২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির আধুনিক সুবিধার সব ব্যবস্থাই বিকল ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির আধুনিক সুবিধার সব ব্যবস্থাই বিকল - ajkerparibartan.com
২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির আধুনিক সুবিধার সব ব্যবস্থাই বিকল

4:42 pm , June 25, 2025

নিম্মমানের নির্মানকাজ, অযতœ ও তদারকির অভাবে শিল্পকলা একাডেমি ভবন ধ্বংসের মুখে

জুবায়ের হোসেন ॥ অযতœ ও সঠিক তদারকির অভাবে বেহাল দশা বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির। বরিশাল জেলার সাংস্কৃতিক চর্চা ও শিল্প সাহিত্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন এই স্থানটি এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। সুন্দর ও মনোরম একটি কাঠামো নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি দাড়িয়ে আছে ঠিকই, তবে এর অভ্যন্তরের মৌলিক সুবিধাগুলো বিকল হয়ে আছে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে। এতে করে কোন রকমের পা টেনে চলছে একাডেমির সার্বিক কার্যক্রম। শুরুর দিকের আধুনিক সব ধরনের সুবিধা সম্বলিত অডিটরিয়ামটি ব্যাবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চকচকে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটির চারপাশে ঠিক আগের ন্যায় নোনায় ধরেছে। অডিটরিয়ামের সিলিং ভেঙ্গে পড়ছে বিভিন্ন স্থান থেকে। ছোট বড় চুরি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। গনপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে নির্মান ও হস্তান্তরের পর ঠিকঠাক চল্লেও গত ৫ আগস্টের পর একবারেই এলামেলো হয়ে পরে তদারকির বিষয়টি। যা এক বছরের মাথায় আকর্ষনীয় এই স্থাপনাটির অবস্থা বেশ খারাপ করে ফেলেছে। পূর্বের জেলা কালচারাল অফিসার হাসানুর রশিদ মাকসুদ এর দায়িত্বহীনতা এই পরিস্থিতির জন্য অনেকটাই দায়ী বলে জানাগেছে। তবে সব সমস্যা কাধে নিয়ে কাজ শুরু করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার আপ্রান চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছেন বর্তমান জেলা কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশ গুপ্ত।
তিনি বলেন, এবছরের ১২ জানয়ারী বরিশালে যোগদান করেন। এসেই দেখেন বেহাল অবস্থা পুরো শিল্পকলা একাডেমির। শিল্পকলা একাডেমির প্রধান আকর্ষন অডিটরিয়ামটির শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা তার আসার আগ থেকেই বিকল। অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার বাইরে থাকা যন্ত্রাংশের মুল কপার তারগুলো চুরি হয়ে যাওয়ায় তা বিকল হয়ে আছে। ৫০০ আসনের এই অডিটরিয়ামে এটি এখন মুল সমস্যা বলে জানিয়েছেন তিনি। অডিটরিয়ামের অত্যাধুনিক এলইডি মনিটরটিও নস্ট হয়ে আছে। এছাড়া চুরি, আশপাশের বস্তিগুলো থেকে আসা মাদকসেবীদের আনাগোনা সহ বখাটেদের অভয়ারন্যে পরিনত হয়ে ছিল এই শিল্পকলা একাডেমি বলে জানান তিনি। দায়িত্বগ্রহনের পর বরিশালের জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন এর সহায়তায় সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক করতে বর্তমানে ৪ জন আনসার নিয়োগ করা হয়েছে। শুরুতে চেয়েছিলেন নিজস্ব চেষ্টায় এই সমস্যাগুলো সমাধানের। যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন ঠিকাদারের সাথেও। কিন্তু সার্বিক ক্ষতি ও তার ব্যয় নির্ধারনের পর দেখেন ৯ লক্ষ টাকার বেশি অর্থের প্রয়োজন। এর পরে তা সমাধানের জন্য বরিশাল গনপূর্ত বিভাগের দারস্থ হন। গত মে মাসের ৮ তারিখ ব্যাবহারের অনুপযোগী একাডেমির অডিটরিয়ামটি সংস্কার ও মেরামতের জন্য ব্যায় প্রাক্কলন তৈরি করার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছেন। আবেদন জানানোর পর নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছেন গনপূর্ত বিভাগের সাথে। শীঘ্রই সমাধান করার প্রক্রিয়া শুরু করার আশ্বাস দিয়েছে গনপূর্ত বিভাগ বলে জানান তিনি। অন্যদিকে এখানকার সংস্কৃতিমনা ব্যাক্তিদের প্রান এই শিল্পকলা একাডেমিতে যাতে করে নিয়মিত সংস্কৃতি চর্চা অব্যাহত থাকে সেজন্য শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি আসার পর বরিশালের সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে এক করার চেষ্টা করছেন। তাদের অংশগ্রহনে সম্মিলিতভাবে শীঘ্রই সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার ব্যাবস্থাও করা হচ্ছে। অসিত বরণ দাশ গুপ্ত বলেন, এত সুন্দর একটি একটি একাডেমি শুধুমাত্র অযতেœ ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠেছে এটা দুঃখজনক বিষয়। তিনি আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছেন এই একাডেমিকে আগের রুপে ফিরিয়ে এনে সাংস্কৃতিক চর্চার যোগ্য একটি পরিবেশ ফিরিয়ে আনার। এখানে কারও প্রভাবে প্রভাবিত না হয়ে শিল্পীদের অধিকার নিশ্চিত কররা জন্য চেষ্টা করবেন।
অন্যদিকে অযতেœর বাইরেও জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনের কাজ অত্যন্ত নি¤œমানের হয়েছে বিধায় এমন অবস্থা বলে অভিযোগ করেছে নগরীর সচেতন মহলের বাসিন্দারা। তারা জানায়, মাত্র ৩ বছর আগে এই স্থাপনাটি হস্তান্তর করেছে গনপূর্ত বিভাগ। যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে সেটি এক বিষয়, তবে সিলিং খুলে পরা, ভবনের বিভিন্ন স্থানের দেয়ালে নোনা ধরা ও প্লাস্টার নস্ট হয়ে যাওয়াটা অবশ্যই কাজের নি¤œমানের বিষয়টি নিশ্চিত করে। অসাধু ঠিকাদারের দ্বারা নি¤œমানের দায়সারা কাজ করিয়েছে বরিশাল গনপূর্ত বিভাগ। যে কারনে এত অল্প সময়ে এমন বেহাল অবস্থা।
সংস্কারের আবেদনের প্রেক্ষিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত বরিশাল গনপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী জিহাদ বলেন, ৩ বছর আগে এই ভবনটি তারা হস্তান্তর করেছেন। বর্তমানে যে সমস্যাগুলো দেখা দিয়েছে তা সমাধানে তারাও চেষ্টা করছেন। অডিটরিয়ামের এসিগুলোই এখন মুল সমস্যা। এই এসিগুলো অন্য সব এসির মত নাহ। তাই এর মেরামতের লোকও আলাদা। তারা এইগুলো মেরামতের পারদর্শি লোকদের দিয়ে অতিদ্রুত ব্যয় প্রাক্কলন এর পর সংস্কার কাজের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে উদ্বোধনের পর ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারী ভবন ও অডিটরিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ডিভিশনাল এবং জোনাল লিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় গনপূর্ত বিভাগ ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমি নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করে। উদ্বোধনের দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতা ও বাহানায় সেই কাজ শেষ হয় ৫ বছরের বেশি সময় নিয়ে। এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক চর্চা ও শিল্প সাহিত্যের উন্নয়নে পুরাতন শিল্পকলা একাডেমি ভবনটি ভেঙে সেখানে এক একর জমিতে ৪ তলা বিশিষ্ট যুগ উপযোগী ও নতুন শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণের কাজ করা হয়। ৫শ আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম, উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ, আর্ট গ্যালারি, লাইব্রেরী, রেস্ট-হাউজ ও অফিস কক্ষসহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণ করা হয়। শিল্পকলা একাডেমি ভবন ও অডিটোরিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রচন্ড আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত ছিল। এ ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের শিল্প-সাহিত্যের বিকাশে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে তাদের আশাবাদ ছিল। তবে বর্তমান অবস্থায় পুরোপুরি হতাশ তারা। হতাশ খোদ শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মরতরা। বর্তমানে অডিটরিয়ামের অকেস্টিক সিস্টেম, আলোকসজ্জা, এলইডি, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মেশিন সব বিকল হয়ে আছে। যে কারনে ভালো কোন অনুষ্ঠান এখন আর এখানে হচ্ছেনা। শুরুর দিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের অনুষ্ঠানগুলো এখানে করলেও এখন তারা আর আসছেনা। সব মিলিয়ে নিম্মমানের নির্মানকাজ, অযতœ এবং সঠিক তদারকির অভাবে আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি আবারো ধ্বংসের মুখে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT