বান্দরোড রাস্তা জুড়ে মোটর সাইকেলের শোরুম ও গ্যারেজ বান্দরোড রাস্তা জুড়ে মোটর সাইকেলের শোরুম ও গ্যারেজ - ajkerparibartan.com
বান্দরোড রাস্তা জুড়ে মোটর সাইকেলের শোরুম ও গ্যারেজ

3:15 pm , June 21, 2025

প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা ॥ হচ্ছে প্রানহানী

জুবায়ের হোসেন ॥ নগরীর বান্দ রোডের চাঁদমারি এলাকা অতিক্রমকালে গত ১৯ জুন ট্রাকের চাপায় পৃষ্ঠ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় এক মোটরসাইকেল আরোহী। ৩৩ বছর বয়সি নিশাদ নামের ওই আরোহী তিতাস গ্যাস কোম্পানির একজন কর্মচারি ছিলেন। নগরীর সাগরদী শেরে বাংলা সড়কের বাসিন্দা নিশাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে গ্রামের বাড়ি বাকেরগঞ্জের কাটাদিয়ায়। বাবাকে হারিয়ে নিশাদের ৬ বছরের শিশু সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা এখন পাগলপ্রায়। ট্রাক বা মোটরসাইকেল কারো ভুলের কারনে এই দুর্ঘটনা ঘটেনি। এর জন্য দায়ী সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা মোটরসাইকেল এর শোরুম ও গ্যারেজ। নগরীর বান্দ রোডের ভাটারখাল এলাকা থেকে শুরু করে শেরে বাংলা মেডিকেল এর জরুরি বিভাগের গেট পর্যন্ত সড়কের এই অংশে এমন ঘটনা নতুন নয়। কয়েক বছর আগে একই স্থানে প্রান গেছে আরো এক ব্যক্তির। প্রতিদিন ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। পুরো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটির পাশে থাকা বেশিরভাগ মোটরসাইকেল গ্যারেজ, পুরাতন মোটরসাইকেল এর শোরুম সহ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যাবসায়ীরা নিজ নিজ প্রয়োজনে প্রধান সড়কের একটি বড় অংশ আটকে রাখে। ওয়ানওয়ে সড়কটি তুলনামূলক সরু হওয়া এবং তার ওপরে সড়কটি মোটরসাইকেল মেরামত সহ পার্কিং এর কাজে ব্যবহারের কারনে ঘটছে বিপত্তি। এরমধ্যে নগরীতে চলা অটো, সিএনজি, মাহেন্দ্রার একটি প্রধান পথ এটি। এরা যাত্রী নেয়া ও নামানোর জন্য যেখানে সেখানে থামিয়ে দেয় যে যার মত করে। এমন পরিস্থিতিতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সড়কের পাশের একাধিক ব্যবসায়ী সহ ওই এলাকার বাসিন্দারা। তারা ভবিষ্যতে অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্য ট্রাফিক বিভাগের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল নগরীর মোটরসাইকেল মেরামতের বেশিরভাগ গ্যারেজ ভাটারখাল থেকে শুরু করে চাঁদামারি পর্যন্ত। এই এলাকায় সড়কের পাশে ৩০-৫০ টি গ্যারেজ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে পুরাতন মোটরসাইকেল, মোটরসাইকেল এর পার্টস সহ নানা ধরনের মালামাল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান। আবার চাঁদমারি থেকে শুরু করে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের গেট পর্যন্ত দক্ষিণ পাশে এক সারিতে ২০-২৫টি এমন প্রতিষ্ঠান। একেকটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গ্রাহকরা আসে মোটরসাইকেল নিয়ে। মেকানিকরা এই মোটরসাইকেলগুলো সড়কের ওপরে রেখেই সবসময় মেরামত করে থাকেন। পুরাতন মোটরসাইকেল এর বিক্রেতারা তাদের মোটরসাইকেল মেরামত সহ গ্রাহকদের দেখাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সড়ক আটকে রাখে। পাশর্^বর্তি ফুটপাত উঁচু হওয়ায় দোকানে না তুলে সহজে এরা রাস্তা আটকে তাদের কাজ করে প্রতিনিয়ত। অন্যদিকে এই সড়কটি নগরীর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ন ও ব্যাস্ততম। নগরীতে চলমান ত্রি-হুইলারের বেশিরভাগ এর চলাচল এই সড়ক দিয়ে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে মালামাল নিয়ে পোর্ট রোড আসার জন্য ভারি যানবাহন চালকরা এই সড়কটি ব্যবহার করে থাকে। গভীর রাতে তারা আসে এবং দিনের বেলা বের হয়ে যায়। সড়কের পাশের অংশ আটকে রাখায় বড় এই যানবাহনগুলো প্রানঘাতি হয়ে উঠছে। সড়কের কোন কোন স্থানে দিনের বেশিরভাগ সময় এমন অবস্থা হয় যে একটি অটোরিক্সা যাওয়ার মত জায়গা থাকেনা। এজন্য নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটে।
ওই এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, বছরের পর বছর ধরে এই অবস্থা। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থে রাস্তা আটকে রাখে বিশেষ করে মোটরসাইকেল এর গ্যারেজগুলো। এখানে কেউ কারো কথা শোনেনা। একদিকে তারা আটকায়, তার পাশে আবার এসে থামে ত্রি-হুইলারগুলো। এর পর আর সড়কে স্থান অবশিষ্ট থাকেনা। এজন্য দুর্ঘটনা ঘটছে আর প্রান যাচ্ছে। একাধিকবার ট্রাফিক বিভাগ সতর্ক করার পাশাপাশি  শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে। কিন্তু নিয়মিত তদারকি থাকেনা তাই কিছুদিন পর পরিস্থিতি আবারো সাবেক অবস্থায় ফিরে যায়। এই ব্যবসায়ী সর্বশেষ দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সড়কের বা পাশে যদি আর এক ফুট জায়গা থাকতো তাহলে হয়ত ছেলেটি বেঁচে যেত। দুর্ঘটনার দিন সড়কের পাশে গ্যারেজের মোটরসাইকেল এর সাথে ধাক্কা লেগে  নিয়ন্ত্রন হারিয়ে মোটসাইকেল আরোহী ছেলেটি আমার চোখের সামনেই ট্রাকের চাকায় পৃষ্ট হয়েছে। এখানে ট্রাক চালকেরও করার কিছুই ছিলো না।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা মোটরসাইকেল ওয়ার্কশপ শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক মো. জামাল সিকদার বলেন, ঘটনাটি খুব মর্মান্তিক। রাস্তা আটকে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল চালকরাও বেপরোয়া থাকে তাই দুর্ঘটনা হয়। গ্যারেজগুলোতে কাজ করাতে আসা ব্যক্তিরা একটু বুঝেশুনে পার্কিং করলে সমস্যা থাকেনা। বিষয়টি নিয়ে আমি দ্রুত সভা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেব।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বরিশালে ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। যানজট ও অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সমস্যা সমাধানে নগরীর যানবাহন চালকদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। বান্দ রোডের এই সমস্যা সমাধান এবং আর যাতে কোন ধরনের অপ্রিতিকর পরিস্থিতির তৈরি না হয় সেজন্য ট্রাফিক বিভাগকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT