২৫ বছরে ব্যয় ৪শ কোটি টাকা ! ফলাফল শূন্য !! ২৫ বছরে ব্যয় ৪শ কোটি টাকা ! ফলাফল শূন্য !! - ajkerparibartan.com
২৫ বছরে ব্যয় ৪শ কোটি টাকা ! ফলাফল শূন্য !!

4:25 pm , June 1, 2025

বিশেষ প্রতিবেদক ॥  বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে গত ২৫ বছরে বিআইডব্লিউটিসি ৪ শতাধীক কোটি টাকায় ৩টি নৌযান সংগ্রহ ও দুটির পুনর্বাসন করলেও তা কাজে আসেনি। এমনকি বিশ^ ব্যাংকের সুপারিশে দেশের উপকূলভাগে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনকে সরকার ‘গণদায়বদ্ধ সেবাখাত’ হিসেবে ঘোষনা করে প্রতিবছর বিআইডব্লিউটিসি’কে নগদ ভর্তুকি প্রদান করে আসছে। অথচ দুটি পুরনো নৌযান পুনর্বাসনসহ ৩টি নতুন নৌযান সংগ্রহ হলেও বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে নিরাপদ ও নির্বিঘœ দূরের কথা, ২০১১ সালের মে মাস থেকে নৌ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অরো ৪টি উপকূলীয় নৌযান চালুর কথা রয়েছে।
দেশের সর্বাধিক দৈর্ঘ্যরে উপকূলীয় নৌপথের জন্যই চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যায়ে ‘এমভি বার আউলিয়া’ নামে একটি যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করা হয় ২০০২ সালে। এরপর প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে ‘এমভি আবদুল মতিন ও এমভি মনিরুল হক’ নামে দুটি উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযান পুনর্বাসন করা হয় ২০০৮-০৯ সালে। কিন্তু এদুটি নৌযান পুনর্বাসনের নামে পুকুর চুরির ফলে তা নির্বিঘেœ ৩ বছরও চলাচল করতে পারেনি। দীর্ঘদিন বিকল থাকার পরে ইতোমধ্যে দুটি নৌযান নিলামে বিক্রী করা হয়েছে। ‘চলাচলের অযোগ্য’ ঘোষিত ‘এমভি আলাউদ্দিন আহমদ’ চট্টগ্রামের কর্ণফুলি শীপ বিল্ডার্স’ নিলামে কিনে নিয়ে পুনর্বাসনের মাধ্যমে ‘এমভি কর্ণফুলি এক্সপ্রেস’ নামকরণ করে চট্টগাম থেকে হাতিয়া-মনপুরা হয়ে ভেলার বেতুয়া পর্যন্ত চলাচল করছে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটি ‘এমভি বার আউলিয়া’ নৌযানটিও ইজারা নিয়ে ঐ রুটে চালাচ্ছে। অথচ ‘এমভি বার আউলিয়া’ সংগ্রহের পরে গত ২২ বছরে তার পুনর্বাসন ও নতুন ইঞ্জিন সংযোজনে আরো প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যায় হয়েছে। কিন্তু নৌযানটির পুনর্বাসন ও মেরামতের অর্থও ইজারার অর্থ থেকে সংগ্রহ করতে পারেনি সংস্থাটি।
গত ৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে ঢাকাÑচাঁদপুরÑবরিশালে রকেট স্টিমার সার্ভিস বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে চাঁদপুর হয়ে রেলপথে চট্টগ্রাম পৌছার বিকল্প পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পৌছতে এখন ২৪ ঘন্টারও বেশী সময় লাগছে।
অপরদিকে ২০২১ সালের শেষের দিকে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যায়ে “চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ-হাতিয়া-বরিশাল উপকূলীয় রুটে দক্ষ যাত্রীবাহী সার্ভিস পরিচালনার লক্ষ্যে যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণ” শীর্ষক প্রকল্প’র আওতায় ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ ও ‘এমভি আইভি রহমান’ নামের দুটি উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করে বিআইডব্লিউটিসি। যার ৭৫ ভাগ অর্থই প্রদান করে সরকার। ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে নৌযান দুটির পরিক্ষামূলক পরিচালন’এর পরেই নানামুখি প্রতিবন্ধকতার কথা বলে বানিজ্যিক পরিচালন আর শুরু করেনি রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। তবে নৌযান দুটি বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটের পরিবর্তে চট্টগ্রামÑহাতিয়া এবং কুমিড়াÑগুপ্তছড়া রুটে চলছে। জুলাই-আগষ্ট অভ্যুত্থানের পরে  এমভি টেকনাফ ও এমভি মালঞ্চ নামকরণ করা হয়েছে।
তবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নৌযান দুটি পরিক্ষামূলক পরিচালনের পরে কিছুদিন বিআইডব্লিউটিসি’র তরফ থেকে চট্টগ্রাম-বরিশাল নৌপথের নাব্যতা সংকটের কারণে সার্ভিসটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বিআইডব্লিউটসি’র এসব বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষন করে বিআইডব্লিউটিসি এর দায়িত্বশীল মহল জানায় ‘চট্টগ্রাম থেকে হাতিয়া হয়ে ভোলার ইলিশাঘাট পর্যন্ত কোথাও ন্যূনতম নাব্যতা সংকট কখনোই ছিলো না। বিআইডব্লিউটিসি এর যুক্তি ছিল ‘যাত্রীবাহী এসব নৌযানের লোডেড ড্রাফট ৯ফুটেরও কম অথচ এ নৌপথে ১৫-২০ ফুট গভীরতার পণ্য ও জ¦লানিবাহী নৌযান চলাচল করছে কিভাবে ?
তবে অপর একটি সূত্রের মতে, নৌযান দুটিতে তুলনামূলক কম শক্তির ইঞ্জিন সংযোজন করায় তার গতি ১০ নটের বেশী নয়।  অথচ ভাটার সময় ইলিশাঘাট থেকে হাতিয়া হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৭Ñ৮ নট গতিতে পানি সাগরে পতিত হয়। ফলে এসব নৌযান সাগরমুখি প্রবল ¯্রােত অতিক্রম করে চট্টগ্রাম থেকে বরিশালে পৌছতে ১৮Ñ২০ ঘন্টারও বেশী সময় লাগবে। পরিক্ষামূলক পরিচালনে এমভি তাজউদ্দিন আহমদ ১৯ ঘন্টায় গন্তব্যে পৌছেছিল। এমনকি এসব নৌযান নির্মানেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। চুক্তি অনুযায়ী ২০ মাসে সরবরাহের কথা থাকলেও এ দুটি নৌযান ৪ দফায় ৪৮ মাস সময় বাড়িয়ে সরবরাহ করা হলেও কম শক্তির ইঞ্জিন সংযোজন করায় তা বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে বানিজ্যিক পরিচালনে আর যুক্ত হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালে তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তান শিপিং করপোরেশন পশ্চিম জার্মানী থেকে সংগ্রহ করা ৪টি উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযানের সাহায্যে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামÑনারায়নগঞ্জÑবরিশালÑচট্টগ্রাম ও বরিশালÑহাতিয়া-সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম রুটে উপকূলীয় স্টিমার সার্ভিস চালু করে। সে সময়ে নৌযানগুলোর নামকরণ করা হয়েছিল তৎকালীণ পাকিস্তানের শাসক আইয়ুব খানের কণ্যাদের নামে। ‘এমভি জাকিয়া, এমভি জরিনা, এমভি জোহরা ও এমভি জোবেদা’ নামের ঐসব নৌযানগুলোর নাম পরবর্তিতে ১৯৬৯ এর  গণ অভ্যুত্থানে শহিদদের নামে নামকরন করা হয়। ‘এমভি আবদুল মতিন, এমভি মনিরুল হক, এমভি আলাউদ্দিন আহমদ, ও এমভি তাজুল ইসলাম’ নামের নৌযানগুলোর মধ্যে এমভি তাজুল ইসলাম স্বাধীনতার পরেই বিক্রী করে দেয় সংস্থাটি। বছর চারেক আগে আলাউদ্দিন আহমদসহ অপর দুটি নৌযানও বিক্রী হয়েছে।
অপরদিকে বরিশালের কথা বলে সংগ্রহ করা ‘এমভি বার আউলিয়া’ গত কয়েক বছর ধরে কক্সবাজারÑসেন্টমার্টিন রুটে প্রমোদ ভ্রমনের জন্য চট্টগ্রামর একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হয়েছিল বিনা দরপত্রে। সম্প্রতি নৌযানটি ইজারাদারের সহায়তায় চট্টগ্রাম-হাতিয়া-মনপুরা-বেতুয়া রুটে চালু করা হলেও দিন কয়েকের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আসন্ন ঈদের আগে আবার চলাচলের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিঅইডব্লিউটিসি এর ‘৩৫ নৌযান সংগ্রহ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৩১ কোটি টাকা ব্যায়ে আরো ৪টি উপকূলীয় নৌযান নির্মানে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ চুক্তি সম্পাদন হলেও নির্মান কাজ ৭০ ভাগের বেশী সম্পন্ন হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী ২০ মাসে সরবরাহের ঐসব নৌযান ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সংস্থার পক্ষ থেকে তাগিদ রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি এর চেয়ারম্যান মো: ছলিম উল্লাহ এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তিনি গণসংযোগ কর্মকর্তার  মাধ্যমে জানান- আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মানাধীন ৪টি উপকূলীয় নৌযানের নির্মান সম্পন্ন করে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলীয় নৌপথে নিরাপদ যাত্রীসেবা চালু করা সম্ভব হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT