4:56 pm , June 3, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথমবারের মতো অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের কার্যক্রম শুরু করেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। ফলে এখন থেকে কোন ধরনের হয়রানি ছাড়াই গ্রাহকরা ঘরে বসেই এ সেবা গ্রহন করতে পারবেন। নগরভবনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহনের পর বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কায়ছারের সদিচ্ছার ফলে এ কার্যক্রম শুরু করা গেছে। অনলাইন সেবা সুবিধা প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিসিসির রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার বলেন, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধকল্পে প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে এই সেক্টরটি অনলাইন সেবার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সিস্টেমটাও অনেক সহজ। ঘরে বসেই এখন মিলবে এ সেবা। তিনি আরও বলেন, আগে হাতে লেখা ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হতো। এখন সেই সুযোগ আর নেই। পুরনো লাইসেন্স নবায়ন বা নতুন করে লাইসেন্স করতে গেলে সেগুলোকে অনলাইনে কনভার্ট করে দেওয়া হচ্ছে। বরিশাল নগরীতে এই প্রথম ব্যবসায়ীদের ই-ট্রেড লাইসেন্স দেয়া উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লাইসেন্স মালিকের মোবাইল ফোনে তার লাইসেন্স সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য চলে যাবে। তারা পরবর্তী সময়ে ঘরে বসেই লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করে নিতে পারবেন।সূত্র জানায়, প্রশাসক রায়হান কাওছার দায়িত্ব গ্রহনের পরপরই অনলাইন বা ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী বিসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও আইটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন রোমেল কার্যক্রমটি বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম করে উদ্যোগটি কার্যকরে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এ প্রসঙ্গে বিসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন আর কাউকে আমাদের কাছে আসতে হবে না। ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করতে এলে সেটা অনলাইনে যুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে অনলাইন থেকে লাইসেন্স প্রিন্ট করে নেওয়া যাবে।তিনি আরও বলেন, এ পদ্ধতি অনেক সহজ। তার (রোমেল) দেয়া তথ্য মতে, অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করতে হলে প্রথমেই অনলাইনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে ঢুকলেই একটি নিবন্ধন ফরম পাওয়া যাবে। সেখানে নাম, মোবাইল ফোন নম্বর, ই-মেইল, ব্যবসার ধরনসহ কিছু তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। একটি নিবন্ধন নম্বরও পাওয়া যাবে। সেটা সাবমিট করলে আরেকটি ফরম আসবে। সেখানেও চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর যুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র স্ক্যান করে যুক্ত করতে হবে। এরপর সেটা সাবমিট করলে একটি মেসেজ যাবে গ্রাহক ও সংশ্লিষ্ট শাখার দায়িত্বরতের মোবাইলে।এরপর কাগজপত্র যাচাই করার পর একটি ফিরতি মেসেজ যাবে সেবাগ্রহীতার মোবাইল ফোন ও ই-মেইলে। ফিরতি মেসেজে ফির পরিমাণ ও জমা দেওয়ার বিষয়ে অবহিত করা হবে। সেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড বা নগদে ব্যাংকে গিয়ে ফি পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া বিকাশ, রকেট বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও টাকা পরিশোধ করা যাবে। ফি জমার পরপরই সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স শাখার সংশ্লিষ্ট’র মোবাইল ফোনে মেসেজ যাবে।তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে সঙ্গে সঙ্গে একটি ই-ট্রেড লাইসেন্স চলে যাবে সেবাগ্রহীতার ই-মেইলে। একটি মেসেজও যাবে তার মোবাইল ফোনে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ এক থেকে তিন দিন। গ্রাহক একদিনের মধ্যে সবকিছু শেষ করতে পারলে দু’দিনের মধ্যেও তা হয়ে যেতে পারে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কোথাও কোনও তথ্য বা কাগজপত্রের ঘাটতি বা কোনও ভুল থাকলে সঙ্গে সঙ্গে সেবাগ্রহীতার মোবাইল ফোন ও ই-মেইলে মেসেজ যাবে। তিনি সেটা সংশোধন করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একইভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। রোমেল আরো বলেন, আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কর্পোরেশনের অর্থ সাশ্রয়ের চিন্তা করেছি। বিনাপারিশ্রমিকে একটি অনলাইন সেবা চালু করার চেষ্ঠা করেছি মাত্র। এ থেকে গ্রাহক উপকৃত হলে তাতেই স্বার্থকতা। জানতে চাইলে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর নগর সেবায় আমূল পরিবর্তন আনতে প্রশাসক মহোদয় বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। অনিয়ম রোধ করার উদ্যোগ হিসেবে প্রায় সব কাজ ডিজিটালাইজেশন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কাজ শুরুর জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে ই-ট্রেড লাইসেন্স কার্যক্রম চালু হলো। এখন বিসিসির নাগরিকরা ঘরে বসেই এ সেবা নিতে পারবেন। এর আগে দেখা গেছে, নাগরিকদের ট্রেড লাইসেন্স করতে এসে নানাবিধ ভোগান্তি পোহাতে হতো। এখন থেকে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে ই-ট্রেড লাইসেন্স সেবা নিতে পারবেন। এব্যাপারে বিসিসির প্রশাসক রায়হান কাওছার বলেন, দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। অনলাইনে ভোগান্তিমুক্তভাবে সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের কার্যক্রম আমরা শুরু করেছি। এর মাধ্যমে অফিসে না এসেই ব্যবসায়িরা ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার সুযোগ পাবেন। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে দুর্নীতির সুযোগ কমবে বলে আমি মনে করি।