আগাম বর্ষায় বরিশালের ৪০টি স্থানে ভাঙ্গন ॥ বিপর্যস্ত গ্রামীন জনপদ আগাম বর্ষায় বরিশালের ৪০টি স্থানে ভাঙ্গন ॥ বিপর্যস্ত গ্রামীন জনপদ - ajkerparibartan.com
আগাম বর্ষায় বরিশালের ৪০টি স্থানে ভাঙ্গন ॥ বিপর্যস্ত গ্রামীন জনপদ

2:53 pm , June 14, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ এবারে আগাম বৃষ্টি শুরু হওয়াতে বরিশালের অন্তত ৪০টি স্থানে নতুন করে তীব্র নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। অনেকটা হঠাৎ করেই নদী তীরবর্তি এলাকার বসতবাড়ি রাতারাতি ডেবে যাচ্ছে নদীতে। বালুর বস্তা ফেলে রোধ করা যাচ্ছে না ভাঙ্গন। নাদী ভাঙ্গনকবলিতদের দাবি স্থায়ী বাঁধের। কর্তৃপক্ষ চেয়ে আছে বরাদ্দের দিকে।
গত ২৭ এপ্রিল মধ্যরাতে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার নারিকেলী গ্রামের ৭ ভিটার একবাড়ি চোখের পলকে ভেসে যায় সন্ধ্যা নদীতে। এসব পরিবার এখন অন্যের ভিটায় উদ্বাস্তু হয়ে বেঁচে আছে। ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, নিজ ভিটেতে এসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া তাদের এখন আর কিছুই করার নেই। তাদের কাছে নদীর জল আর চোখের জলের মর্ম সমান। ক্ষতগ্রস্তদের একজন বলেন, ২৭ এপ্রিল দিবাগত রাত ১টা নাগাদ চোখের পলকে আমাদের তিনটি ঘর নদীতে নেমে গেছে। আমরা কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। আমরা এখন নদীপাড়ে এসে ক্ষতবিক্ষত ভিটের দিকে তাকিয়ে থেকে শুধু চোখের জল ফেলি।
অপর একজন বলেন, আমরা এক উঠোনের চারপাশে চার ভিটায় চার ভাই ছিলাম। নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এখন আমরা বিচ্ছিন্ন। এই নদী একের পর এক ভাঙ্গতেই আছে, রোধ নেই কোথাও। রাতে ঘুমাই ঘরে, সকালে উঠে দেখি ঘরের অর্ধেকটাই নদী। আমাদের রাস্তা, স্কুল, বাজার, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সবই নদীতে চলে গছে। এখন আছে শুধু নদীর পানি আর চোখের পানি। আমরা এখন মানুষের ঘরে থাকি। তারা একদিন ভালো ব্যবহার করে তো তিনদিন বলে চলে যেতে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ি বর্তমানে প্রায় এক লাখ জিও ব্যাগ ফেলে এখানে কোন রকমে ভাঙ্গন ঠেকানো হচ্ছে। কিন্তু নারিকেলী গ্রামের ৯৫০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার অস্থায়ি এই সমাধানে খুশি হন বরং বিরক্ত। তারা তাদের ভিটে রক্ষায় স্থায়ি বাঁধ চেয়েছেন
ক্ষতিগ্রস্ত এক নারী বলেন, এই ভিটায় এসেছি বউ হয়ে, ইচ্ছা ছিল এখানেই মরবো। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে। পরনের কাপর ছাড়া আর কিছুই নেই। ভিক্ষে করে খাবার মতো একটা থালাও নেই। সরকার দিয়েছে কিছু বালুর বস্তা, এটাও টেকসই হবে কি না জানিনা।
আমাদের সবই ছিলো, এখন কিছুই নেই। এখন এখানে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে, এতে মনে হয় কোন কাজ হবে না। দ্রুত এখানে ব্লক ফেলা না হলে এই গ্রামটাই নদীতে তলিয়ে যাবে।
৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সন্ধ্যা নদী এবারে যেন ভিন্নভাবে ফুসেছে। বর্তমানে নারিকেলী, রহিমগঞ্জ, রমজানকাঠী, শিকারপুর, চাউলা হাট,লস্করপুর, ভবানীপুরসহ অন্তত ৩০ গ্রামের ১৫ কিলোমিটারজুড়ে চলছে সন্ধ্যার ভাঙ্গন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: মাহমুদুন্নবী বলেন,
আড়িয়াল খাঁ থেকে শুরু করে কঁচা নদী পর্যন্ত দীর্ঘ ৬১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সন্ধ্যা নদীতে যেমন গভীরতা বেশি তেমনি এতে বাঁকও অনেক বেশি। বাঁকে বাঁকে এভাবে ভাঙ্গন রয়েছে। ইতিমধ্যে এখানে নদী জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। স্থায়ি বাঁধ নির্মানের সুপারিশ রয়েছে। আমরা বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করে দেবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে এবছর বরিশালের ৩৮টি নদীর সবখানেই ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। তবে সন্ধ্যা, সুগন্ধা, তেতুলিয়া, মেঘনার শাখা, কালাবদর, তালতলী, আড়িয়াল খাঁসহ ১২টি নদীর ৪০টি স্থানে ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাভেদ ইকবাল বলেন, বরিশালের ৩৮ নদীর সবকটিতেই বাঁক বেশি। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে পানি ধারন ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এ কারণে নদীর ভাঙ্গন তীব্র হচ্ছে। আমরা ভাঙ্গনের ৪০টি স্পট চিহ্নিত করেছি। এ ভাঙ্গন রোধে ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৯ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে।
উল্লেখ্য ২০২০ সাল থেকে বরিশালের বিভিন্ন নদীর ৩৪ কিলোমিটার এলাকার নদী ভাঙ্গন রোধে ২৬শ কোটি টাকার ৫টি প্রকল্প এর কাজ চলমান রয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT