4:01 pm , June 16, 2025

বাল্য বিয়ে ও পারিবারিক অসচেতনতাকে দায়ী করা হচ্ছে
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ সদ্যজাত শিশু মৃত্যুর হার বেড়েছে। আগাম ও কম ওজন নিয়ে জন্ম, শ্বাসকস্ট আর খিচুনিতে এরা মারা যাচ্ছে বেশি। বাল্য বিয়ে এবং মায়ের অপুস্টির জন্য এসব হচ্ছে বলে চিকিৎসকদের ধারনা। এটি নিয়ন্ত্রনে পারিবারিক অসচেতনতাকেও দায়ী করা হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীদের অবহেলাও রয়েছে।
বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষায়িত নবজাতক সেবা কেন্দ্রের সামনে বেশ কিছুদিন ধরে মায়েদের প্রচন্ড ভিড়। কেননা ঝুকিপূর্ণ সদ্যজাত শিশুদের এখানে প্রাণে বাচাঁনোর চেস্টা চলছে। মারাত্মক কম ওজন নিয়ে জন্মা এসব শিশুদের এখানে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। অধিকাংশ শিশুর জন্মই হয়েছে আগাম। এদের নিয়ে বিব্রত নার্সরাও। সদ্যজাত শিশুর ওজন কমপক্ষে আড়াই কেজি হবার কথা থাকলেও এখানে যারা আসছে তাদের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজির মধ্যে। নানা জটিলতায় এরা জর্জরিত থাকছে।
নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা বিধান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, নবজাতকের মৃত্য যে তিনটি কারনে হয় তা হলো জন্মগত শ্বাস কস্ট, ইনফেকশন ও আন্ডার ওয়েট (কম ওজন)। এই তিনটি উপসর্গের সব গুলোই এখানকার রোগীদের মধ্যে রয়েছে। আমরা ৮০০ গ্রাম ওজনের শিশুকেও বাঁচানোর চেস্টা করছি। এর জন্যই এ খানে শিশু মৃত্যু হার ও চ্যালেঞ্জ দুটোই বেড়ে যাচ্ছে। এখানে শিশুদের বাঁচাতে আরো জনবল দরকার বলে মনে হচ্ছে।
গত বছর এই কেন্দ্রে অপুস্টির শিকার এমন ১০ হাজার ৬৩৪ জন শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে যাদের মধ্যে মারা গেছে ১৪২১ জন শিশু। ২০২৩ সালে এমন শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ১৪২৫ জন এবং ভর্তি ছিলো ১০ হাজার ১১৪ জন। ২০২২ সালে এখানে ভর্তি হওয়া ৯ হাজার শিশুর মধ্যে মারা যায় ১৪১৫ জন।
কর্তব্যরত সেবিকারা জানান, গ্রামে গঞ্জে জন্ম নেয়া সদ্যজাত শিশুদের যে প্রক্রিয়ার হাসপাতালে আনা হচ্ছে তা মানহীন হওয়ায় ভর্তির পরক্ষনেই শিশুরা মারা যাচ্ছে। এদের বেশির ভাগই, শ্বাসকস্টে ভোগে। হাসপাতালে আনাও হচ্ছে শোচনীয় অবস্থায়। তাদের মতে আবহাওয়ার পরিবর্তন, সন্তান গ্রহনে অসচেতনতা এর জন্য দায়ী। এছাড়া এ হাসপাতালে নার্স সংখ্যা রয়েছে সীমিত।
এখানকার এক সেবিকা জানান, আগাম জন্মনেয়া এসব স্বল্প ওজনের শিশুদের উপর বর্তমান চলমান আবহাওয়া প্রভাব ফেলছে। এদের ওজন এতোটাই কম থাকে যে এরা এমন আবহাওয়া ধারন করতে না পারায় অনেকেই পথে মারা যায়।
অন্যজন বলেন, বর্তমানে বাল্য বিয়ের পর ২০ বছরের আগে বাচ্চা নিতে গিয়ে এ সমস্যা হচ্ছে। এজন্য শিশুরা মৃত্যু ঝুকিতে পড়ছে, এমনকি মায়েরাও নিরাপদে নেই।
হাসপাতালে এমন রোগীর চেয়ে নার্স সংখ্যা খুবই কম। স্পর্শ কাতর এ ওয়ার্ডে নার্সের সংখ্যা কম হওয়াতে শিশু বাঁচাতে পর্যাপ্ত সেবাও দেয়া যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত সেবা দেয়া গেলে মৃত্যুহার কমিয়ে আনা যাবে।
এ বছর প্রথম ৫ মাসে এ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪ হাজার ১৬৯ জন সদ্যজাত শিশুর মধ্যে ইতিমধ্যেই মারা গেছে ৫৩৯ জন। সদ্যজাত শিশু মৃত্যুর জন্য গর্ভজাতকালীন মায়ের অজন্তকে চিহ্নিত করছেন সংশ্লিস্টরা। তারা গৃহস্থে সন্তান জন্মের বিরোধিতা করে বলেছেন এগুলো বন্ধ করিয়ে কঠোর হতে হবে। তবে এক্ষেত্রে মা ও স্বজনরা জানান গ্রাম পর্যায়ে মাতৃকালীন পরামর্শ এমনকি বাল্য বিয়ে বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের মতে সন্তানের জন্ম নিয়ে প্রতি মূহুর্তে তারা ধকলের শিকার হচ্ছেন
স্বজনরা বলেন আমার নাতনির বাল্য বিয়ে হয়েছে। চেয়ারম্যান মেম্বরেরা কিছুই বলেনি। এখন শিশু জন্ম হয়েছে স্বল্প ওজন নিয়ে। গর্ভধারী ও গর্ভজাত সন্তানের যতেœর ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগে গিয়েও কোন তথ্য পাইনি।
অন্যজন বলেন ঝুকিপূর্ন শিশু হলে মাকেই বড় ঝুঁিকতে থাকতে হয়। আমরাও পড়ি বিপদে। একবার মা একবার সন্তানের কাছে দৌড়াতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে এ বিষয়ক কোন সচেতনতা কেউ করেনা।
তার মতে মা ও শিশু পুস্টির বিষয়ে কেউতো কিছু বলে না। আমরা ডাক্তার দেখিয়ে তার পরামর্শ শুনি কিন্তু আগাম সতর্কতা পাই না।
তবে হাসপাতালের নবজাত সেবা কেন্দ্রে শিশু মৃত্যু বৃদ্ধির হারকে স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান যে আগান সন্তান জন্মের হার কমানো গেলে কম ওজনের শিশু সংখ্যা কমানো যাবে, ঠেকানো যাবে শিশু মৃত্যুর হার। তাছাড়া এক্ষেত্রে সঠিক সময়ে শিশুর জন্ম, পরিচর্চা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। বরিশালে সদ্যজাত শিশু মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রনে আনতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।
হাসপাতালের উপপরিচালক ড এস এম মনিরুজ্জামান, বলেন নারীর গর্ভকালীন সময় ও প্রসব কালীন এবং প্রসব পরবর্তিতে যে পরিচর্চা দরকার তা হয়েছে কি না তা দেখা দরকার। মা ও শিশুর জন্মকালীন ঝুঁিকর কতক্ষন তারা হাসপাতালে এসেছে সেটিও দেখা দরকার। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষেপন হয়ে গেলে চিকিৎতা দেয়ার সুযোগ থাকে না। তাছাড়া আমাদের হাসপাতালে বেডের সংখ্যাও কম কিন্তু শিশু ভর্তি হচ্ছে বেশি। এমনটা হলে বিপদ এড়ানো দায় হয়ে পড়ে।
বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ বেডের নবজাতক ওয়ার্ডে সার্বক্ষনিক ঝুকিপূর্ণ শিশু ভর্তি থাকে প্রায় দেড় শতাধিক।