4:15 pm , June 19, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সর্বশেষ প্রজনন মৌসুমের পর এবার নগরীতে ব্যাপক হারে বেড়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা। দিনে ও রাতে নগরীর প্রতিটি এলাকায় কুকুরের উপদ্রপে পথচারিসহ যানচালকরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাচ্ছে। নগরীর রাস্তাঘাট, বাজার, আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশে ভবঘুরে কুকুরের দল প্রতিনিয়তই জনসাধারণের জন্য উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর মধ্যে এই সমস্যা শুধু জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিই বাড়াচ্ছে না, বরং নাগরিকদের চলাচল, শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া, হাসপাতালের পরিবেশ এমনকি পর্যটনের পরিবেশকেও প্রভাবিত করছে। পূর্বে নিয়ন্ত্রনে সিটি কর্পোরেশন থেকে পোষ্য বাদে ভবঘুরে কুকুরগুলোকে মেরে ফেলা হত। তবে ২০১২ সালে মামলার প্রেক্ষিতে আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় সেই কার্যক্রমে। এর পর থেকে ১৩ বছর ধরে কুকুর নিয়ন্ত্রনে তেমন কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। তাই বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে জনভোগান্তির কারনে পরিনত হয়েছে। প্রতি বছর নগরবাসীরা কুকুরের কামড়ে আহত হন, যাদের অনেকেই জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ইনজেকশন নিতে বাধ্য হন। শিশু, বৃদ্ধ ও নারীরা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত থাকেন। সারা বছরই এই সমস্যা থাকে তবে প্রজনন মৌসুমে তা ভয়ংকর রুপ ধারন করে। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এবার বেশ কিছু কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করতে যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। কার্যক্রম বাস্তবায়নে সকল পরিকল্পনা গৃহিত হয়েছে যা শিঘ্রই বাস্তবায়ন হবে বলে জানাগেছে।
দিনে রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখো গেছে, প্রতিটি এলাকায় প্রধান সহ শাখা সড়ক গুলোতে ২০-৫০ টি পর্যন্ত কুকুর একসঙ্গে ঘোরাফেরা করতে। যারা এলোমেলো ভাবে সড়ক দখল করে অবস্থান করা, বিভিন্ন ডস্টিবিন থেকে ময়লা আবর্জনা সড়কে নিয়ে আসা, স্কুলগামি ছোট বাচ্চাদের তারা করা, হঠাৎ ছুটে এসে যানবাহনের সামনে চলে আসা, ভবঘুরেদেরে তারা করা সহ কখনও কখনও কামড়ে দেয়ার মত নানা প্রবিন্ধকতা তৈরি করছে। প্রতিদিন এসব কুকুরের উপদ্রপে রাতে বিভিন্ন এলাকার সড়কে চলাচল করতে ভীত হয়ে পড়ছে সাধারন বাসিন্দারা। তারা দলবদ্ধ হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে যা পথচারিদের জন্য ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করছে। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে শিশুদের পথে একা ছাড়তে ভয় পাচ্ছে অভিভাবকরা। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রনহীন কুকুরের কারনে নগরীর পরিবেশের বিপর্যয় হচ্ছে। নগরীর দীর্ঘদিনের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন এখন নগরবাসীর অন্যতম দাবীতে পরিনত হয়েছে। নগরীর সাগরদী শেরে বাংলা সড়কের বাসিন্দা মো. শাহাদাৎ হোসেন বিপ্লব বলেন, তাদের সড়কে রাতের বেলা শতাধিক কুকুর ঘোরাফেরা করে। শুধুমাত্র শেরে বাংলা সড়ক ও হাউজিং এর মধ্যে কয়েকশত বেওয়ারিশ কুকুর রয়েছে যারা দিনে রাতে দাপিয়ে বেড়ায়। এদের যন্ত্রনায় এখন শিশুদের ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু শিশরাই নয় রাতের বেলায় এই কুকুরের তারায় প্রায় প্রতিদিন মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার কবলে পরছে। গত সপ্তাহে কুকুরের তারায় এক ব্যাক্তি পুকুরে লাফ দিয়ে আত্বরক্ষা করেছে। আগেও কুকুর ছিল তব এবার এই সংখ্যা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। দ্রুত সিটি কর্পোরেশন থেকে ভবঘুরে কুকুর নিয়ন্ত্রনে পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে নগরীর সচেতন বাসিন্দারা বলেন, মানবিকভাবে এই সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। তা না হলে দীর্ঘদিনের এই সমস্যা প্রকট আকার ধারন করবে।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) ভবঘুরে কুকুরের উপদ্রব থেকে নগর বাসীকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পূর্বে সিটি কর্পোরেশনগুলো রাস্তা থেকে কুকুর ধরে নিধন করার নীতি গ্রহণ করত। কিন্তু এর ফলে জলাতঙ্ক বা জনস্বাস্থ্য সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। বরং আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিবাদ হয়, এবং প্রাণিকল্যাণ সংগঠনগুলো হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। আদালত ২০১২ সালে কুকুর নিধন কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বর্তমান নগর প্রশাসক মোঃ রায়হান কাওছার কুকুরের উপদ্রপ সহনশীল রাখতে বেশকিছু কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন বলে জানায় বিসিসি সূত্র। “কুকুর হত্যা নয়, মানবিক ব্যবস্থাপনা।” তাই এখন কুকুর ধরার পর তাদের বন্ধ্যা করণ ও টিকাদান করে পুনরায় ছেড়ে দেওয়া হবে। এই কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে শহরের ছয় হাজার কুকুরকে র্যভিস ভ্যাক্সিনের আওতায় আনা। ইতিমধ্যে ৬০০০ ভাক্সিন সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রশিক্ষিত ১০ জন ভলান্টিয়ার ট্র্যাপার ও ফিল্ড টিম সহ সিটি কর্পোরেশনের ভ্যাটেইনারী সার্জন, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্ময় এই কার্য্ক্রম বাস্তবায়নে একাধিক টিম ইতিমধ্যে গঠন করা হয়েছে। শিঘ্রই কার্যক্রম শুরু হতে বলে নিশ্চিত করেছে বিসিসি কর্তৃপক্ষ। পরবর্তিতে পুরুষ কুকুর বাছাই করে বন্ধাত্ব করণ কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে।