২২২ কোটি টাকার মাছ হারিয়ে বরিশালের ঘের মালিকরা নি:স্ব ! ২২২ কোটি টাকার মাছ হারিয়ে বরিশালের ঘের মালিকরা নি:স্ব ! - ajkerparibartan.com
২২২ কোটি টাকার মাছ হারিয়ে বরিশালের ঘের মালিকরা নি:স্ব !

4:26 pm , June 17, 2025

বানের পানিতে ভেসে যাওয়া মাছ রক্ষার কৌশল জানা নেই মৎস্য বিভাগের

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবে বানের পানিতে বরিশালের ৯৪ হাজার ঘের, পুকুর, বিল ও খামারের মাছ, কাকড়া এবং কুইচ্চা রক্ষার কোন কৌশল মৎস্য বিভাগের জানা নেই। এ অবস্থায় সর্বস্ব হারানো  ঘের ও খামার চাষিরা এখন শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। তাদের দাবি মৎস্য বিভাগ দুর্যোগ থেকে মাছ রক্ষার কোন প্রশিক্ষনও আজ পর্যন্ত তাদের দিতে পারেনি।
উজিরপুর এলাকার বড়াকোটার চাউলা বাজার এলাকার খামার মালিক মোহাম্মদ আলী ডাকুয়া এখন নি:স্ব প্রায়। ঘুর্ণিঝড় রিমালের সময় চোখের পলকে তার তিনটি প্রকল্পের মাছের ঘেরের সব মাছ নদীতে ভেসে  যায়। আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৫০ লাখ  টাকা। সেই থেকে মৎস্য বিভাগ থেকে আজ পর্যন্ত কেউ তার খোঁজ নিতে আসেনি। তাই ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনায় আজো তার চোখ ফেটে আসে জল।
খামার মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, কেউ কথা রাখেনি। রিমালে আমার ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের তিনটি মাছ প্রকল্পের সব মাছ চোখের পলকে বেরিয়ে গেছে। আমি কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। আমরা মৎস্য অফিসে তাৎক্ষনিক সব জানিয়েছিলাম। ওরা একবার দেখতে এলেও আমাদের দু:খ ছিলো না। আমি হৃদ রোগী, মৃতপ্রায় অবস্থার মধ্যে পড়ছিলাম।
গেলো বছরের ২৬ মে ঘুর্ণিঝড় রিমালের সময় জলোচ্ছাসে চোখের পলকে বরিশাল বিভাগের প্রায় ৯৪ হাজার ঘের, পুকুর, বিল ও জলাশয়ের মাছ এবং ১২০ টি খামারের কাকড়া ও কুইচ্চা পানিতে ভেসে চলে যায়। এতে খামারিদের ক্ষতি হয় ২২২ কোটি  টাকা। স্থানীয় চাউলা বাজার, একতাবাজার, হারতা শিবপুরহ প্রায় ৩০টি গ্রামের এসব জলাশয়ে চাষ করা পাঙ্গাস, রুই, কাতলা, মৃগেল, চিংড়ি,পাবদা সহ অন্তত ২০ প্রজাতির মাছ নিমেশেই বের হয়ে যায় বানের তোড়ে। মাছ রক্ষার ন্যূনতম কৌশল জানা না থাকায় খামারিরা কিছুই করতে পারেননি।
একজন খামারি বলেন, আমাদের প্রায় সবার বাড়ি নদীর তীরে। ঝড়-বন্যায় পানি ফুসে সব তলিয়ে যায়। চোখের সামনে ঘেরগুলো মাছশূন্য হয়ে যায়। মৎস্য বিভাগ আসে না।
অন্যজন বলেন, মৎস্য বিভাগ কখনোই আসে না, আমরা পানিতে ভেসে বেড়াই। ওদের আমরা চিনিই না। কোন লোকই আমাদের কাছে আসে না। মাছ কিভাবে রক্ষা করবো তা আজ পর্যন্ত ওরা বলেনি।
অপরজন বলেন, গত তিন মৌসুম থেকে আমাদের মাছ ভেসে যাচ্ছে, আমরা রক্ষা করতে পারি না। মাছ রক্ষা কিভাবে করবো সে বিষয়ে আজ পর্যন্ত আমাদের কোন প্রশিক্ষন দেয়া হয়নি। গতানুগতিক নেট দেই পুকুরপাড়ে কিন্তু বানের তোড়ে তাও ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, অধিকাংশ ঘের ও খামার চাষিরা বিভন্ন স্থান থেকে ঋণ নিয়ে মাছের চাষ করে থাকে। অথচ দুর্যোগে তারা কোন সহায়তা পায় না। এমনটা নিরসনে তারা ঘেরের মালিক ও খামারিদের নিবন্ধনের কাজ শুরু করবেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারি পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন,  যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষি ও শস্য চাষিরা সরকারের কাছ থেকে প্রনোদনাসহ সহযোগিতা পেলেই খামারিরা কিছুই পায় না। এরা অধিকাংশ ঋণগ্রস্ত। এদের সহায়তা করা না গেলে, এরা মরে গেলে  তার বিরুপ প্রভাব পড়বে মৎস্য চাষে। এটা হতে দেয়া যায় না। এজন্যই আমরা ঘের ও খামার পর্যায়ে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করেছি।
মৎস্য অধিদপ্তর বরিশালের পরিচালক আলফাজ উদ্দিন শেখ বলেন, আসলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ঘুর্ণিঝড়ের জলোচ্ছাস থেকে মাছ রক্ষার কোন কৌশল এখনো আবিষ্কার হয়নি। স্বাভাবিক বৃষ্টির উপচে পড়া পানি থেকে মাছ রক্ষার ব্যাপারে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের জন্য বীমা চালু করা গেলে চাষিরা যে কোন বিপর্যয়ের পর ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
বরিশালে প্রায় এক লাখ ১২ হাজার  মৎস্য ক্ষেত্র থেকে প্রতিবছর গড়ে এক লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT