2:56 pm , June 19, 2025

বিএনপির বরিশাল-৩ আসনের নির্বাচন
জসিম জিয়া ॥ বিএনপির দুই হেবিওয়েট নেতা একজন সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। আরেকজন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এ দুই নেতাকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে দুই ধারায় বিভক্ত বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। যদিও প্রকাশ্যে এই বিরোধ ততটা দেখা যায়না। বিভক্তির মূল কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যার শুরুটা হয়েছিলো ২০০৮ সাল থেকে। এরপর টানা ১৬ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুবাধে বিরোধ কিছুটা চাপা ছিলো। কিন্তু ৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনা সরকার পতনের পর স্বরুপে ফিরেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। হেভিওয়েট দুই নেতাই আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় টিকিট চাইছেন। শুরু করেছেন নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা। সেলিমা রহমান-জয়নুল আবেদিনের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছেন উদীয়মান তরুন নেতা ব্যারিষ্টার মনিরুজ্জামান আসাদ। তিনিও আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় টিকিটের আশায় মাঠে কাজ করছেন।
বাবুগঞ্জ-মুলাদী উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৩ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সব নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। আসনটি ২০০৮ সালে প্রথমবারের মত হাতছাড়া হয় দলীয় কোন্দলের কারণে। ওই নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। অপরদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা গোলাম কিবরিয়া টিপু। নির্বাচনে ৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান ধানের শীষের প্রার্থী সেলিমা। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জয়নুল আবেদীন পেয়েছিলেন ১৭ হাজার ভোট। তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে বিপুল ভোটে বিজয়ী হতেন ধানের শীষের প্রার্থী।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় খুব সহজেই আসনটি দ্বিতীয়বারের মত হাতছাড়া হয়। ওই নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওয়ার্কাস পার্টির নেতা শেখ টিপু সুলতান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন জয়নুল আবেদীন। কিন্তু লাঙ্গলের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুর কাছে তিনি পরাজিত হন। যদিও এটা ছিলো সম্পূর্ন প্রহসনের নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলো আওয়ামী লীগ কিংবা অন্য কোন দলের প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিলোনা।
সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাঠে ছিলোনা। এ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুর বড় প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান। অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হতেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান।
১৯৯১ থেকে ২০২৪ এই সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৭টি সংসদ নির্বাচনে তিনবারই জিতেছিলো বিএনপির প্রার্থী। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ধানের শীষের প্রার্থী মোশারেফ হোসেন মঙ্গু। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল বারীকে ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ১৯৯৬ এর নির্র্বাচনেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হন মোশারেফ হোসেন। ওই নির্বাচনেও এখানে নৌকার টিকিট পেয়েছিলেন আব্দুল বারী।
২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অস্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে তৃতীয়বারের মত এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী মঙ্গু। এ নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আফজালুল করিম। নৌকার চেয়ে ধানের শীষের প্রার্থী ৩০ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন। ওইবার সরকার গঠন করে বিএনপি তথা চারদলীয় জোট।