4:35 pm , June 29, 2025

বরিশাল-ভোলা মহাসড়ক থেকে
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের থেকে হাত-পা বাধা ও পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় দগ্ধ অন্ত:স্বত্ত্বা এক নারীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার সকালে বরিশাল সদর উপজেলা তালুকদার হাট এলাকা থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
উদ্ধারকৃত নারী মারিয়া আক্তার ভোলার ব্যবসায়ী মশিউর রহমানের স্ত্রী। মারিয়ার বাবার বাড়ি নগরীর গ্যাসটারবাইন এলাকায়। মশিউরের গ্রামের বাড়ি উজিরপুরে।
হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মারিয়া জানান, তার স্বামী প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর তাকে বিয়ে করেন। তার পূর্বেও বিয়ে ছিল। সেখান থেকে তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর পারিবারিকভাবে এক বছর পূর্বে বিয়ে হয়। বর্তমানে তিন মাসের অন্ত:স্বত্ত্বা। গতকাল শনিবার রাতে নগরীর বাবার বাসা থেকে বের হয়ে স্বামীর কাছে ভোলা যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন। কিন্তু লাহারহাট ফেরীঘাটে যাওয়ার পর গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে চার থেকে পাঁচজন তাকে আটকে পুরো শরীর দড়ি ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে ফেলে।
ওই সময় তার স্বামীর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ও তার ভাইকে তিনি দেখতে পান। আর সাথে যারা ছিলেন তাদের চেনেন না। সারারাত তাকে মারধর করে সন্তান নষ্ট করার চেষ্টা চালায়। এমনকি তার দুই হাত ও দুই পা দাহ্য পদার্থ দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়। ভোরা রাতের দিকে সড়কে ফেলে যায়। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে।
মারিয়ার স্বামী মশিউর রহমান বলেন, উজিরপুরে তিনি প্রথম বিয়ে করেন। কিন্তু স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় পারিবারিকভাবে তাকে তালাক দেন। এরপর মারিয়াকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী সোমা এবং ভাই হাসিবসহ পরিবারের সদস্যরা তাদের নানাভাবে বিরক্ত করছে। বিয়ের পর মারিয়াকে নিয়ে তার বাড়িতে গেলে তাদের দুইজনকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে। সেই মামলা এখনো চলমান রয়েছে। বিয়ের পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী অন্ত:স্বত্বা হওয়ায় তারা আরো ক্ষুব্ধ হন। এ কারনে সব সময় আমার ও মারিয়ার দিকে তাদের নজর ছিল।
তিনি বলেন, গতকাল শনিবার মারিয়াকে ভোলায় পাঠানোর জন্য বলি। মারিয়া অসুস্থ থাকায় প্রথমে তারা রাজী হয়নি। পরবর্তীতে মারিয়াকে তার মা নিয়ে রওয়ানা হয়। তাকে লাহারহাট ফেরীঘাটে পৌছে দিয়ে তার মামা নগরীর বাসায় ফিরে যান। আজ ভোরে মশিউর তার শাশুড়িকে জানান মারিয়া আসেনি। এরপর শুরু হয় মারিয়ার সন্ধান। কারন মারিয়ার ব্যবহৃত মোবাইলটিও ওই সময় বন্ধ ছিল।
মারিয়ার মা মনুজা বেগম বলেন, তার মেয়ে ভোলায় পৌঁছায়নি বিষয়টি জানতে পেরে তার ছেলেকে সাথে নিয়ে খুঁজতে বের হন। বরিশাল-ভোলা সড়কের আশেপাশে এবং যেখানে রেখে এসেছিলেন সব জায়গায় খবর নেন। কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তী পুলিশ তাকে মোবাইল করে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। সেখানে গিয়ে মারিয়াকে পলিথিনে পেচানো অবস্থায় দেখতে পান। মারিয়া দ্ইু হাত ও দুই পা কোন কিছু দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়েছে। দ্রুত তাকে মেডিকেলে নিয়ে আসেন। মারিয়া তাকে জানিয়েছে মশিউরের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী সোমা এবং ভাই হাসিবসহ ৫/৬জন তার উপর নির্যাতন চালিয়েছে। তার সন্তান নষ্ট করতে পেটে লাথি মারা হয়। এমনকি তাকে বারবার আছাড় দেয়া হয়। তিনি এ ঘটনায় মামলা দায়ের করবেন বলে জানান।
বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে মারিয়াকে উদ্ধার করে তার মাকে খবর দেয়া হয়। তার মায়ের কাছে মারিয়াকে হস্তান্তর করে পুলিশ দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।