরম বিপর্যয়ের সম্মুখিন। বৃহস্পতিবারও বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরো এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে গত এক সপ্তাহে ৪ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হলো।
হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে ৫ হাজারের কাছে। যার প্রায় ৫ হাজারই জুন মাসের শুরু থেকে জুলাইয়ের ৩ তারিখ সকাল পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার দপুর পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৭৫। অপরদিকে বছরের প্রথম ৬ মাসে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগী ভর্তির সংখ্যাটা ৪৬ হাজার অতিক্রম করলেও এর কয়েকগুন চিকিৎসকের তত¦াবধানে ঘরে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন। এখনো প্রতিদিন গড়ে পৌনে ৩শ ডায়রিয়া রোগী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
এক হিসেবে জানাগেছে, গত জানুয়ারী মাসে ৬ হাজার ২৩১ জন ডায়রিয়া সহ পেটের পীড়া নিয়ে সরকারি হাসপাতালসমূহে ভর্তি হয়। ফেব্রুয়ারীতে আক্রান্তের সংখ্যাটা ৬,০৬৩ জনে সীমিত ছিল। কিন্তু মার্চে হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৮১৯ জনে উন্নীত হয়। এপ্রিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারন করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা একলাফে ১২ হাজার ৫৪৬ জনে দাঁড়ায়। মে মাসে অবশ্য সংখ্যাটা ৯,৫৭৮ জনে হ্রাস পায়। আর জুনে সংখ্যাটা ৭,৮৪৬ জনে স্থির ছিল।
গত বছরও বরিশাল অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৭২ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। যে সংখ্যাটা ২০২৩ সালে ছিল ৭৭ হাজারেরও বেশী। আর ২০২১-এ করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমনের মধ্যেও বরিশালে প্রায় ৮০ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন।
এ পরিস্থিতির মধ্যেই বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে। ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাটা সাড়ে ৫ হাজারের কাছে।
গতবছর পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক হলেও বর্ষার পরে শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের মধবর্তি সময়েও ডেঙ্গু দাপিয়ে বেড়িয়েছে। যারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর বর্ষার আগেই বরিশালে ডেঙ্গু যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতবছর ১ নভেম্বর পর্যন্ত বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটে। যারমধ্যে শুধু অক্টোবরেই ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল আড়াই হাজারের মত। এসময়ে মারা গেছেন ১৭ জন।
চলতি বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গুর উপস্থিতি লক্ষণীয় থাকলেও মে মাসের শুরু থেকে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল। জুনের শুরু থেকে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করতে শুরু করে। ৩জুন দুপুর পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ১৩জন। এ দিন দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় পৌনে ৫শ। যার প্রায় আড়াইশ বরগুনায়, শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ১শ।
এদিকে ইতোমধ্যে বরিশালেও করোনা হানা দিতে শুরু করেছে। তবে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও ভোলা জেনারেল হাসপাতালে যে ২টি আরটি পিসিআর ল্যাব রয়েছে, তা এখনো চালু করা হয়নি। বরিশালের ল্যাবের ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট অবিলম্বে ক্যালিব্রেশন না করলে ল্যাবটি চালু করা সম্ভব হচ্ছেনা। অন্যান্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ইতোমধ্যে দু শতাধিক র্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে অন্তত ১০ জনের করোনা শনাক্তের পরে তাদের হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালাগুলোতেও করোনা পজেটিভ রোগীদের চিকিৎসায় ৫৬১টি বেড প্রস্তুত করার কথা বলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরমধ্যে শুধুমাত্র শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ রয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, বরিশাল অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ১ হাজার ৭২৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও হাইপ্রো নেজাল ক্যানোলা আছে মাত্র ১০৬টি। যার ৭৭টি শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।