4:51 pm , July 1, 2025

মো: আফজাল হোসেন, ভোলা প্রতিবেদক ॥ ভোলার তজুমদ্দিনে চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে মারধর করে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে।
সোমবার ৭জনের নাম উল্লেখ করে তজুমদ্দিন থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর গত রোববার দুপুরে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ওই গৃহবধুর স্বামী তজুমদ্দিন উপজেলার একটি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তবে তিনি ঢাকায় থাকেন। তিনি দুই বিয়ে করেছেন। ওই ব্যক্তি বলেন, ১৪-১৫ দিন আগে তিনি ঢাকা থেকে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার বাড়িতে আসেন। পরে গত শনিবার দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। সেখানে রাতের বেলা উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, যুবদল কর্মী আলাউদ্দিনসহ তজুমদ্দিন কলেজ ছাত্রদলের কয়েক জনসহ ৬-৭ জনের একটি দল ঘরের ভেতর ঢুকে তাকে মারধর শুরু করে। দ্বিতীয় স্ত্রী সংসার করবেন না উল্লেখ করে তাঁরা পাঁচ লাখ টাকা দিতে চাপ দেন। তবে তিনি এত টাকা দিতে পারবেন না জানালে আবার রড-হাতুড়ি দিয়ে মারধর শুরু করে। তাঁকে অন্য একটি ঘরে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করেন।
খবর পেয়ে রোববার সকালে তাঁর প্রথম স্ত্রী ঘটনাস্থলে আসেন। প্রথম স্ত্রীকে দেখে আবারও রড-হাতুড়ি দিয়ে তাঁকে বেধরক পেটানো শুরু করেন। এ সময় প্রথম স্ত্রী হামলাকারীদের হাত-পা ধরে স্বামীকে ছেড়ে দিতে বলেন। এক পর্যায়ে তাঁরা চার লাখ টাকার বদলে এক লাখ টাকা দিতে বলেন। তখন প্রথম স্ত্রী তাঁর শ্বশুরকে ফোন করে টাকার জন্য বলেন। টাকা আসছে শুনে-হামলাকারীরা প্রথম স্ত্রীকে ঘরে রেখে স্বামীকে দোকানে চা খাওয়ার কথা বলে বাইরে নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, তাঁর স্বামীকে বের করে নিয়ে যাওযার পর সন্ত্রাসীরা ঘরের দরজা-জানালা আটকে তাঁকে একের পর এক দলবেঁধে ধর্ষণ করে। তিনি চিৎকার করলে আশপাশের বাড়ির নারীরা দরজা-জানালা খুলতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁকে রক্ষা করতে পারেননি।
ভুক্তভোগী দম্পতি বলেন, সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা কাউকে না বলার শর্তে তাঁদের ছেড়ে দেন। এরপর থেকে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধু গ্রামে ফিরে বারবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের নানা ধরনের হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। অবশেষে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধুর স্বামী ৯৯৯ ফোন দিয়ে পুলিশে খবর দেন। সোমবার পুলিশ এসে তাঁদের অভিযোগপত্র গ্রহণ করে।
এদিকে সোমবার রাতে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধুর মেডিকেল পরীক্ষা শেষে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে হাসপাতালের গাইনি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধান আসামি উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন ও যুবদল কর্মী আলাউদ্দিন গাঁ ঢাকা দেন। তাঁদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহব্বত খান বলেন, সোমবার ভুক্তভোগী গৃহবধুর স্বামী বাদী হয়ে তজুমদ্দিন থানায় একটি নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ফরিদ ও আলাউদ্দিনসহ ৭জনকে আসামী করা হয়েছে। এ ঘটনায় ঝর্ণা বেগম নামে এক নারীকে আটক করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের পাশাপাশি ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।