4:40 pm , June 29, 2025

ববি প্রতিবেদক ॥ শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ থাকা নয়, বরং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে তার যোগসূত্র স্থাপন করা। সেই লক্ষ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত হয় একটি ব্যতিক্রমধর্মী, গবেষণাভিত্তিক ও শৃঙ্খলাবদ্ধ শিক্ষাসফর। ছয় দিনব্যাপী এ ফিল্ড ট্রিপটি অনুষ্ঠিত হয় দেশের তিনটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর অঞ্চল রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজারে, যার শুরু রাঙামাটি দিয়ে, আর পরিসমাপ্তি সোনাদিয়া দ্বীপে।
২২ জুন বিকেল ৫টায় শুরু হয় যাত্রা। পরদিন ২৩ জুন রাঙামাটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেমন কাপ্তাই হ্রদ, রাজবন বিহার, আদিবাসী গ্রাম, শুভলং ঝরনা ও ঝুলন্ত ব্রিজ পরিদর্শন করি। শুধু সৌন্দর্য উপভোগেই নয়, এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল পাহাড়ি অঞ্চলের মৃত্তিকা গঠন, পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ। শিক্ষার্থীরা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনধারা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
রাঙামাটির পর আমরা পৌঁছাই বান্দরবানে। সফরের প্রথম দিন, বান্দরবনের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল ইসলাম পাহাড়ি চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে একটি আলোচনা পরিচালনা করেন। এরপর মাঠপর্যায়ে বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে চাষাবাদ পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করানো হয়। সেই দিনেই আমরা মেঘলা ও নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখি। পরদিন ২৫ জুন ঘুরে দেখি নীলগিরি, রূপালি ঝর্ণা ও চিম্বুক পাহাড়। এসব স্থান ছিল শুধু ভ্রমণের নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জন্য ঢালু ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমিক্ষয়, পরিবেশগত ঝুঁকি ও অনুপযোগী বসতির বাস্তব চিত্র অনুধাবনের ক্ষেত্র।
আমাদের সফরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্ত ছিল নীলগিরির মেঘঢাকা চূড়ায় দাঁড়িয়ে চারপাশের নিঃসীম সবুজ পাহাড় উপভোগ করা। সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, আমরা সত্যিই মেঘের ভেলায় ভেসে চলেছি। আর রূপালি ঝর্ণা ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছানো, ঝরনার ধারায় গা ভেজানো এবং পাথরের ওপর বসে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়া।
পরবর্তীতে আমাদের যাত্রা হয় কক্সবাজারের উপকূলে। আমরা ঘুরে দেখি ইনানী, হিমছড়ি ও রেডিও বিচ, যেখানে শিক্ষার্থীরা উপকূলীয় মৃত্তিকার গঠন, ক্ষয়প্রবণতা ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সরাসরি বিশ্লেষণ করেন।
সফরের শেষ দিন, ২৬ জুন আমরা যাই সোনাদিয়া দ্বীপে, যেখানে লবণাক্ততা, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাত ১০টায় আমাদের বাস বরিশালের পথে রওনা হয় এবং ২৭ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাই।
শিক্ষার্থীদের সাথে সফরসঙ্গী মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, শিক্ষার্থীদের শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান দিলেই হয় না, তাদেরকে বাস্তব ক্ষেত্রেও অভিজ্ঞ করে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। এই শিক্ষা সফরের মাধ্যমে তারা মাঠপর্যায়ে মাটির প্রকৃতি, পরিবেশগত পরিবর্তন এবং স্থানীয় জনপদের ভূমি ব্যবস্থাপনা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এ অভিজ্ঞতা তাদের ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সফরে অংশ নেওয়া অনেক শিক্ষার্থী জানান, এটি ছিল তাদের জীবনের অন্যতম মূল্যবান ও শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। তারা বলেন, সরেজমিনে মৃত্তিকার ধরন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভূমিকা উপলব্ধি করতে পারা ছিল অনন্য সুযোগ।